ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

অবজ্ঞার চোখে দুই নারী শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ জুন ২০১৫

অবজ্ঞার চোখে দুই নারী শিক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের (ইউআরপি) দুই নারী শিক্ষক নজিরবিহীন অমানবিকতার শিকার হয়েছেন। প্রভাষক হিসেবে যোগদানের এক বছর ধরে ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) তারা কোন একাডেমিক দায়িত্ব পাননি। তাদের জন্য কোন বসার জায়গা দেয়া হয়নি। ডিসিপ্লিন প্রধানের কক্ষেও প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। শিক্ষক হিসেবে সকল অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে ওই দুই শিক্ষক কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ডিসিপ্লিন প্রধানকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি ওই দুই শিক্ষককে একাডেমিক দায়িত্ব প্রদানের জন্য বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নিকট তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের ওই দুইজন শিক্ষক ড. শিল্পী রায় ও লোপা ইসলাম প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য রেজিস্ট্রার অফিসের ২৩-২-২০১৪ তারিখের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি পার হওয়ার পর সিলেকশন বোর্ডে যায়। সিলেকশন বোর্ড তাদের নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেটের কাছে সুপারিশ করে। সে মোতাবেক ২০১৪ সালের ২১ জুন ওই সুপারিশ সিন্ডিকেটের ১৭১তম সভায় উপস্থাপিত হলে তা অনুমোদিত হয় এবং রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তাদের স্ব স্ব নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। ওই নিয়োগপত্রের ভিত্তিতে লোপা ইসলাম ২০১৪ সালের ২২জুন এবং ড. শিল্পী রায় ২৩ জুন প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষক লোপা ইসলাম ও ড. শিল্পী রায় অভিযোগ করেন, প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি তাদের ক্লাস নেয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র নিরীক্ষা, ফলাফল তৈরি, গবেষণা তত্ত্বাবধায়নসহ কোন প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তাদের বসার জন্য জায়গাও দেয়া হয়নি। ডিসিপ্লিন প্রধানের কক্ষে ঢুকতে দেয়া হয় না। তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। দিনের পর দিন তারা অবজ্ঞা ও দুর্ব্যবহার পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে গত জানুয়ারি মাসে কর্তৃপক্ষের কাছে এবং সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নিকট লিখিত আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. আহসানুল কবীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু কেন তারা নিয়াগপ্রাপ্ত হয়ে এতদিন দায়িত্ব পাননি এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ওই দুই শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ডিসিপ্লিন প্রধান বার বার উপেক্ষা করেছেন। এটা অশিক্ষক সুলভ আচরণ এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করার শামিল। এটি রীতিবহির্ভূত ও সভ্যতাবিবর্জিত। এ জন্য যা যা করার দরকার প্রশাসনিকভাবে করা হবে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, অমানবিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধিবিধান পরিপন্থী। ওই দুই শিক্ষকের আবেদনের বিষয়টি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আলোচিত হয়েছে এবং সর্বসম্মতভাবে শিক্ষক হিসেবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনিটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে আগামী রবিবারের মধ্যে আবেদনকারী ইউআরপি ডিসিপ্লিনের দুই শিক্ষককে তাদের সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই দুই শিক্ষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় কী কী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা খুবি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হবে এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
×