ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফল পাকাতে ও সংরক্ষণে ॥ রাসায়নিকের অপব্যবহার

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ জুন ২০১৫

ফল পাকাতে ও সংরক্ষণে ॥ রাসায়নিকের অপব্যবহার

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৯ জুন ॥ টাঙ্গাইলের মধুপুরগড় এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত আনারস, কলা ও কাঁঠাল পাকাতে এবং সংরক্ষণে ক্ষতিকর কার্বাইড ও ফরমালিন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ অসাধু ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, পাহাড়ী গড় এলাকার মধুপুর, ধনবাড়ি, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল, ভালুকা, সখীপুর ও জামালপুর সদরে এবার ২৮ হাজার জমিতে আনারস, ২০ হাজার একরে কলা, ১৫ হাজার একরে কাঁঠাল এবং ৬ হাজার একরে পেঁপে, পেয়ারা ও হাইব্রিড আমের আবাদ হয়েছে। এসব এলাকায় এবার প্রায় ২২ হাজার একরে নানা সবজির আবাদ হয়েছে। সবজি ও ফলের বাণিজ্যিক আবাদকে পুঁজি করে রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা বছরের মে মাস হতে সেপ্টেম্বর মাস ফল ও সবজির ভরা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ কার্বাইড ও ফরমালিন বাজারজাত করে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, ঢাকার খামারবাড়ির ফিল্ড সার্ভিস উইংয়ের অনুমোদিত ২৭টি কোম্পানির ৪৫ প্রকার রাসায়নিক পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। এসব রাসায়নিক উপাদান শুধুমাত্র উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৬টি কোম্পানি ফল ও সবজি দ্রুত বৃদ্ধি এবং মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি এর অপপ্রয়োগের মাধ্যমে ফল পাকানোর কাজে ব্যবহার করে থাকে। রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা ফল ব্যবসায়ী ও মহাজনদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর ফল পাকাচ্ছে উপদানে। গারো বাজার এবং সাগরদীঘির দু’জন কীটনাশক ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ী জানান, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফনের উপাদানে তৈরি ৬ প্রকার রাসায়নিক পণ্য যেমন অনিকা এন্টারপ্রাইজের টমটম, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের রাইপেন-১৫, হাইসিন বিডি লিমিটেডের হারভেস্ট, সার্ক বাংলাদেশের প্রমোট, মার্শাল লিমিটেডের পোলং এবং ক্লিনএগ্রো লিমিটেডের ব্রাইট ফল পাকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। পাকানো ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য পাইকাররা গোপনে ফলে ফরমালিন স্প্রে করে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, মধুপুর, পঁচিশ মাইল, গারো বাজার, ইদিলপুর, চৌরাস্তা বাজার, সাগরদীঘি, জলছত্র, মোটের বাজার, আশ্রা বাজার, ধলাপাড়া, লেংড়া বাজার ও দোখলা বাজারসহ শতাধিক ডিলারের দোকানে ফল পাকানোর মৌসুমে কমপক্ষে ৭০/৮০ কোটি টাকার রাসায়নিক উপাদান, কীটনাশক, ভেজাল ও চোরাই সার বিক্রি হয়। আনারস চাষী আবদুস সামাদ জানান, কৃষকরা ফল বড় করার জন্য নানামাত্রায় রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে থাকেন। কেউ কেউ বাগানের ফল এক সঙ্গে পাকানোর জন্য ফলে কার্বাইড জাতীয় উপাদান স্প্রে করে থাকেন। ইদিলপুর আনারস চাষী সমিতির সাবেক সম্পাদক আলী আকবর ফকির অভিযোগ করেন, ফল সংগ্রহ মৌসুমে ৬ রাসায়নিক কোম্পানি প্রচুর পরিমাণ কার্বাইড ও ফরমালিন গোপনে বাজারজাত করে। ভারত থেকে চোরাই পথেও আসে এসব কেমিক্যাল। ফল চাষী আবদুল হক জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকার ও মহাজনরা বাগান অথবা হাটবাজার থেকে ফল কিনে ট্রাকে তোলার আগে ক্ষতিকর উপাদান স্প্রে করে। স্প্রে করার ১০/১২ ঘণ্টার মধ্যেই ফল পেকে টুসটুসে হয়। পাকা ফল দীর্ঘক্ষণ টিকিয়ে রাখার জন্য দ্বিতীয় দফায় দেয়া হয় ফরমালিন। আনারস চাষী হাফিজুর রহমান জানান, পাকানো আনারস দেখতে সুন্দর, খেতে বিস্বাদ। কখনও টক, কখনও পানসে। বেশি খেলে বমি হয়, মাথা ঘোরায়, পেট খারাপ হয়। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, মহাজন ও বড় খামারীর দেখাদেখি সাধারণ গৃহস্থরাও ফল পাকাতে রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার করছে। কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষে একা দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন জানান, ফলে ক্ষতিকর রাসায়ানিক উপাদান ব্যবহারে কৃষক, ব্যবসায়ী, ক্রেতাগণ এবং জনসাধারণকে সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি ও জরিমানা করা হবে।
×