ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ বাণিজ্যে এবার কেনাকাটায় রেকর্ড ভঙ্গ হবে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ জুন ২০১৫

ঈদ বাণিজ্যে এবার  কেনাকাটায়  রেকর্ড ভঙ্গ হবে

এম শাহজাহান ॥ ঈদকে কেন্দ্র করে এখন দেশে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হয়েছে। ফুটপাথের হকার থেকে শুরু করে কারখানার মালিক- সবার চিন্তা ঈদ বাণিজ্য। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের কারণে গত দু’বছর ভাল বাণিজ্য করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। এ কারণে বেচাবিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ঈদ ঘিরে কেনাকাটার অর্থনীতি এবার চাঙ্গা হবে। এতে করে ঈদের বাজারে কেনাকাটায় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হবে বলে ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত দু’বছর অর্থনীতিতে যে ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, এবার সেই লোকসান উঠে আসবে বেশি বেচাবিক্রির মাধ্যমে। নতুন পে-স্কেল ঘোষণা হওয়ায় বেচাবিক্রি এবার আরও ১০-১৫ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎসবের সঙ্গে অর্থনীতির যোগসূত্র নিবিড়ভাবে জড়িত। যেই উৎসব যত বড়, তার অর্থনৈতিক কর্মকা-ও তত বেশি। বাংলাদেশে ঈদ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে দুর্গা ও শ্যামা পূজা এবং ইউরোপ ও আমেরিকায় বড় দিন সামনে রেখে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়ে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের বড় রফতানি হয় বড় দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে। দেশেও পোশাকের সবচেয়ে বেশি কেনাবেচাও হয় ঈদ মৌসুমে। সূত্র মতে, মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে এ বছর ঈদ কেনাকাটা বাড়বে। শুধু তাই নয়, পরিবারপ্রতি খরচ বেড়েছে ৫ থেকে ২০ গুণ। তবে এই যে, কেনাকাটা বেড়েছে এর মূলে রয়েছে গত কয়েক বছরে সরকারী-বেসরকারী খাতের বেতন ও মজুরি বৃদ্ধি। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ও উৎসব বোনাসের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া বেসরকারী অন্যান্য খাতেও বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে মাথাপিছু আয়। এতে করে এ বছর ঈদ উৎসবের কেনাকাটায় নতুন রেকর্ড অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক তথ্য মতে, ঈদে পোশাকসহ যাবতীয় পরিধেয় খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা, জুতা-কসমেটিক্স ৩ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্য ৭ হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা, দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, ইফতার সামগ্রী ৫ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, স্বর্ণ-ডায়মন্ড ৫ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি, ইলেক্ট্রনিক্স ৪ হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় ১ হাজার কোটি, পবিত্র ওমরা পালন ৩ হাজার কোটি ও আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অর্থনীতির আরও অনেক খাত রয়েছে যেখানে ঈদকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বাণিজ্য হয়ে থাকে। বিশেষ করে ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন শিল্পে বড় ধরনের কেনাকাটা হয়ে থাকে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ কেনাকাটা বাড়ার ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ঈদ অর্থনীতির ব্যাপ্তি প্রতিবছর বাড়ছে। এবার আরও বেশি বাড়বে। তিনি বলেন, গত দু’বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে টার্গেট অনুযায়ী লেনদেন করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। এবারের ঈদে আশা করছি, অতীতের কেনাকাটার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে গত দু’বছর অর্থনীতিতে যে ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে তা উঠে আসবে ঈদ বাণিজ্যের মাধ্যমে। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, উৎসব কেন্দ্রিক অর্থনীতি বাংলাদেশে প্রতিবছর বাড়ছে। যার পরিমাণ ১ লাখ হাজার কোটি টাকার উপরে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে উৎসব কেন্দ্রিক অর্থনীতির ব্যাপ্তি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করে সংস্থাটি। এই সংস্থাটির মতে, বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের হরতাল-অবরোধের কারণে বছরের শুরুতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ক্ষতিও এবার ঈদ বাণিজ্যের মাধ্যমে উঠে আসবে। কদর বাড়ছে দেশী পণ্যের ॥ ঈদ উপলক্ষে কদর বাড়ছে দেশী পণ্যের। আমদানি করা পোশাক ও জুতার পরিবর্তে দেশীয় ব্র্যান্ডের চাহিদা বেড়েছে। ইলেক্ট্রনিক্স ও অটোমোবাইল পণ্যের ক্ষেত্রেও দেশীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। ফ্যাশন হাউসগুলো ভরে উঠছে দেশীয় পোশাকে। দেশের বাজারে ঈদ উপলক্ষে যে পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে তা তৈরির কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে আরও তিন মাস আগে থেকে। তুলা বা রেশম দিয়ে সুতা তৈরি থেকে শুরু। তারপর তাতে রং মাখানো, কাপড় বোনা, নকশা আঁকা, কাপড় কাটা, সর্বশেষ নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি-বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে ঈদের পোশাক। প্রতিটি পর্যায়েই টাকার দ্রুত হাতবদলে প্রাণ পাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আর রোজার ঈদের কেনাকাটার সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছে পোশাক ও জুতা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুটি ক্ষেত্রেই দেশী পণ্য ও ফ্যাশনের কদর আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একই অবস্থা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ক্ষেত্রেও। ফ্রিজ ও টেলিভিশন এখন দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। এবার ঈদে ৩ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এ খাতে। আর এ কারণে দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, যমুনা ও মাইওয়ানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বাড়িয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঈদ ও গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে ওয়ালটন ফ্রিজ ও টেলিভিশন উৎপাদন বাড়িয়েছে। বেচাবিক্রিও বেড়েছে। ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রির সাম্প্রতিক এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের পরিচালক অধ্যাপক মামুন রশিদ বলেন, রোজার মাসজুড়ে মানুষ যে বাড়তি খরচ করে তার পরিমাণ হবে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক-আশাকসহ কেবল ঈদ কেন্দ্রিক কেনাকাটার খরচই ১৪ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন ভোক্তাচালিত। ঈদকে ঘিরে মানুষের যে উৎসব বাড়ে, তাতে অর্থনীতি গতিশীলতা পায়।
×