ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম রমজানে জুমায় মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ জুন ২০১৫

প্রথম রমজানে জুমায় মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার ছিল প্রথম রমজান। সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময়টা অনেক বড় হলেও সারাদিন আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। তবে মাঝে মধ্যে আষাঢ়ের তপ্ত রোদের উকিঝুঁকিও ছিল বেশ। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় রোজাদারদের প্রথম দিন কেটেছে পরিবারের সান্নিধ্যে একান্ত পরিবেশে সবাইকে নিয়ে ইফতারির মাধ্যমে। ছুটির দিন হওয়ায় প্রথম রোজায় ছিল না কারও অফিস থেকে ঘরে ফেরার তাগিদ। রাস্তাঘাটে যানবাহনের চাপও ছিল অনেক কম। যানজটের কোন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি কারও। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরেও বের হয়নি কেউ। তবে প্রথম রোজায় জুমা হওয়ায় সবাই ছিল মসজিদমুখী। ফলে এদিন জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রত্যেক মসজিদ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় দেড় শ’ কোটি মুসলমানের দ্বারে এক বছর পর আবার এসেছে মাহে রমজান। কিন্তু এই রমজান বিশ্বেও সবদেশে একই সময়ে ও একই পরিবেশে হচ্ছে না। আবহাওয়া ও ঋতুভেদে বিভিন্ন দেশে রমজানের সময় ও ধরনেরও ভিন্নতা রয়েছে। চন্দ্রমাসের ওপর নির্ভর করেই মূলত বিশ্বের মুসলমানরা রোজা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এ কারণে প্রতি বছর রোজা প্রায় ৯দিন করে এগিয়ে আসছে। প্রতি তিন বছর পরপর প্রায় একমাস এগিয়ে আসে রোজা। চন্দ্র মাসের এই আবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যদেশের চেয়ে বাংলাদেশে রমজানের সময় ও পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন। দেশের প্রকৃতিতে এখন চলছে আষাঢ় মাস। ঋতু হিসেবে বর্ষাকাল। আর ইংরেজীতে জুন মাসের ১৯ পেরিয়ে আজ ২০ তারিখ। কিন্তু ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী এখন বাংলাদেশে দিনের পরিধি সবচেয়ে বড়। জ্যোতির্বিদদের হিসাবে এখন দেশে দিনের পরিধি ১৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। এটা সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। আর সেহরির শেষ সময়ের হিসাব অনুযায়ী দিনের বেলার উপোস থাকার পরিধি ১৫ ঘণ্টার বেশি। রোজাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থাকা অন্য সময়ের চেয়ে একটু কষ্ট হলেও তা সহ্য করার মতো। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শেখ শাদি বলেন, এই গরমে রোজা যতটা কষ্টের আশঙ্কা করেছিলাম দিন শেষে কোন কষ্টই মনে হয়নি। আসলে রোজায় আল্লাহ্র রহমত থাকে। তাই দিনের পরিধি বড় হওয়ার কারণে প্রথম রোজায় কোন কষ্টই অনুভূত হয়নি। নির্বিঘেœ দিন পার হয়ে গেছে। মিরপুরের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, প্রথম রোজা ছুটির দিন হওয়ায় অফিস বন্ধ ছিল। ফলে সেহরি শেষে যেমন অফিসে যাওয়ার কোন তাড়া ছিল না তেমনি অফিস শেষে যানজটের কোন ভোগান্তির মধ্যেও পড়তে হয়নি। আবার গরমের এই সময় রোজায় দিনের পরিধি যত বড় ছিল সে অনুযায়ী রোজার কষ্টটা তেমন অনুভূত হয়নি। ফলে প্রথম রোজায় পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ সৌভাগ্যই বলা যায়। এদিকে রাজধানী ঢাকায় রোজাদারদের সেহরি ইফতারি ও তারাবি নামাজের কোন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। কোথাও ছিল না বিদ্যুতের লোডশেডিং। পানি সরবরাহে কোন ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়নি। সেহরীর সময় শুরু হতেই পাড়া মহল্লায় উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। সেহরির সময় মসজিদের মাইকের মাধ্যমে মহল্লাবাসীদের জাগাতে দেখা গেছে। কোন কোন পাড়া মহল্লায় কাসিদা গেয়েও রোজাদারদের সেহরির সময় জাগাতে দেখা গেছে। প্রথম রোজায় আবহাওয়ার বিরূপ ভাবও লক্ষ্য করা যায়নি। সারাদিনই ছিল আকাশে মেঘের আনাগোনা। কোথাও কোথাও এক পশলা বৃষ্টিও লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপও কম ছিল। ফলে যানজটের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি কাউকে। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে বিকেল থেকেই ইফতারির পসরা নিয়ে বসেছে দোকানিরা। মসজিদে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় ॥ এদিকে প্রথম রমজান শুক্রবার হওয়ায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নামাজ শুরুর আগেই রাজধানীর মসজিদগুলো কানায় কানায় পূূর্ণ হয়ে যায়। ভিড়ের কারণে জুমার নামাজের জামাত ছড়িয়ে পড়ে মসজিদে বাইরে রাস্তায় ও অলিগলিতে। রমজানে জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি হওয়ায় মুসল্লিরাও মসজিদে ভিড় করেন। জুমার নামাজে রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে খুতবা পাঠ করেন খতিবরা। এছাড়া নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা এবং আল্লাহ্র দরবারে গুনাহ থেকে মুক্তি চেয়ে ও বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। শুক্রবার জুমার নামাজে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নামাজের আগেই মুসল্লিদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। আজানের আগ থেকে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে ভিড় করতে থাকেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন জুমার নামাজের আগে বয়ানে মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে তিনি দেশ, জাতি ও বিশ্বের সব মানুষের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের যাতে কোন সমস্যা না হয় এ জন্য পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা দেখা যায়। প্রতিটি গেটে মুসল্লির দেহ তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
×