ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্ময়ের নাম মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২০ জুন ২০১৫

বিস্ময়ের নাম মুস্তাফিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অভিধানে এমন কোন শব্দ নেই যা দিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের প্রশংসা করা যায়। বিস্ময়ের সঙ্গে তাই সচেতনভাবে ‘বিস্ময়সূচক’ চিহ্নের ব্যবহার! অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেয়া, সেঞ্চুরি হাঁকানো, ম্যাচসেরা হওয়া এই প্রথম নয়, ক্রিকেটে এমন উদাহরণ অনেক। তবে প্রেক্ষাপট ও অনুষঙ্গের বিচারে আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেলেন তরুণ টাইগার পেসার। অগণিত বাংলাদেশীকে ভাসালেন আনন্দের বন্যায়। যে আনন্দ বিশ্বকাপ-স্বপ্ন চুরি করে নেয়া মোড়ল ভারত-বধে অনন্য প্রতিশোধের আনন্দ। সেই আনন্দের উপলক্ষ হলেন এমন একজন, কিছুদিন আগে খোদ নির্বাচকও যাকে সেভাবে চিনতেন না! দুই ম্যাচের ব্যবধানে সেই মোস্তাফিজুর আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গবেষণার নাম, আসল বিস্ময়টা এখানেই। লিকলিকে শারীরিক গড়ন। দেখলে মনে হয়, একটুতে পড়ে যাবেন। সেই তিনি নাড়িয়ে দিলেন বিশ্বসেরা ব্যাটিংয়ের ভিত! অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নাকি ‘ক্যাপ্টেনকুল’। জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ১৯ বছর বয়সীর অনিচ্ছাকৃত ভুলটা ধরতে পারলেন না, ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে বসলেন বিশ্বজয়ী সেনাপতি! খোদ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এমন উগ্র আচরণে ধোনিকে ধুয়ে দিয়েছে। কিন্তু মুস্তাফিজুর জবাব দিয়েছেন মাঠে। ৫ উইকেট শিকার করে পদ্মার জলে ডুবিয়েছেন ধোনির অহংবোধ, গড়েছেন দেশের হয়ে অভিষেকে দ্বিতীয়সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। আউটসুইংয়ের সঙ্গে অবিশ্বাস্য সব ‘কাটার’ মিলিয়ে রোহিত শর্মা-সুরেশ রায়নাদের চোখে শর্ষে ফুল ছোটালেন ওই লিকলিকে বাঁহাতি। হ্যাঁ, বাঁহাতি হওয়াটাই হয়ত বড় টার্নিং পয়েন্ট! গত কয়েক বছর ধরে একজন যুতসই বাঁহাতি পেসারই খুঁজছিলেন নির্বাচকরা। সেটি এলো ধূমকেতুর মতো। এই মিরপুরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক গত ২৪ এপ্রিল। মজার বিষয়, জীবনের প্রথম ম্যাচে তাঁর প্রথম শিকার ছিলেন টি২০র রাজা শহীদ আফ্রিদি, কাল ওয়ানডের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডধারী রোহিত শর্মা! এরপর একে একে অজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফিরিয়ে প্রতিশোধের ম্যাচে দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে নায়ক বনে যাওয়া। এমন কীর্তিতে মুস্তাফিজুর নিজেও যেন নির্বাক। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে তাই অনুভূতিও ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারছিলেন না। তার হয়ে হাই-হ্যালো করলেন মাশরাফি! ‘জীবনের প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছি, তাও ভারতের বিপক্ষে... এ জন্য খুব ভাল লাগছে।’- পোস্ট ম্যাচে এতটুকো কথাও গুছিয়ে বলতে সমস্যা হচ্ছিল তারুণ পেসারের! এর মধ্যে কাকে আউট করে বেশি ভাল লাগছে? ‘সব উইকেট পেয়েই ভাল লাগছে।’ উপমহাদেশের পিচ স্পিন-সহায়ক, এখানে পেসারদের বেশিরভাগ সময় কপাল কুটে মরতে হয়। সেখানে একের পর এক এমন ‘কাটার’ দিয়ে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানের প্রাণ সংহরণের রহস্য জানতে বিদেশী সাংবাদিকদেরও কৌতূহলের শেষ ছিল না। অনুর্ধ-১৯ দলে থাকতেই এই অস্ত্রটা রপ্ত করার চেষ্টা বলে জানান তিনি। পাশাপাশি দারুণ একটি তথ্যও দেন ‘প্র্যাকটিসে এনামুল হক বিজয় ভাইয়া আমাকে বলেন, তুই এটা করে দেখতে পারিস। এরপর দেখলাম উনি নিজেও এটা ঠিকমতো খেলতে পারছেন না!’ যে বাংলাদেশ দুদিন আগে ফতুল্লা টেস্টে একজন মাত্র পেসার নিয়ে খেলল, সেই তারাই প্রথম ওয়ানডেতে চার পেসার নিয়ে নামবে, এমনটা অনেকে ভাবতেও পারেননি। তিন পেসার হলে নিশ্চয়ই অপেক্ষা বাড়ত মুস্তাফিজুরের। ইতিহাস গড়তে মাশরাফি বিন মর্তুজার ভূমিকটা যে কম নয় অধিনায়কের বক্তব্যেই সেটি পরিষ্কার, ‘আমি অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম ওকে দিয়ে প্রথম ওভার করাব। কারণ মুস্তাফিজুর একেবারে নতুন, তার ওপর ওর কাটার খেলা যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্যই কঠিন। এমনকি স্পিনারদের চেয়ে ওর বল বেশি টার্ন করে।’ আরাফাত সানিকে বাইরে রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা সহজ ছিল না বলেও উল্লেখ করেন ম্যাশ। এমনকি যে ধোনি ধাক্কা মেরেছিলেন, সেই তিনিও ম্যাচ শেষে ভাসিয়েছেন প্রশংসায়, ‘আসলেই ওর বোলিং বৈচিত্র্য অনেক, সেটা কাজে লাগিয়েই সফল হয়েছে।’
×