ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার কার্যক্রমের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২১ জুন ২০১৫

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার কার্যক্রমের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দেশটি মনে করে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখানোয় ২০১৪ সালে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ‘অগ্রগতি’ করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে। আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং নিজ দেশে তাদের স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখনও সম্মুখভাগে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে এবং আগের বছরের তুলনায় মোট হতাহতের সংখ্যা ৮১ শতাংশ বেড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে ইরাক, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়া সন্ত্রাসী কর্মকা-কে তুলে ধরা হয়েছে। এসব আক্রমণের ৬০ শতাংশের বেশি পাঁচটি দেশে সংঘটিত হয়েছে। এগুলো হলো- ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত ও নাইজেরিয়া। আর ৭৮ শতাংশের বেশি হতাহত হয়েছে ভারত বাদ দিয়ে সিরিয়া ধরে এই পাঁচটি দেশে। বিশেষ করে মারণঘাতী কয়েকটি হামলার কারণে হতাহতের ঘটনা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ২০টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যেখানে আগের বছর এ ধরনের দুটি হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোন সন্ত্রাসী ঘটনা সংঘটিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সমন্বয়ক টিনা কায়দানো বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের অবস্থা পর্যালোচনায় এবং সন্ত্রাসী হুমকির বৈশিষ্ট্য ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করার সুযোগ করে দিয়েছে এই প্রতিবেদন। এর ফলে আমাদের কার্যকারিতা ও সর্বোত্তম কৌশল নির্ধারণ ও মোকাবেলার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা সহজ হবে। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের নানা প্রচেষ্টার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে, যার মধ্যে রয়েছে- আইন প্রণয়ন, আইনশৃঙ্খলা জোরদার, সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসের অর্থায়ন প্রতিরোধ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সহিংসতা ও সহিংস জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ। এতে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো তাদের চরমপন্থী আদর্শ প্রচার করে বাংলাদেশ থেকে বিদেশের জন্য যোদ্ধা সংগ্রহ করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিওবার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দেয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন প্রতিষ্ঠিত আল কায়েদার কর্মকা- পরিচালনার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ইরাকে ইসলামিক স্টেটস (আইএস) জঙ্গীদের লড়াইয়ে যোগ দিতে কর্মী সংগ্রহের প্রচেষ্টার অভিযোগে প্রবাসী বাংলাদেশীদের গ্রেফতার হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জোটের অংশীদার না হলেও বাংলাদেশ এই হুমকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আইএস ও আল-নুসরাহ ফ্রন্টের জন্য জঙ্গী সংগ্রহের অভিযোগে বাংলাদেশে সামিউন রহমান নামে একজনের গ্রেফতার হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, সীমান্তে এবং স্থল, সাগর ও বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহযোগিতা কর্মসূচীতে বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন অংশগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, সহিংস জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর নজরদারি করছে এবং মানসম্পন্ন জাতীয় পাঠ্যক্রম তৈরি করছে, যাতে ভাষা শিক্ষা, গণিত ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে অষ্টম ধাপ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় ন্যূনতম মানের ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলো পড়ানো বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে ইমাম ও আলেমদের নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পূর্ণরূপে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার জোরালো আগ্রহ দেখিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
×