ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাহিত্যে তিনি যা বলেছেন নিজের জীবন চর্চায় তা করার পথ দেখিয়েছেন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২১ জুন ২০১৫

সাহিত্যে তিনি যা বলেছেন নিজের জীবন চর্চায় তা করার পথ দেখিয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আট বিশিষ্ট নারী পেলেন সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং এ দেশের সমাজ প্রগতি আন্দোলনের অগ্রপথিক জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই পদক দেয়া হয়। যারা এ বছর সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক পেয়েছেন তারা হলেন- ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন, ভাষাসৈনিক সুফিয়া আহমেদ, ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু ও ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, বেলাবোর কৃষক নারী ফরিদা বেগম, সাভারের শ্রমিক নারী আরতী রানী, কাউখালীর স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধি মমতা শিকদার। শনিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা প্রদান এবং বিশিষ্ট নারীদের সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের সভাপতি আয়শা খানম কবি সুফিয়া কামালকে বাংলাদেশের বিবেক বলে অভিহিত করে বলেন, আত্মজাগরণ ও আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমে তিনি তাঁর সাহিত্যে যা বলেছেন নিজের জীবন চর্চায় তা বাস্তবায়ন করার পথ দেখিয়ে গেছেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে তিনি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও মানবের সম্মিলিত জীবনে পরিণত করেছেন। নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং যে সব পেশা, যেমন শান্তি মিশনে, সাংবাদিকতায়, ক্রীড়াঙ্গনে এখন নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে এসেছে- এই অগ্রগতির আলোকিত পরিসরে সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বাতিঘরের মতো। তিনি আরও বলেন, সুফিয়া কামালের রচনার মধ্যে যে আলোকদায়ী বক্তব্য তা নিয়ে ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়নি, বাংলা একাডেমির মাধ্যমেও তেমন হয়নি। একইভাবে সমাজ প্রগতির আন্দোলনে নারীসমাজের নিভৃত ও ধারাবাহিক ভূমিকাকে দৃশ্যমান করে তোলার লক্ষ্যে তেমন গবেষণা হয়নি। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানকে দৃশ্যমান করার জন্যে ইতিহাসকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। যুগে যুগে নারীর অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল উল্লেখ করেন, সাহিত্যের কৃতী ও চর্চার মধ্য দিয়ে সুফিয়া কামাল বৈচিত্র্যসন্ধানী হয়েছেন যেমন, তেমনি নারী ও মানবাধিকার নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সাহসী বাণী উচ্চারণ করেছেন। নারীই মুক্ত করবে বন্দী মানবতাকে-রবীন্দ্রনাথের ‘নারী’ প্রবন্ধের অনুরূপে সুফিয়া কামালের এ আশাবাদ। নবযুগের চেতনায় নারীর অধিকার আর মানবাধিকার একই মুদ্রার দুই পিঠ। এটি সুফিয়া কামাল বুঝেছিলেন, তাই সংগ্রাম তাঁর কাছে বিলাস ছিল না। জীবনের উর্বরতা, সাম্যতা, আলোময়তার জন্যেই এই অমৃত মমতা প্রয়োজন। কবিতা রচনা ছিল তাঁর শুধুই আত্মিক পরিচর্যার ব্যাপার নয়, তাঁর নান্দনিক প্রয়াস ছিল বাঁধন ছেড়ার, মুক্ত একটি পরিসর রচনার তাঁর এই কথা আমাদের স্মরণে জাগে যে, ‘এগিয়ে চলতে পারলে সামনের বাধা পেছনে সরে যায়।’ তাঁর সাহিত্য আমাদের মনকে, চিত্তকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কালের বুকে এটাই সুফিয়া কামালের অনন্য কৃতিত্ব। স্বাগত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ একটি মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল সুফিয়া কামালের জীবনব্যাপী সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, অব্যাহত নারী নির্যাতন, নারীর শ্রমশোষণ ও পাচারের মাধ্যমে নারীকে যেভাবে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, এ সময়ে সুফিয়া কামালের রচনাবলী, জীবনবীক্ষা ও আদর্শ আমাদের আলোর দিশা দেখাতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগমের পরিচালনায় সম্মাননা প্রদকপ্রাপ্ত আটজন বিশিষ্ট নারীর জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা, প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক দিল মনোয়ারা মনু, প্রশিক্ষণ গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, আন্দোলন সম্পাদক কাজী সুফিয়া আখতার ও পরিবেশ সম্পাদক পারভীন ইসলাম। অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্যবৃন্দ, কবি সুফিয়া কামালের পরিবারবর্গ, সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কবির প্রিয় গান পরিবেশন করেন ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান ও বুলবুল ইসলাম।
×