ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গান কবিতায় ছায়ানটে সুফিয়া কামালের জন্মদিন উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২১ জুন ২০১৫

গান কবিতায় ছায়ানটে সুফিয়া কামালের জন্মদিন উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একইসঙ্গে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করেছিলেন জননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল। এই দুইয়ের সংযোগে আমৃত্যু মানবমুক্তির জন্য নিবেদিত রেখেছিলেন নিজেকে। তাঁর অজস্র কবিতার চরণে চরণে বারংবার উচ্চারিত হয়েছে সে কথা। অন্যদিকে সংস্কৃতির শাণিত হাতিয়ারকে আশ্রয় করেছিলেন সমাজ বদলের বাসনায়। সেই সূত্রে ছায়ানট ও কচি-কাঁচার মেলা গঠনে রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা। পালন করেছিলেন ঐত্যিবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব। সেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে শনিবার ১০৫তম জন্মদিনে এই মহিয়সী নারীকে স্মরণ করল ছায়ানট। আষাঢ়ের সকালে জননী সাহসিকার জন্মদিন উদ্্যাপনের আয়োজন করা হয়। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটির রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্র। পরিবেশিত হয় রবীন্দ্র, নজরুল, লালন ও দুরবীন শাহের গান। উচ্চারিত হয় সুফিয়া কামালের কবিতার চরণ। সঙ্গে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণের এই অগ্রদূতকে নিবেদিত প্রশংসা বচন। ছিমছাম ও পরিপাটি করে সাজানো মঞ্চের পেছনের দেয়ালে ঝুলছিল সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতি। চশমা পরিহিত ফ্রেমবন্দী ছবির মানুষটি যেন দিব্য দৃষ্টিতে দেখছিলেন সবাইকে। ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন যেন আপন চেতনার বিচ্ছুরণ। আর ছবিটির ঠিক সামনেই ছোট্ট মঞ্চে সুরের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের অভিপ্রায়ে সারি বেঁধে বসেছিলেন শিল্পীরা। ঘড়ির কাঁটায় যখন এগারোটা তখন সূচনা হলো জন্মদিনকেন্দ্রিক স্মরণানুষ্ঠানের। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে গেলে এক সুরে। প্রাণের স্পন্দনে সকলে মিলে গাইলেন হে চির নূতন আজি এই দিনের প্রথম গানে...। প্রথম পরিবেশনায় শেষে মঞ্চে এলেন ছায়ানট কার্যকরী সংসদের সদস্য প্রাবন্ধিক ও প্রকাশক মফিদুল হক। অংশ নিলেন স্বাগত কথনে। প্রগতির অগ্রপথিক এই নারীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সুফিয়া কামালের নামটি উচ্চারিত হলে এদেশের মানুষের মনে একটি ছবি ফুটে ওঠে। কারণ, মানুষের মুক্তি ছিল তাঁর সকল কর্মের মূল লক্ষ্য। এ কারণেই তাঁর সান্নিধ্য যারা পেয়েছেন তাদের জীবন ধন্য। সুফিয়া কামালের অবিচল সংগ্রামী ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর কারণেই ১৯৬১ সালে অনেক বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানটি করতে পেরেছিল ছায়ানট। এভাবেই জড়িয়ে পড়েন ছায়ানটের সঙ্গে। তিনি ছিলেন ছায়ানটের বিকাশের প্রেরণাদাত্রী। আর এসব কারণেই এই অনন্য নারীর কথা তুলে ধরাই আজকের এ উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য। নারীর সমতার আন্দোলনের সঙ্গে নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রেখেছেন সুফিয়া কামাল। আরেকদিকে লেখালেখির পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। তাঁর ধানম-ির সাঁঝের মায়া নামের বাড়িতেই জন্ম হয়েছিল কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক সার্থক মানবী। ‘নিঃশ্বাস নিঃশেষিত হোক পুষ্প বিকাশের তরে’ কবিতার এই চরণটি ছিল তাঁরই জীবন দর্শনেরই অংশ। মফিদুল হক আরও বলেন, সুফিয়া কামালকে অনেকে ধর্মবিরোধী বলে চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। অথচ এই দেশে তাঁর মতো ধর্ম ও মানবতাবাদী মানুষের সংখ্যা বিরল। কথা শেষে আবার সুরেলা শব্দধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে মিলনায়তনে। সুমধুর কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। সুর ও স্বরের খেলায় গেয়ে শোনান ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু তোমার পানে...। গানের পর অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ভেসে বেড়ায় কবিতার দোলায়িত ছন্দ। মিটাতে জঠর ক্ষুধা ও আজিকার শিশু শিরোনামের সুফিয়া কামালে দুটি কবিতা পাঠ করেন আব্দুস সবুর খান। কাব্যিক অনুরণন শেষে দরদমাখা কণ্ঠে পরিবেশিত নজরুল সঙ্গীতটি আয়োজনে ছড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধতার পরশ। সুমন মজমুদার গেয়ে শোনান ওগো নিঠুর দরদী/একি খেলছো অনুক্ষণ/ তোমার কাঁটায় ভরা বন/তোমার প্রেমে ভরা মন...। গান শেষে কবিতাকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন ক্যামেলিয়া। পাঠ করেন সুফিয়া কামালের কবিতা আশায় বক্ষ বাঁধি। এরপর ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান গেয়ে শোনান আমার ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা/আমি যে পথ চিনি না...। কণ্ঠের মাধুর্যে দুরবীন শাহের গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন আবুল কালাম আজাদ। গেয়ে শোনান আজ রাধার শুভ দিন...। চন্দনা মজুমদারের কণ্ঠে গীত হয় লালনের গান। পরিবেশন করেন গুরু আমারে কি রাখবেন করে চরণ দাসী...। এরপর সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা গানটি। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান শিল্পীরা। শ্রোতাদের বেলায়ও ঘটে তেমনটাই। এরপর শিল্পী আর শ্রোতা এক সুরে গেয়ে যান প্রাণের গান আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...। আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস ॥ আজ রবিবার বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের যৌথ আয়োজনে একাডেমির সেমিনার হলে বিকেল চারটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। পবিত্র রমজানের কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত হলেও প্রাণবন্ত রাখার জন্য সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্পী মাহমুদ সেলিম। প্রধান অতিথি থাকবেন অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী।
×