ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দাবদাহে তৃষ্ণা মেটাতে রমজানে ফিরে এসেছে ঘোল

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২১ জুন ২০১৫

দাবদাহে তৃষ্ণা মেটাতে রমজানে ফিরে এসেছে ঘোল

সমুদ্র হক ॥ এবারের রমজানুল মুবারকে সৃষ্টিকর্তার দাবদাহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ইফতারে ঘোলের চাহিদা বেড়েছে। একটা সময় গ্রামীণ জনপদে ঘোলের কদর ছিল। ঘোল বাঙালীর ঐতিহ্য। সাদা টক দই ফেটে তার মধ্যে কিছুটা পানি মিশিয়ে সামান্য নুন ছিটিয়ে গ্লাসে ভরে তৃষ্ণার্তদের হাতে দিলে প্রশান্তির সঙ্গে পান করত। গ্রীষ্মে কোন বট পাকুড়ের ছায়ায় বসে পথিক শরীর জুড়িয়ে নেয়ার সময় মাটির বড় পাতিলে ভরা সাদা দইওয়ালারা হাঁক দিত ঘো ও ও ও ল। পথিক তো নড়েচড়ে উঠতোই, গাঁয়ের মানুষ জড়ো হতো ঘোলওয়ালার চারপাশে। গ্রীষ্মের দাবদাহে বুকফাটা ছাতিতে ঘোল পড়ে শরীর জুড়িয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে স্বাস্থ্য সম্মত এই ঘোল মানব শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধে বড় ভূমিকা রাখে। এবারের রমজানে বগুড়া শহরতলী এবং শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘোলওয়ালারা পসরা সাজিয়ে বসেছে। কেউ শহরের পাড়া মহল্লার সড়কে ফেরি করে সুর করে হাঁক দিয়ে বিক্রি করছে ঘোল। মাটির বড় হাঁড়িতে সাদা দই আজকাল আর চোখে পড়ে না। শহরের মানুষ মিষ্টির দোকান অথবা বাজারে বাঁশের গোল ঝুরির মধ্যে খড় বিছিয়ে তার ওপর রাখা মাটির গোলাকৃতি ছোট পাত্রে ভরা (স্থানীয় কথায় খুটি) টক দই কিনে ঘরে নিজেরাই ঘোল বানায়। ছোট মাটির পাত্রের টক দইয়ের দামও এবার চড়েছে। দিন কয়েক আগেই ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বর্তমানে একশ’ অতিক্রম করেছে। যে যেভাবে পারছে হাতিয়ে নিচ্ছে ক্রেতাদের পকেট। এর মধ্যেই ভাড়ে করে মাটির বড় পাতিলে করে আনা সাদা দই ওজন করে অনেকটা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে এই সাদা দই কিনতে গেলে বাসন নিয়ে যেতে হয়। একজন ক্রেতা বললেন, পলিথিন থাকতে কি আর বাসনের দরকার আছে ভাই! ঠিকই তাই- পলিব্যাগে ভরে ঘোল বানানোর সাদা দই কিনছে ক্রেতারা। দামও অনেক সহনশীল। আধা কেজি ওজনের যে দই মাটির গোল পাত্রে বিক্রি হচ্ছে একশ’ টাকা সেই দই খুচরা বিক্রি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একজন ঘোষ বললেন আরও কম দামে দেয়া যায়, কিন্তু দুধের দাম বেশি। টক দই তৈরিতে বেশি খাঁটুনি নেই। দইয়ের বীজের ওপর দুধ ঢেলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে পরে বাতাসে রেখে শীতল করলেই হলো। চামচ দিয়ে কাঁদার মতো সাদা দই কেটে ওজনে তুলে বিক্রি। তারপর এই দই দিয়েই তৈরি হয় ঘোল। এই ঘোলকে নিয়ে প্রবাদ আছে। ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’। দুধের স্বাদ থাক আর নাই থাক গ্রীষ্মের দাবদাহে হৃদয় জুড়াতে ঘোল প্রিয় বন্ধুর কাজ করে। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাওয়ার জ্বালা জুড়োতে ঘোল ফিরে আসছে।
×