ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার সংক্ষেপ প্রেরণ

রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগে জাপান ও কোরিয়ায় রোড শো

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২২ জুন ২০১৫

রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগে জাপান ও কোরিয়ায় রোড শো

রশিদ মামুন ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে জাপান এবং কোরিয়াতে ‘রোডশো’ করার পরিকল্পনা করছে বিদ্যুত বিভাগ। ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) এর সঙ্গে বিদ্যুত বিভাগ যৌথভাবে এই রোডশোর আয়োজন করতে চায়। আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই দুই দেশে রোডশোর আয়োজন করার অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গেল সপ্তাহে সার সংক্ষেপ পাঠিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিডার্স ফাইনান্সে (দরপত্রে কাজ পায়া কোম্পানির অর্থ সংগ্রহ করে দেয়ার প্রক্রিয়া) এ বিদ্যুত কেন্দ্র করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে আবার দুই দেশে ১৫ দিন রোডশোর আয়োজন করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত মাসে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর দরপত্র জামা দেয়ার শেষদিনে তা আবারও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ ধরনের বড় প্রকল্প গ্রহণের সময় রোডশোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে প্রকল্পটির এত দূরে এসে রোডশো কেন করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। আর যদি বিডার্স ফাইনান্সে হয় তাহলে অর্থায়নের চিন্তা দরপত্রে অংশ নেয়া কোম্পানির। এর আগে যারাই রামপালে বিনিয়োগ করতে এসেছেন তাদের সবাইকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে দরপত্রে অংশ নেয়া কোম্পানিই আমাদের অর্থ সংগ্রহ করে দেবে। তাহলে এখন কেন হঠাৎ করে এই রোডশো তা বোধগম্য নয়। কর্মকর্তারা বলেন, বিগত সরকারের শুরুতে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এই তিন দেশে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রোডশো করে বিদ্যুত বিভাগ। এ সময় ধারণা দেয়া হয় এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু পরে দেখা যায় যেসব কোম্পানি রোডশোতে অংশ নিয়েছিল তাদের কেউ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসেননি। বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করে এত দিনের প্রকল্পগুলোতে তারাই ঘুরে ফিরে বিনিয়োগ করছে। আর ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর বেশিরভাগই দেশীয় বিনিয়োগ। মোটামুটি ওই রোডশোকে পরবর্তী পর্যায়ে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা একটি প্রমোদ ভ্রমণ হিসেবেই উল্লেখ করে থাকে। এখন রামপাল প্রকল্প নিয়েও তেমনটা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন তারা। বিদ্যুত বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প শুরু এবং পরবর্তী পর্যায়ে যে কোন ধরনের ব্যয় প্রকল্পর সঙ্গে যোগ হবে। সঙ্গত কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খরচ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে তার উল্টো প্রকল্প শুরুর আগেই বিপুল পরিমাণ খরচ করে বসে থাকা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় খরচ কাটছাঁট না করা গেলে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া তা আর কোন ফল বয়ে আনতে পারে না। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, রামপাল প্রকল্প নিয়ে একটি রোডশো করার সিদ্ধান্ত ছিল অনেক আগেই। প্রকল্পর শুরুতে বলা হয়েছিল অর্থায়নে প্রয়োজনে রোডশোর আয়োজন করা হবে। কিন্তু দরপত্র ডাকা হয়ে গেলেও রোডশোটি আর করা হয়নি এ জন্য এখন এসে রোডশোর আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো সার সংক্ষেপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ এবং ভারতের পক্ষে চারজন করে রোডশোতে অংশ নেবেন। রোডশো হবে জাপান এবং কোরিয়াতে। ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রোডশোটি করতে চায় তারা। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের সামনে প্রকল্পটি তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয় দুই দেশের ৩০ ভাগ মূলধন এবং ৭০ ভাগ ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। পনেরো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি। এর আগে কেন্দ্র নির্মাণের দেশীয় মূলধন হিসেবে বিদ্যুত বিভাগ সরকারের কাছে ৩০২ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার চায়। মোট চাহিদার মধ্যে প্রথম ২০০ মিলিয়ন ডলার এবং পরবর্তীতে আরও ১০২ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের সবপরিমাণ অর্থ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রর জমি নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন করে দিয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। যা পরবর্তীতে সমন্বয়ের কথা বলা হয়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে গত মাসে বিদ্যুত কেন্দ্রটির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোঃ আনোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে রোডশো করার। এ জন্য সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তবে সার সংক্ষেপ পাঠানো হলেও সবক্ষেত্রে সব কাজ হয় না। কোরিয়া এবং জাপানে যেসব কোম্পানি আমাদের রোডশোতে অংশ নেবে তাদের আগ্রহের উপর বিষয়টি নির্ভর করছে। বিডার্স ফাইনান্সে হলেও আবার রোডশোর কেন দরকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি রামপাল প্রকল্পর সঙ্গে ছিল। সে সময় বলা হয়েছিল আমরা প্রয়োজনে অর্থায়নের জন্য রোডশো করব। প্রকল্পর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সবাইকে জানানোই এই রোডশোর মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার ও সুন্দরবনের বাফার জোন থেকে চার কিলোমিটার দূরে স্থাপিতব্য এ কেন্দ্রের জন্য মংলাবন্দর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রামপালের গৌরম্ভার কৈকরদশ কাঠি এবং সাতমারি মৌজায় এক হাজার ৮৪৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জমির ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এর এই বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
×