ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পথশিশু

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২২ জুন ২০১৫

পথশিশু

রাজধানীসহ সারাদেশে কয়েক লাখ পথশিশু রয়েছে যাদের ৮০ ভাগেরই জন্ম ফুটপাথে। বলা চলে পথে জন্ম, পথেই তাদের বসবাস। স্বজনহারা অনেক শিশুও শহরে এসে এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। অবহেলা-অযতনে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের ‘টোকাই’, ‘পথকলি’, ‘ছিন্নমূল’ বা ‘পথশিশু’ বলা হয়। পথশিশুদের সংখ্যা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে কোন জরিপ না হলেও এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ পথশিশু রাজধানীতে। পথশিশুদের মধ্যে শতকরা ৫৩ ভাগ ছেলে আর ৪৭ ভাগ মেয়ে। নোংরা পরিবেশ আর অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা এসব শিশুর ৮৫ ভাগই রোগাক্রান্ত। পথশিশুদের জীবনযাপন অত্যন্ত দুর্বিষহ। অধিকাংশ সময়ই রাস্তা, পার্ক, ট্রেন-বাস স্টেশনে, লঞ্চঘাটে, সরকারী ভবনের নিচে ঘুমায় এবং প্রতিনিয়তই নাইটগার্ড কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। নোংরা স্থানে চলাফেরা ও ঘুমানোর কারণে অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। এই পথশিশুদের একটি বড় অংশ শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পৌঁছার আগেই নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, পিকেটিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এমনকি ভাড়ায় কাউকে খুন করার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এদের কেউ কেউ। এই ধরনের একটি গবেষণা প্রতিবেদন শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন দৈনিকে। বিআইডিএস ও ইউনিসেফের এই গবেষণা বলছে, দেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে ৭ লাখ পথশিশু। চলতি বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪ জনে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ জন। পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোন না কোনভাবে মাদক সেবন করে। ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট এবং ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। ঢাকায় এদের কমপক্ষে ২২৯টি মাদকের স্পট রয়েছে। অন্য এক জরিপে মাদকাসক্ত শিশুদের মাদক গ্রহণ ও বিক্রয়ে ৪৪ শতাংশ, পিকেটিংয়ে ৩৫ শতাংশ, ছিনতাই, নেশাদ্রব্য বিক্রয়কারী এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ পথশিশুর যুক্ত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। এ কথা সত্য যে, পথশিশুদের অপরাধপ্রবণতা কমাতে সরকারী-বেসরকারী কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলে আসছেন। তবে যা হচ্ছে তা প্রয়োজের তুলনায় খুবই কম। এই সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। পথশিশুদের এই জীবনচিত্র চরম সঙ্কট হিসেবেই দেখা উচিত। এই বিপুলসংখ্যক শিশুকে এ অবস্থায় রেখে সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে আরও ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। পথশিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। পথশিশুদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত করা গেলে ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণতা কমে আসতে পারে। এদের বয়সভেদে স্কুলে ভর্তি ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকেও আরও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। পথশিশুদের প্রতি অবহেলা নয়, দেশের নানামুখী উন্নয়নে এদের যুক্ত করা দরকার।
×