ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট নিয়ে ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২২ জুন ২০১৫

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং  এ্যাক্ট নিয়ে ষড়যন্ত্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট (এফআরএ) নিয়ে আবারো বিরোধিতা করছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএবি)। আইসিএবি’র বিরোধিতাকে আইনটি পাস না হওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের ষড়যন্ত্র বলে সংশ্লিষ্টমহল। তারা বলেন, আইনটি পাস হলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। নীরিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন জবাবদিহি করতে না হয় এ কারণে আইসিএবি আইনটির বিরোধিতা করছে। তবে আইনের বেশ কিছু ধারাকে অযৌক্তিক, অসঙ্গতিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করে আইসিএবির পক্ষে বলা হয়েছে, তাদের মতামত ছাড়াই আইনে এমন কিছু বিষয়ের সংযোজন বা বিয়োজন করা হয়েছে তা অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক। এছাড়া আইনের বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলেও মনে করছে তারা। এ জন্য আইনের অস্পষ্টতা ও অসঙ্গতিসমূহ দূর করার আহ্বান জানিয়েছে আইসিএবি। প্রসঙ্গত, ১ জুন সোমবার বাজেট অধিবেশনে এফআর এ বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বিলটি উত্থাপন করেন। আইএফআর আইনে মিথ্যা তথ্য বা অসাধু উপায় অবলম্বন বা আইনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা বা সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা উভয় দে দি ত করার এবং নিরীক্ষা কাজে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারির বিধান রাখা হয়েছে। চলতি বাজেট অধিবেশনেই আইনটি পাস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে আইনটির বিরোধিতা করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে আইসিএবি। বিজ্ঞাপনে প্রস্তাবিত এফআরএ বিষয়ে ৬টি আপত্তি তুল ধরা হয়েছে। তবে আইসিবির এ ধরনের তৎপরতাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইএফআরএ গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ আইনটি পাস করতে যাচ্ছে। এটি একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু একটি মহল অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে মূলত আইনটি পাসে বিরোধিতা করছে। তাদের এ বিরোধিতা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদেনের নিরীক্ষার মান নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন কাউন্সিল দরকার আছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে এফআরএ, পাস হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। যা কারও কাছেই কাম্য না। অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য আইসিএবি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তারা শুরু থেকেই এফআরএ’র বিরোধিতা করে আসছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আইনটি পাসে বিলম্ব করতে তারা বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তবে সরকারের উচিত হবে স্বাধীনভাবে কাজ করে আইনটি যত দ্রুত সম্ভব পাস করানো। তিনি আরও বলেন, আইসিএবিএফআরএ’র বিরোধিতা করে আসছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। তারা চায় স্বাধীনভাবে কাজ করবে কিন্তু কোন জবাবদিহিতা থাকবে না। ইনস্টিটিউট অব কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট এএসএম শায়খুল ইসলাম বলেন, আইসিএবি কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট (এফআরএ) নিয়ে বিরোধিতা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আইনটি যাতে পাস না হয় সে লক্ষ্যে আবারো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে নিজেরা সব কিছু করতে চায়। তারা সব সময় তাদের আচরণে মনোপলি মনোভাব প্রকাশ করে। তিনি বলেন, তারা প্রস্তাবিত আইনটির বিরোধিতা করে একটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। পুরো প্রতিবেদনে আইসিএমএবিকে অযাচিতভাবে টেনে আনা হয়েছে এবং অবজ্ঞা করা হয়েছে। একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে এটা কাম্য নয়। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনে অসৌজন্যমূলক ভাষা ব্যবহার করেছে। তারা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে কিন্তু কাউকে অবজ্ঞা করার অধিকার তাদের নাই। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে কস্ট অডিট করা হয় অথচ আইসিএবি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজম্যান্টের অডিট অযৌক্তিক। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল মারুফ মতিন বলেন, এফআরএ পাস না হয় বা বিলম্ব করতে আইসিএবি সম্প্রতি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারে। তবে স্বচ্ছতা স্বার্থে অবশ্যই আইনটির দরকার আছে। এক্ষেত্রে কারও কারও প্রফেশনালে খারাপ লাগতে পারে।
×