ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্প ১৫ দিন ধরে পানিবন্দী

শেরপুরে ৬০ পরিবারের মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ জুন ২০১৫

শেরপুরে ৬০ পরিবারের মানবেতর জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২০ জুন ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কান্দুলী আশ্রয়ণ কেন্দ্র এখন পৌণেন চার শ’ হতদরিদ্র অধিবাসীর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জলাবদ্ধতায় প্রায় ১৫ দিন যাবত অধিবাসীরা পানিবন্দী। তাদের ঘরে ঘরে এখন পানি। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে শিশুসহ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। জানা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম দফায় সরকারের মেয়াদকালে ১৯৯৯ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে গড়ে ৭ হয় কান্দুলী আশ্রয়ণ কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬০টি ভূমিহীন-ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় ৬০ পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ২৫০ সদস্যের। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরের ব্যবধানে ৬০ পরিবারের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত হলেও নানা সমস্যা-সংকটে এখন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করছে ৩৭৫ জন। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও ছিন্নমূল পরিবারের মূল ৬০ পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহে শুরু থেকেই ব্যবস্থা করা হয়নি কোন কর্মসংস্থানের। অর্থনৈতিক দৈন্যের কারণে নিজেরাও জড়াতে পারেনি কোন ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্যে। ফলে তাদের প্রায় সবাই এলাকায় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে কিংবা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। বছরের অল্প সময় ওই কাজ করে বাকিটা সময় তাদের বেকার হয়েই ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। যে কারণে তারা অনেকটাই অভ্যস্ত মানবেতর জীবনযাপনে। ভিজিডি কার্ড, বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতাসহ সরকারী সাহায্য-সহযোগিতাও তাদের কাছে পৌঁছেনি। এরপরও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় সংস্কারের অভাবে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরগুলো এখন একেবারেই জরাজীর্ণ। দরজা-জানালা ভাঙ্গা। চালের টিন খসে গেছে। সবমিলে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী। সরকারীভাবে তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনোই। ফলে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতিটি ঘরের মেঝেতে হাঁটুপানি জমে থাকে। ওই সময় আশ্রয়ণবাসীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। মাসের পর মাস পানিবন্দী হয়ে থাকতে হয় তাদের। জ্বলে না চুলা। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় শিশু-কিশোররা। এরপরও রয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় সমস্যাসহ স্যানিটেশন সমস্যা। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সভাপতি জয়নাল আবেদিন শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে জানান, ‘কাম-কাজের অভাবতো শুরু থাইকাই। আমগো কাম-কাজের কোন ব্যবস্থাও করা হয় নাই। কেউ খোঁজ-খবর না রাহায় ভাইঙ্গা-চুইরা মাথা গোঁজার ঘরের অবস্থা আর আমগো শইল্যের অবস্থা অহন পরায় একই। খাওন পরনের অবস্থাই যেহানে নাই, সেহানে চিকিৎসা আর পোলাপানগো পড়ালেহা কেমনে চলব? তিনি বলেন, কয়দিনের বিস্টি আর ঢলে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিও তলাইয়া থাহায় এহন আমরা সবার কাছ থাইকাই বিচ্ছিন্ন। রাস্তাই নাই, আমগো কেউ দেখতে আইব কেমনে?’
×