ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ জুন ২০১৫

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের পঞ্চম দিবস। গতকাল এ কলামে আমরা সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে ভোর রাতে সাহরী গ্রহণের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেছি। আজ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর সামান্য আলোকপাত। সাহরী অর্থ ভোররাতে রোজা রাখার মানসে পানাহার গ্রহণ। আর ইফতার অর্থ সূর্য ডোবার পর কোন পানাহার দিয়ে রোজা ভঙ্গ করা। রোজা রাখা যেমন সাওয়াবের কাজ, সাহরী গ্রহণ যেমন বরকতের কাজ, তেমনি যথাসময়ে ইফতার গ্রহণও ইসলাম ধর্মের রোজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও পুণ্যের কাজ। আমরা অনেক সময় ব্যস্ততা ও অবহেলার কারণে বিষয়টি বেমালুম ভুলে যাই। আর কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত মনে করেন দেরিতে ইফতার করা বুঝি একটু বেশি সাওয়াবের কাজ। এমন ধারণা মোটেই ঠিক নয়। আমাদের দয়াল নবী হযরত মুহাম্মদ (স) রোজার অনুশাসন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানব কল্যাণের বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তার ওপর লাখো দরূদ ও সালাম, তিনি যথার্থই্ বলেছেন- ‘আমার উম্মতগণ ততদিন পর্যন্ত বরকতময় ও প্রাচুর্যময় জীবন অতিবাহিত করবে, যতদিন তারা যথাসময়ে মুখে ইফতার নেবে।’ তাই আমাদের উচিত দিনভর সিয়াম সাধনা করার পর সূর্য অস্ত গেলে কাল বিলম্ব না করে ইফতার গ্রহণ করা। উল্লেখ্য, ইফতারির আইটেমের মধ্যে বর্তমানে আমাদের দেশে টক ঝাল মিষ্টিজাত নানা দ্রব্যের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল ঝোক দেখা যায়। এ সব যদি হালাল পথে উপার্জিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয় তবে নাজায়েজের কিছু নেই। সচরাচর বিভিন্ন দেশে আল্লাহর বান্দারা বিচিত্র রকমের পানাহারে অভ্যস্ত। এসব পানাহার ও খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাই বড় কথা। তবে খোরমা দিয়ে ইফতার করা সবচেয়ে উত্তম। এছাড়া মিষ্টিজাত দ্রব্য অথবা পানীয় দ্বারা ইফতার করা ভাল। সাহাবী আনাস (রা) বলেন- ‘আল্লাহর রাসূল (স) (মাগরিবের) নামাজের পূর্বে ইফতার করতেন কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি তাজা খেজুর না পেতেন শুকনো খেজুর (অর্থাৎ খোরমা) দিয়ে, আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন (রিয়াদুস্সালেহীন)।’ আমরা ইফতার গ্রহণের সূচনাতে সামান্য খোরমা/মিষ্টিজাত কিংবা পানি মুখে দিয়ে সুন্নাতের সাওয়াব পেতে পারি। এরপরই অন্যান্য আহার্য গ্রহণ করা যায়। হাদিস সঙ্কলন দারে কুতনীতে এসেছে- রোজাদারের সামনে যখন ইফতারের জন্য আল্লাহর নেয়ামত খাদ্যদ্রব্য আসে, তখন এই বলে শুকরিয়া আদায় করা উচিত- ‘আল্লাহর নামে আরম্ভ করি এবং তারই প্রশংসা করি। প্রভু হে! তোমারই উদ্দেশে আমি রোজা রেখেছিলাম। এখন তোমারই দেয়া রিজিক থেকে ইফতার করছি। তুমি পবিত্র প্রশংসনীয়। আমার রোজা কবুল কর। তুমি তো সর্বশ্রোতা এবং সবজান্তা।’ প্রিয় নবী (স) ইরশাদ করেছেন ‘যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ব্যক্তির জন্য তা গুনাহ মাফ ও দোজখের আগুন হতে নাজাতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রোজাদারের পুণ্যের সমান পুণ্য লাভ করবে। অথচ রোজাদারের সাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কম করা হবে না। (এমনকি) যে ব্যক্তি কাউকে একটি খেজুর/কিছু পানি কিংবা সামান্য দুধ দিয়ে ইফতার করবে আল্লাহপাক তাকেও উত্তম সাওয়াব প্রদান করবেন। (এছাড়া) যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে আহার করাবে আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাউসার হতে এমন পানি পান করাবেন যে, বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত সে আর পিপাসা অনুভব করবে না।’ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)
×