ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নায়েক রাজ্জাককে যে কোন মুহূর্তে ছেড়ে দেয়া হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ জুন ২০১৫

নায়েক রাজ্জাককে যে কোন মুহূর্তে ছেড়ে দেয়া হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যে কোন মুহূর্তে ছেড়ে দেয়া হতে পারে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের (বিজিপি) হাতে আটক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে। সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এদিন রাজ্জাককে বাবা হওয়ার খবরও জানানো হয়েছে তাঁকে। রবিবার রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা বেগমের কোলজুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। কিন্তু বাবা বিজিবি সদস্য মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের হাতে বন্দী। তাই সন্তান হওয়ার পরও আনন্দ নেই মা আসমার। নতুন অতিথি এলেও পরিবারটি রয়েছে বেদনায়। সেখানে উঠেছে কান্নার রোল। রাজ্জাককে অপহরণের পাঁচ দিন অতিবাহিত হতে চললেও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। উল্টো রাজ্জাকের হাতকড়া পরানো ছবি নিজেদের ফেসবুকে পেজে পোস্ট করেছে তারা। যা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয় নিয়ে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, খুব দ্রুত রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মায়ো মিন্টোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা হয়েছে। মিয়ানমার এ বিষয়টি আর বাড়াতে চায় না বলে জানিয়েছে। তিনি জানান, দু’দেশের সীমান্ত এলাকা মংডুতে রাজ্জাককে হস্তান্তর করা হবে। এটি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিজিপি রাজ্জাককে ফেরত দেবে বিজিবির হাতে। ওই কর্মকর্তা জানান, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ ভুল করে দু’দেশের যে কোন অঞ্চলে প্রবেশ করে ধরা পড়লে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে। মিয়ানমার এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে রাজ্জাককে খুব দ্রুত ফেরত দিতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন সন্তানের পিতাকে আর কষ্ট দিতে চায় না মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি। অনেকটা ছেলের সূত্র ধরেই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন। এদিকে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারে আটক বিজিবি সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এদিন তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফিরিয়ে এনে পরিবারকে না দেয়া পর্যন্ত উদ্বিগ্ন সরকার। পতাকা বৈঠকের পর মিয়ানমার তাঁকে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ করছে। আশা করি, যে কোন সময় তাঁকে ফিরিয়ে আনা যাবে। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদীতে গোলাগুলির পর গত ১৭ জুন বিজিবি সদস্য রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি। ওই ঘটনায় বিজিবির আরেক সদস্য সিপাহী বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হন। রাজ্জাককে ধরে নেয়ার পরদিন ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। অপহৃত বিজিবি সদস্যকে দ্রুত ফেরত পাঠাতে বলা হয় তাকে। অন্যদিকে রাজ্জাককে ফেরাতে বিজিবির পক্ষ থেকে কয়েক দফা পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও বিজিপি তাতে সাড়া না দিয়ে বলেছে, তারা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশনা পায়নি। এরই মধ্যে বিজিপির ফেসবুক পেজে নায়েক রাজ্জাকের দুটো ছবি প্রকাশ করা হয়, যাতে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাতকড়া হাতে দেখা যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁকে মিয়ানমারে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।
×