ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শরীয়তপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত

জরিমানার কোটি টাকার হদিস নেই

প্রকাশিত: ০৭:২০, ২৩ জুন ২০১৫

জরিমানার কোটি টাকার হদিস নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২২ জুন ॥ শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের গত ৫ বছরে ভ্রম্যমাণ আদালতের জরিমানার ১ কোটি ৮০ হাজার ৪শ’ ২০ টাকার হদিস মিলছে না। জরিমানার টাকা সোনালী ব্যাংক, শরীয়তপুর শাখার মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও তা জমা দেয়া হয়নি। আর এতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক ইমামউদ্দিন ও তার স্ত্রী একই অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী কাম-বেঞ্চ সহকারী বেগম কমলা আক্তার বলির পাঁঠা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার স্বামী-স্ত্রী উভয় অফিস সহকারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে ১৮ জুন এ ঘটনায় ইমামউদ্দিন ও তার স্ত্রী বেগম কমলা আক্তারের বিরুদ্ধে ওই টাকা আত্মসাত ও জালজালিয়াতির অভিযোগে পালং মডেল থানা ও দুর্নীতি দমন কমিশনে আলাদা দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বেগম কমলা আক্তারকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। মামলার বিবরণ ও জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ হতে ২৬ মে ২০১৫ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময় হাট-বাজারে ভেজালবিরোধী অভিযানসহ যানবাহন, মদ, গাঁজা, মৎস্য, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী, বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকা- প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন হাজার ৫শ’ ৯৫টি মামলায় জরিমানার দ- হিসাবে ১ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা আদায় করা হয়। ওই জরিমানার টাকা সোনালী ব্যাংক, শরীয়তপুর শাখার মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক ইমামউদ্দিন। কিন্তু তিনি টাকা জমা না দিয়ে সোনালী ব্যাংক, শরীয়তপুর শাখার নামে ৭শ’ ৫৪টি ভুয়া ও জাল চালান তৈরি ও জমা দেখিয়ে ১ কোটি ৮০ হাজার ৪শ’ ২০ টাকা আত্মসাত করেন। মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মচারী ইমামউদ্দিন দোষ স্বীকার করে তা স্ত্রী বেগম কমলা আক্তারের মাধ্যমে ৬ জুন, ১ লাখ ও ১৬ জুন, ২ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের নাজির মোঃ সেলিম মিয়ার নিকট জমা দিয়েছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার টাকা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অফিস সহকারী কিভাবে তা আত্মসাত করতে পারল অথবা জেলা হিসাবরক্ষণ বা জেলা প্রশাসকের অডিটে কেনই বা তা ধরা পড়েনি- এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন বছর অন্তর বদলির বিধান থাকলেও শুধু অফিস সহকারী ইমামউদ্দিনকে কেন ৫ বছর যাবত ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার টাকার চালান জমা দেয়ার দায়িত্বে রাখা হলো- এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, অফিস সহকারী ইমামউদ্দিন মুখ খুললে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের দু/এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ফেঁসে যেতে পারেন বিধায় তাকে মামলা দিয়ে আত্মগোপনে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আত্মগোপনে থেকে মুঠোফোনে ইমামউদ্দিন জানান, ২০১২ সালে আমি পেশকার হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদুর রহমানের সঙ্গে গোসাইরহাট এবং জাজিরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে অংশগ্রহণ করি। সে সময় দু’ স্থানে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই টাকার চালান হিসাবে ব্যাংকে জমা দেয়ার দায়িত্ব ছিল আমার। সেই টাকার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ৫০ হাজার ও অপর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমি এই টাকা চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার জন্য বার বার উপস্থাপন করলে উভয়ে আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। এছাড়া অন্য কোন টাকা সম্পর্কে আমার জানা নেই। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের কার্যালয়ের মোবাইল কোর্ট বেঞ্চ সহকারী ইমামউদ্দিন মোবাইল কোর্টের জরিমানার ১ কোটি ৮০ হাজার ৪শ’ ২০ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আমরা বিভাগীয় মামলাসহ ফৌজদারি ও দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করেছি।
×