ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নায়েক রাজ্জাককে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ছবি প্রকাশ ;###;শর্ত ছাড়াই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে

মিয়ানমারের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ জুন ২০১৫

মিয়ানমারের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ছবি প্রকাশের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মিয়ানমারের আশ্রয়ে থাকা ৫৫৫ জন কথিত বাংলাদেশী নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে নায়েক আবদুর রাজ্জাককে খুব শীঘ্রই ফেরত আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সূত্র জানায়, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কোন দেশের সামরিক-বেসামরিক বাহিনী অন্য কোন দেশের সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর কোন সদস্যকে নির্যাতন চালাতে পারে না। কোন দেশের সীমান্ত বাহিনীর সদস্যকে আটকের পরে তাকে নির্যাতন না করে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথাও বলা হয়েছে ওই কনভেনশনে। তবে জেনেভা কনভেশন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নির্যাতন করেছে। আবার তার ছবিও প্রকাশ করেছে। মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাগর থেকে উদ্ধার করা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে ৫৫৫ জন নাগরিক রয়েছেন। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই ৫৫৫ জন নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়া হলে আবদুর রাজ্জাককে তারা মুক্তি দেবে। তবে মিয়ানমারের এই শর্তে রাজি নয় বাংলাদেশ। এটা ইতোমধ্যেই তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সাগর পথে উদ্ধারের পর মিয়ানমারের আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশী নাগরিককে দুই দফায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রথম দফায় ১৫০ জন নাগরিক ও দ্বিতীয় দফায় ৩৭ জন নাগরিককে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। সেখানে ৫৫৫ জন নাগরিকের মধ্যে বাংলাদেশী থাকলে পরিচয় নিশ্চিতের পরে তাদের বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনবে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে নায়েক রাজ্জাককে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি পুরোপুরি আলাদা। একটির সঙ্গে অন্যটির কোন সম্পর্ক নেই। তাই কোন রকম শর্ত ছাড়াই নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের আশ্রয়ে থাকা ৫৫৫ জন নাগরিকের বিনিময়ে নায়েক রাজ্জাকের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এই প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে মিয়ানমার আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। কিছু কিছু দিন পর পর এক বিজিবির সদস্য আটকে রেখে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য একটি অসাধু প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। সে কারণেই মিয়ানমার সরকারের এই ফাঁদে সহজেই পা দিচ্ছে না বাংলাদেশ। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটকের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নায়েক আবদুর রাজ্জাককে মুক্তি দেয়নি মিয়ানমার। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তাদের দেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেছেন নায়েক আবদুর রাজ্জাক। দেশটির অভিযোগ জলসীমানার এক কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছেন তিনি। আর এই অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য রাজ্জাককে আটকে রেখেছে দেশটি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের জলসীমায় রাজ্জাকের অনুপ্রবেশের অভিযোগ সঠিক নয়। নায়েক রাজ্জাককে বাংলাদেশের জলসীমা থেকেই তুলে নিয়ে গেছে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেপিডোতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদারকি করছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নায়েক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে, তা সঠিক নয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি নায়েক রাজ্জাক তাদের দেশের জলসীমার এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে, নায়েক রাজ্জাকের নেতৃত্বে নাফ নদীতে বিজিবির একটি দল টহল দিচ্ছিল। সে সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জলসীমায় দুইটি নৌকায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন নায়েক রাজ্জাকের নেতৃত্বের দলটি। এ সময় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা একটি ট্রলারে করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেন। তারা নায়েক রাজ্জাককে জোর করে তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ও হয়। সূত্র জানায়, অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক বিজিবি নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে মিয়ানমার। এই শর্ত অনুযায়ী সেদেশের আশ্রয়ে থাকা ৫৫৫ জন নাগরিককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনলে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি জানায় মিয়ানমার। তবে দু’দিন আগেও মিয়ানমার জানিয়েছিল আইন অনুযায়ী একজন অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই বিজিবি নায়েক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা। দেশটির আইনে অনুপ্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- নির্ধারিত রয়েছে। এখন সেই অবস্থান থেকে ফিরে এসে মিয়ানমার তাদের আশ্রয়ে থাকা ৫৫৫ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনার শর্ত দেয়। গত বুধবার ভোরে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা নায়েক রাজ্জাককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। সে সময় নায়েক আবদুর রাজ্জাককে দ্রুত ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান সে সময় নায়েক রাজ্জাককে ছেড়ে দেয়ার জন্য আশ্বাসও দেন। এদিকে শুক্রবার ঘুমধুম সীমান্ত বরাবর দেশটির ঢেকিবনিয়ায় দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিজিপি কর্মকর্তারা অতি দ্রুত নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দিবে বলে বিজিবি কর্মকর্তাদের আশ্বাস দেয়। তবে সেই আশ্বাস দেয়ার পরও কোন কাজ হয়নি। এছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানালেও এখনও সেই বৈঠক হয়নি।
×