ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ ওয়ানডেতে আজ রাহানেকে দলে চাইছেন সৌরভ গাঙ্গুলী

ধোনির একার নয়, দায় সবার

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ২৪ জুন ২০১৫

ধোনির একার নয়, দায় সবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারে কেঁপে উঠেছে গোটা ভারতীয় ক্রিকটের ভিত। আজ শেষ ওয়ানডে হেরে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হলে সেখানে নিশ্চিত সুনামি বয়ে যাবে! লজ্জার ভরাডুবিতে ধুয়ে দেয়া হচ্ছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। তবে গ্রেট সৌরভ গাঙ্গুলী দোষের ভার কেবল অধিনায়কের ওপর চাপাতে রাজি নন। ‘কলকাতার দাদাবাবু’ খ্যাত এই গ্রেট ব্যর্থতার জন্য গোটা টিম ম্যানেজমেন্টকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি ক্লাসিক্যাল ব্যাটসম্যান অজিঙ্কা রাহানেকে আজ একাদশে দেখতে চাইছেন সাবেক অধিনায়ক। প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন সুপারস্টার সুনীল গাভাস্কারসহ একাধিক সাবেক ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার। ‘বাজেভাবে টানা দুই হারে কজনেরই বা মেজাজ ঠিক থাকে? মিরপুরের সংবাদ সম্মেলনে ধোনি তাই অনেকটা হতাশা থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেছে। বিষয়টাকে এত সিরিয়াস নেয়ার কোন মানে হয় না। যে দেশকে ভালবাসে, সে-ই দেশের ব্যর্থতায় বেশি হতাশ হয়। ওর ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ-ভরাডুবির দায় কেবল ধোনির একা কেন নেবে? এটা প্রত্যেক খেলোয়াড় থেকে ম্যানেজমেন্ট সবার ব্যর্থতা।’ রবিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে হেরে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়ায় সাবেক দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। খেলা শেষের প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতীয় সাংবাদিকদের তীর্যক প্রশ্নবানে জর্জরিত ধোনি এক পর্যায়ে বলে বসেন, ‘আমি নেতৃত্ব ছাড়লেই যদি সমস্যার সমাধান হয়, তবে আমাকে সরিয়ে দিন না।’ সংবাদ মাধ্যমে সেটিকেই ফলাও করে প্রচার করা হয়। ভারতজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। কানাঘুষা শুরু হয়, আসলেই কি নেতৃত্ব ছাড়ছেন ধোনি? ঠিক তখনই উত্তরসূরির হয়ে ব্যাট ধরলেন সৌরভ। ভারতীয় বোর্ড (বিসিসিআই) জাগমোহন ডালমিয়ার অত্যন্ত স্নেহভাজন সৌরভের সঙ্গে আরও দুই গ্রেট শচীন টেন্ডুলকর ও ভিভিএস লক্ষণকে নিয়ে তৈরি হয়েছে পরামর্শক কমিটি। এখন থেকে দলটির ভেতর-বাইরের ভাল-মন্দ সবকিছু দেখার দায়িত্ব তাদেরই। সুতরাং সৌরভের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সফরে অস্থায়ী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন রবি শাস্ত্রী। ভারত দলে আদৌ কোচের প্রয়োজন আছে কি নাÑ তা নিয়ে বিতর্কে সামিল অনেকে। তবে সৌরভ পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন কোচের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বললেন, ‘দলে কোচের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। তবে খেলোয়াড় বা অন্য কারও এটা নিয়ে মাথা ঘামানো উচিত নয়। এটা বিসিসিআই ঠিক করবে।’ ঘরের মাটিতে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ধোনি কী অধিনায়ক থাকবে? সৌরভের উত্তর, ‘এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এতটুকু বলতে পারি, নেতৃত্বে কখনও ভাল, কখনও খারাপ সময় যায়। এটা খেলোয়াড়ি জীবনেরই অংশ। সঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না, ভারতী ক্রিকেটকে এ পর্যায়ে তুলে ধরতে ধোনির রয়েছে অনেক অবদান। সুতরাং প্রাপ্য সম্মানটা ওর পাওয়া উচিত।’ প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তিন তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ভারত। সবচেয়ে বেশি করে চোখে লাগে দলটির সময়ের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান অজিঙ্কা রাহানের বাদ পড়া। আজ তাকে চাইছেন সৌরভ, ‘অক্ষর প্যাটেলকে পরখ করা মানা যায়, তাই বলে রাহানেকে বাইরে রাখার ব্যখ্যা হয় না। আশা করছি শেষ ম্যাচে ওকে একাদশে দেখতে পাব।’ একই সুরে কথা বলেছেন গাভাস্কার। ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তি বলেন, ‘ধোনিকে ওর প্রাপ্য সম্মানটা দিতে হবে। এখনই ওকে সরে দাঁড়াতে বলাটা অনৈতিক। ওর সাফল্য কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’ দলের বাজে ফল দেখে মৃদু হতাশা প্রকাশ করলেও ধোনির পাশে আছেন, বিষেন সিং বেদী, অজিত ওয়াড়েকর, দিলীপ বেঙ্গসরকারের মতো সাবেকরা। এদের বেশিরভাগই মনে করেন, অন্তত আগামী টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধোনিরই অধিনায়ক থাকা উচিত। এই তালিকায় আছেন চেতন চৌহান, সৈয়দ কিরমানি ও কিরণ মোরে। ‘আমার মনে হয় না, ধোনিকে সরানো উচিত। ও বিশ্বকাপ জিতিয়েছে, গত বিশ্বকাপেও দলকে সেমিতে তুলে নিয়েছিল। একটা মাত্র দ্বিপক্ষীয় সিরিজ দিয়ে একজন অধিনায়কের সাফল্য-ব্যর্থতা বিচার করার মানে হয় না।’ বলেন বেঙ্গসরকার। বেদীর মতে, ‘হারের জন্য কখনও একজনকে দোষী করা ঠিক নয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশকে সিরিয়াসলি না নেয়ার খেসারত এটি। দলগত আলসেমির জন্যেই হার।’ তবে রাগের মাথায় ধোনির যা খুশি তাই বলা উচিত হয়নি বলেও মনে করেন এই সাবেক তারকা। ওয়াড়েকর বলেন, ‘এমন হারে আমি নিজেও লজ্জা পাচ্ছি। আমি সিওর যে ওরা বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিয়েছিল। ধোনিকে নিয়ে অযথা কথা বলা উচিত নয়। কারণ স্বল্পদৈর্ঘে নেতৃত্ব দিতে ওর বিকল্প নেই।’
×