ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৫ জুন ২০১৫

আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে

রাজীব গান্ধীর দুঃখজনক মৃত্যুর পর থেকে ভারতে কংগ্রেস আর কখনও একক মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। দলটিকে সব সময় জোটবদ্ধ বা কোয়ালিশনের রাজনীতি করতে হয়েছে। কোয়ালিশনের রাজনীতির অনেক গুণাগুণ নানান ভাবে আলোচিত হয়। হয়ত ভাল। তবে সে আলোচনা নয়, অন্য একটি বাস্তবতা হচ্ছে, আজ ভারতের কংগ্রেসের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য অনেকখানি দায়ী এই কোয়ালিশনের রাজনীতি। কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে যারা ক্ষমতায় আসেন তারা অনেকে বড় মন্ত্রিত্ব দাবি করে আসেন। কিন্তু তাদের চরিত্র থাকে ডিসপোজাল প্লেটের মতো, ওয়ান টাইম খাওয়ার জন্য ব্যবহার আর কি! যে কারণে ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকে তাদের অনেকে- এক. আয় রোজগারে নেমে পড়েন- দুই. তারা কখনও কংগ্রেসের রাজনৈতিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী হন না। তাদের এ দুর্নীতির, অরাজনৈতিক ও অবাস্তব কর্মকা-ের খেসারত কংগ্রেসের মতো একটি একশ’ তিরিশ বছরের দলকে দিতে হচ্ছে। কংগ্রেসের নিজের যে ভুল নেই তা নয়, কিন্তু হিসাবের খাতাটি খুললে দেখা যাবে বেশী দায় উল্লিখিতদের জাবেদাতে পড়েছে। এ লেখা যেদিন প্রকাশ হবে তার একদিন আগে আওয়ামী লীগ তার ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পার করল। অর্থাৎ কংগ্রেসের অর্ধেক বয়সী দলটি। কংগ্রেসের মতোই এ দলটিকে নানান প্রতিকূল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। আবার কংগ্রেসের মতো এ দলটির অর্জনের খাতাও অনেক ভারি। কিন্তু এ দলের মধ্যেও কংগ্রেসের মতো কয়েকটি লক্ষণ দেখা গেছে। এক. তাকে কোয়ালিশন করতে হচ্ছে, তা নির্বাচনী আসনের কোয়ালিশন কখনওবা ভোটের কোয়ালিশন। এর ফলে তাদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব ওই ডিসপোজাল প্লেটদের জন্যে ছাড়তে হচ্ছে আবার গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী আসনও ছাড়তে হচ্ছে। এ ছাড়াও কংগ্রেসের থেকে একটি বড় বিপদ আছে আওয়ামী লীগের। তাহলো ঘরের মধ্যে বামপন্থী বিপদ। কংগ্রেসকে ভারতে বামপন্থীদের সঙ্গে জোট করতে হয়। ভারতে কংগ্রেসে বামপন্থীরা অন্তত বাইরে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বামপন্থীরা আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছে। মার্কস, শতাব্দীর একজন সেরা মনীষী। তাকে নিয়ে কারও কোন দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আবার এও বলা উচিত নয়, মার্কস কমপ্লিট কোড অফ এ স্টেট। কারণ, সমাজবিজ্ঞানে কখনও সার্বিক কোন থিওরি দেয়া যায় না। সমাজ পরিবর্তনশীল। তাই গ্রহণ ও বর্জনের ভেতর দিয়ে যে থিওরিগুলো এগিয়ে চলে সেগুলোই সমাজের চিরন্তন বা সমাজ পরিবর্তনকারী থিওরি। তবে ভবিষ্যতের ইতিহাস বলবে মার্কসবাদ আর উপমহাদেশের কমিউনিজম বা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে মনে হয় এক পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না। বরং ইতিহাসে এটাও চিহ্নিত হতে পারে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও পাকিস্তানবিরোধী বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিয়েছে বামপন্থী আন্দোলন। এমনকি যে সব সন্তান জাতীয়তাবাদের এবং উদার গণতন্ত্রের জন্য এ্যাসেট হতে পারতেন তারা বামপন্থী হয়ে যাওয়াতে ক্ষতি হয়েছে দেশের। এমনকি বামপন্থী হওয়াতে তাদের অনেকে এতটা জাতীয়তাবাদবিরোধী ও উদার গণতন্ত্রের বিরোধী হয়েছে, তারা মূলত স্বৈরতন্ত্রের সাথী হয়ে গেছে। তার দুটি জাজ্বল্য উদাহরণ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ব্রিটিশকে সহযোগিতা করা এবং বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকে কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাপের সমর্থন করা। বাংলাদেশের এ বামপন্থীরা এখন আশ্রয়হীন হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছে। গত ছয় বছরে তাদের অনেকের চরিত্র পরিষ্কার হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা মুখে রক্ত উঠিয়ে পরিশ্রম করে যা অর্জন করেন তার ক্ষতি করতে এরাও কম যাচ্ছেন না। যেমন দিল্লীর এক সুধী সমাজে বসে গল্প করছিলাম, এ সময়ে একজন অতি গুণী ও বাংলাদেশের বিশেষ করে শেখ হাসিনার শুভাকাক্সক্ষী ভারতীয় প্রাক্তন বড় সরকারী কর্মকর্তা বললেন, আপনাদের অমুক আওয়ামী লীগ নেতা তো হিন্দুদের বাড়ি দখল করেছেন। এই দেখুন তার ডকুমেন্ট আমার মোবাইলে। খুব বেশি উত্তর দিতে পারিনি। তিনি বিদেশী, তাকে বলতেও পারিনি, ভদ্রলোক আসলে প্রকৃত আওয়ামী লীগার নন, প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা এ কাজ করেন না। কারণ, ওই এলাকায় ঢালী মোয়াজ্জেমকে আওয়ামী লীগার হিসেবে ১৯৭৫-এর পরে দুর্দিনেও দেখেছি, যখন এসব বামপন্থী জিয়া তর্পণে ব্যস্ত ছিলেন। কেউ মনে হয় বলবেন না, ঢালী মোয়াজ্জেম এমন করেছেন। এখানেই কিন্তু প্রকৃত আওয়ামী লীগার ও ডিসপোজাল প্লেটদের ভেতর পার্থক্য। এবার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে, সৈয়দ আশরাফ তাঁর ভাষণে সৈয়দ নজরুল ইসলামের একটি তথ্য জানিয়েছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের কিশোরগঞ্জের বাড়ি থেকে রেল স্টেশন ছিল দুই মাইল দূরে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য তিনি নিজে স্যুটকেস মাথায় নিয়ে হেঁটে রেল স্টেশনে আসেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের আরও এ ধরনের সহস্র ত্যাগ ও অনুকরণীয় কাজ আছে। ছোট্ট দুটি তথ্য এখানে উল্লেখ করি। বাহাউদ্দিন চৌধুরীর কাছে শোনাÑ তিনি তখন আওয়ামী লীগের অফিস সেক্রেটারি। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। আইয়ুব ও মোনায়েম খানের নির্যাতনের কারণে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তখন আদালতে খুব বেশী কেস পাচ্ছেন না। তার ওপর কর্মীদের জামিনসহ নানান মামলা করতে হয় নিজ খরচায়। এ কারণে তাঁর আর্থিক অবস্থা ভাল যাচ্ছিল না। তিনি একটি বিছানা ও বালিশ নিয়ে আসেন বাড়ি থেকে। আর সে বিছানাতেই আওয়ামী লীগ অফিসে ওই ক’দিন রাত কাটান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে। আরেকটি তথ্য শোনা মুজিবনগরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রাইভেট সেক্রেটারি, প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ শাহজাহানের কাছ থেকে (সৈয়দ শাহজাহানও এক সময় আওয়ামী লীগের অফিস মেইনটেইন করতেন)। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সকাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাছে ভারতীয় শিল্পপতিদের দেখা করার লাইন পড়ে। সৈয়দ শাহজাহান একের পর এক তাদের ভিজিটিং কার্ড দিচ্ছেন। কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভেতর কোন প্রতিক্রিয়া নেই। এক পর্যায়ে সৈয়দ শাহজাহানের মনে হয়, স্যার তো এক কানে কম শোনেন, উনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না। এত বড় সব শিল্পপতি বসে আছেন, আর তিনি কোন কিছুই বলছেন না। এক পর্যায়ে সৈয়দ শাহজাহান জিজ্ঞেস করেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে- স্যার ওঁরা বসে আছেন। আপনি কিছু বলছেন না। সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাত নাড়িয়ে শুধু না সূচক ইঙ্গিত করেন। তারপর সৈয়দ শাহজাহানকে কাছে ডেকে বলেন, বাইশ পরিবারের কবল থেকে মুক্ত করেছি দেশ- বাইশ শ’ পরিবারকে ডাকার জন্য নয়। এঁরা ছিলেন আওয়ামী লীগার। এঁরা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা। আর শুধু এই জাতীয় নেতারা নন, জেলায় জেলায়, থানায় থানায় এমনকি গ্রামে গ্রামে এমন নিবেদিত এবং আদর্শবান নেতা ও কর্মী তৈরি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। তারা জীবন দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, সব কিছু দিয়ে প্রমাণ রেখে গেছেন ও যাচ্ছেন তারা আওয়ামী লীগার। এখনও অনেক দূর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত অনেক আওয়ামী লীগার কেন যেন লেখা পড়ে দেখা করতে আসেন। তাদের ত্যাগকে শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না। বিদায় দিয়ে মনে মনেও স্যালুট করতে হয়, চোখের কোনা বেয়ে মনের অজান্তে জল গড়িয়ে পড়ে- মনে হয়, বঙ্গবন্ধু কী পরশপাথর ছিলেন, এমন খাঁটি সোনা তিনি তৈরি করে গেছেন! এরা হয়ত আমাদের সমাজের তথাকথিত সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের মতো সংস্কৃত নন, কিন্তু তাদের কোন একটি চুল পরিমাণ ত্যাগ কিন্তু এ বুদ্ধিজীবীরা এ দেশের জন্য করেননি। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। তবে তাকে আমি জানি। তাই বুঝতে পারি, খালেদা যখন মানুষ পুড়িয়ে মারছিল তখন তিনি অন্তরের কোন যন্ত্রণা থেকে, দায় থেকে বলেছিলেন, দেখা মাত্র গুলি করে মারা হোক ওই খুনীদের। সৈয়দ মহসীন আলীর এ যন্ত্রণা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বুঝবেন না। কিশোর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। অভিমন্যুর মতো উৎসর্গ হয়েছে তার ছেলে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধে, কুরুক্ষেত্র’র থেকে অনেক ভয়াবহ যুদ্ধে। তাই যখন সে দেশের মানুষকে কিছু পাকিস্তানী জারজ পুড়িয়ে মারে তখন তার মুখ দিয়ে তো এ কথা আসবেই। কারণ, এ তার বুকের জ্বালার কথা। রক্তের দায়ের কথা। শুধু নিজের নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে কিশোর সন্তানের রক্ত দিয়ে তিনি এ দেশ অর্জন করেছেন। আর সেই মহসীন আলীকে নিয়ে মিডিয়ায় কিছু পাকিস্তানী জারজ সমালোচনা করে। যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলামরা আর মাঠ পর্যায়ে সৈয়দ মহসীন আলীরা। ওই আওয়ামী লীগে কিন্তু আজ প্রতিদিন এই আওয়ামী লীগারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বরং এখন একদিকে যেমন ওই তথাকথিত ডিসপোজাল প্লেট অন্যদিকে জিয়াউর রহমান ও ফালুর আদর্শে উজ্জীবিত কিছু আওয়ামী লীগার দেখা যায়। অর্থাৎ একদল চান জিয়াউর রহমানের মতো শো অফের মাধ্যমে, অর্থাৎ রাস্তায় নাটক করে, মিডিয়ায় হাজিরা দিয়ে জনপ্রিয় হতে আর আরেক দল আছে ফালুর মতো টাকা রোজগারের পথে। বঙ্গবন্ধু শুধু এদের কণ্ঠে- বুকে ফালু এবং জিয়াউর রহমান। তাই আজ শেখ হাসিনার দিনরাত মুখে রক্ত ওঠা পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে একের পর এক অর্জনকে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ডিসপোজাল প্লেট আওয়ামী লীগাররা কী হয় তার প্রমাণ তো এবিএম মূসা। যিনি ’৭৫-এর পরে বলতেন, আমি তো আওয়ামী লীগার নই। শেখ সাহেব আমাকে ডেকে নমিনেশন দিয়েছিলেন। আর টিভির লাইসেন্স না পেয়ে টিভির পর্দায় বলে গেলেন, আওয়ামী লীগ দেখলেই বলবে ‘তুই চোর, তুই চোর।’ এ জন্যে কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে, আওয়ামী লীগের অতীতের প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাতের দিকে তাকিয়ে এই ৬৬ বছরের সংগঠনটিকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তাকে আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে। দেশের ক্রিকেট টিমের মত তাদেরও অফ কাটার নিজস্ব মোস্তাফিজ তৈরি করতে হবে। ভাড়া করা প্লেয়ার দিয়ে নিজেদের টিম হয় না। আওয়ামী লীগে এখনও গ্রামেগঞ্জে বহু আওয়ামী লীগার আছেন। নতুন প্রজন্মেও নানান পেশায় ভাল ভাল ছেলেমেয়ে আছে। যাদের বামেও ছোবল মারেনি, ডানেও ছোবল মারেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মতো : অর্থাৎ লেফটÑরাইট-ফরওয়ার্ড এই পথ চলায় বিশ্বাস করে। এদেরকে নিয়েই আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে। আর এদের মাধ্যমেই কেবল শেখ হাসিনার অর্জনের সুফল মানুষের উপলব্ধিতে পৌঁছাবে। শেখ হাসিনার রক্ত পানি করে কেনা গম পোকায় খাবে না। নানান অপপ্রচারে দ্বিধান্বিত মানুষ কেবল সেদিনই শেখ হাসিনাকে উপলব্ধি করতে পারবে। ভোটের রাজনীতিতে তখন জোটেরও প্রয়োজন হবে না। এমনকি জোট হলেও আওয়ামী লীগ সকল স্থানে ক্ষমতায় থাকবে। ছদ্মবেশী রাজাকার, গলাকাটা নকশাল, আর জিয়ার ১৯ দফার খালকাটা বামেরা আওয়ামী লীগের নামে সব দখল করে নিজ স্বার্থ হাসিল করবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে সবখানে। [email protected]
×