ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পের বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৫ জুন ২০১৫

মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পের বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পের বিকাশের স্বার্থে ২০১৫-’১৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের ওপর আরোপিত বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক ও রংবিহীন সিকেডি (খুচরা) যন্ত্রাংশ আমদানি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ দুটি নতুন প্রস্তাবনা বিকাশমান এ শিল্পের বিনিয়োগকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। আমদানি করা সিকেডি মোটরসাইকেলের ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আমদানির পর দেশে সংযোজন করা মোটরসাইকেলের দাম গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। ফলে মোটরসাইকেলের ক্রয়মূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে, কর্মহীন হয়ে পড়বে এ শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বিশাল একটি অংশ এবং সরকারের মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও হ্রাস পাবে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মোটরসাইকেল এসেম্বলারস এ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিমামা) উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব তথ্য জানায়। এ সময় বাংলাদেশে বাজাজ, টিভিএস, হোন্ডা, হিরো, সুজকি, মাহিন্দ্রা, ইয়ামাহা, লিফান, এমা ও জংশ্যান ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের পরিবেশকদের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় উৎপাদনকারীদের সুবিধা দিতেই তাদের সঙ্গে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই শিল্প মন্ত্রণালয় এ ধরনের প্রস্তাব এনেছে। অথচ দেশের মোটরসাইকেলের ৯০ শতাংশ চাহিদাই সংযোজন শিল্পের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। আর স্থানীয় উৎপাদনকারীরা এ চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিমামা সভাপতি মতিউর রহমান। এতে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পের আরও বেশি ক্ষতি হবে। একটি পেইন্টশপ স্থাপনে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০-৩৫ কোটি টাকা। অনেক শিল্প মালিকের পক্ষেই এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে পেইন্টশপ স্থাপন সম্ভব হবে না। এছাড়া পেইন্টশপ করতে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ প্রয়োজন। যেখানে বিদ্যমান শিল্প কারখানাতেই গ্যাস ও বিদ্যুত প্রয়োজনমতো পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত। তিনি দাবি করেন, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানির মোট করভার দাঁড়িয়েছে ১৩১ শতাংশ, যা ১৫০০ সিসি লাক্সারি কার গাড়ির আমদানি শুল্কের সমান। অথচ মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী হিসেবে নিবন্ধিত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের শুল্ক কর রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। এতে আমদানিকারক ও স্থানীয় উৎপাদনকারীর ব্যবসায় ব্যাপক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করেছে। সংবাদ সম্মেলনে একটি জরিপের ফল তুলে ধরে বাংলাদেশে হোন্ডার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও ইয়োচি মিজুতানি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। অথচ যাতায়াতে প্রতি কিলোমিটার খরচ হিসেবে রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সার তুলনায় মোটরসাইকেল অনেক সাশ্রয়ী। বাংলাদেশে প্রতি ৩০০ জনে মাত্র ১ জন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। ভারতে এ সংখ্যা প্রতি ১৩ জনে ১ জন ও পাকিস্তানে প্রতি ১৮ জনে একজন। তিনি বলেন, চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ লাখ ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি সম্ভব। অথচ বাজেটের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা ১ লাখ ইউনিটে নেমে আসবে এবং এতে সরকারও বিপুল রাজস্ব হারাবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্রমাগত শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ২০১০-’১১ অর্থবছর থেকেই দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল বিক্রির সংখ্যা কমেছে ৮০ হাজার ইউনিট। ২০১০-’১১ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার ইউনিট। এরপর থেকেই তা কমতে শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিক্রি হয় মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার ইউনিট। সংবাদ সম্মেলনে এ শিল্পের বিকাশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব প্রত্যাহার করা এবং শিল্পের উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা।
×