ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৫ শ’ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৬ জুন ২০১৫

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৫ শ’ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে আবারও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার) অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান, যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা, বিদেশ থেকে কর্পোরেট ঋণ গ্রহণ এবং কাক্সিক্ষত হারে আমদানি ব্যয় না হওয়া রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান তিনি। বলেন, মূলত রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে ভাল প্রবৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৭ মে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর একের পর এক রেকর্ড অর্জন করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একইভাবে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এরপর একই বছরের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন, ১৬ এপ্রিল রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন এবং ৭ আগস্ট ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। কয়েক দফা ওঠানামার পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালে গবর্নর আতিউর রহমান বলেছিলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির সব খাতই যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকা একটি স্বস্তির খবর। সম্প্রতি আরও একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় খাদ্য আমদানিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড অর্জন করছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১০১ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এলেও ৩০ মার্চ তা ফের ২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর ২৯ এপ্রিল ২৪ মিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মাঝখানে কিছুটা কমলেও সব রেকর্ড ভেঙ্গে বৃহস্পতিবার তা ২৫ বিলিয়ন ডলারের কোঠা ছাড়িয়ে যায়। আকুর মে-জুন মেয়াদের বিল শোধ করতে হবে আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি জুন মাসের ১৯ দিনে ৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে, অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে ১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ২৮ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
×