ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় পরিচয়পত্রে

উচ্চ আদালতের বিচারকদের নামের আগে পদবি যুক্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ জুন ২০১৫

উচ্চ আদালতের বিচারকদের নামের আগে পদবি যুক্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের আগে বিচারপতি যোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন উচ্চ আদালতের বিচারকরা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত বিচারকদের নামের আগে বিচারক পদবি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে কর্মরত তিন বিচারকের নামের আগে পদবি যুক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগকে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বুধবার কমিশনের এক সভায় এ তিন বিচারপতির নামের আগে বিচারপতি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশন জানিয়েছে আইন অনুযায়ী কারও নামের আগে পদবি ব্যবহারের কোন বিধান নেই। শুধুমাত্র আদালতের রায় বিবেচনায় উচ্চ আদালতের বিচারকের ক্ষেত্রে এ বিধান চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অথবা উচ্চ আদালতে কর্মরত কোন বিচারক পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করলে তাদের ক্ষেত্রেও পদবী যুক্ত করা হবে। কমিশন জানিয়েছে রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োজিত ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করার নির্দেশনা থাকায় তা প্রতিপালন করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১১ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ উচ্চ আদালতের বিচারকদের নামের আগে বিচারক পদবি ব্যবহারের জন্য আদালতে একটি রিট দায়ের করেন। এ রিটের পরে আদালত পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নামের আগে কেন টাইটেল (পদবি) ব্যবহার করা হয় না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করে। একই সঙ্গে রুলের নিষ্পত্তির আগে বিচারপতিদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হলে তাতে পদবি ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়। জানা গেছে, কোর্টের এ রায়ের পর তিন মাস আগে এ রায় ও আদেশের কপি, পাসপোর্টের কপিসহ বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও নাঈমা হায়দার তাদের নামের আগে পদবি যুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। তাদের সঙ্গে আবেদন করেন মির্জা হোসেইন হায়দারের স্ত্রী সাদিয়া রওশন জাহান হায়দার। তাঁর আবেদনে স্বামীর নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করার কথা বলা হয়। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নামের আগে বিচারপতি যুক্ত করতে পরিচয়পত্র সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগকে। কমিশন জানিয়েছে, ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের পর বিদ্যমান আইনে কারও নামের আগে-পরে পদবি ব্যবহারের সুযোগ নেই। বিদ্যমান আইনে ‘নাম’ এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, জন্ম নিবন্ধন সনদ বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সনদের ভিত্তিতে ভোটারের নাম হবে। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময়ও সাধারণভাবে নামের আগে পরে পদবি-পরিচয় গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যদিও সে সময় নামের আগে পদ-পদবি গ্রহণ না করার পক্ষে কোন আইন ছিল না। তবে তখন কিছু ক্ষেত্রে নামের আগে পদবি-পরিচয় গ্রহণ করার ঘটনাও ঘটে। সে সময় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ নামের আগে অধ্যাপক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ নামের আগে ডক্টর যুক্ত রেখেই ভোটার হয়েছিলেন। জাতীয় সংসদের সদস্যদের অনেকে এ ধরনের পদবি-পরিচয়যুক্ত নামে ভোটার হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের আগে নামের আগে-পরে বিচারপতি, ব্যারিস্টার, এ্যাডভোকেট, প্রকৌশলী, ডাক্তার, ডক্টর, অধ্যাপক, সামরিক পদবি, যুদ্ধের খেতাব, আলহাজ, মাওলানা, হাফেজ এসব পদবি-পরিচয় গ্রহণযোগ্য না করার বিধান রাখা হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে শুধুমাত্র উচ্চ আদালতের বিচারকরা তাদের নামের আগে বিচারক যুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আদালতের রায় ও ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তিনজনের পরিচয়পত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে অন্য কোন পেশার নাগরিকদের পদবি যোগ করার সুযোগ এতে নেই। তিনি জানান, জন্মের সময় যে নাম থাকবে তা-ই বহাল হয় তার সনদে। পদবি যোগ হয় পরে। উপাধি বা পেশা কখনও নামের অংশ হতে পারে না। পেশার পরিচিতি তথ্যভা-ারে রয়েছেই। নির্ধারিত পরিচিতি নম্বরে বা স্মার্টকার্ডে বারকোডে তা সংরক্ষিত থাকবে। পরিচয়পত্রে দৃশ্যমান থাকবে না। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভোটার নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের সময় সরকারী চাকরি, বেসরকারী চাকরি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসা, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র/ছাত্রী, গৃহিনী, দিনমজুর, বিচারক, ঠিকাদার, ড্রাইভার, নার্স, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরিজীবীসহ অন্তত ৪০টি পেশার ঘর রয়েছে ফরমে। কিন্তু নামের আগে পরিচয়পত্রে এসব পেশা যোগ করা হয় না। আলাদা পেশার ঘরেই কারও পদবী উল্লেখ করা হয়।
×