ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ জুন ২০১৫

খোশ আমদেদ  মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ নবীজী হযরত মুহম্মদ (সা) বলেছেন, আউয়ালুহু রাহমাহ, ওয়া আওসাতুহু মাগফিরাহ, ওয়া আখিরুহু ইতকুন মিনান্নার অর্থাৎ, মাহে রমজানের ১ম দশক রহমতের, ২য় দশক মাগফিরাতের আর শেষ দশক নাজাতের সুসংবাদবাহী। আজ মাহে রমজানের ৯ম দিবস। আগামীকাল হারাতে বসেছি রহমতের ১ম দশকটি। তাই আমাদের দৃঢ় মনোবলে সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। রমজান মাস সংযমের মাস। বরকতের মাস। প্রবৃত্তিকে দমন করার মাস। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যখন রমজানের আগমন ঘটে, তখন বেহেস্তের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ এ একটি মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে সীমাহীন অগ্রগতি লাভ করেন, অপশক্তির হামলা থেকে আত্মার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে লোভ-লালসা থেকে দূরে থেকে ইমানকে সজীব রাখা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ কারণেই মুসলমানদের জন্য রোজার মাসে রোজা ফরজ করেছেন। কিন্তু রমজান এলেই দেখা যায়, দিবাভাগে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা থেকে যে বিরতি পালন করা হয়, ইফতার এবং ইফতারের পর রাতে তা যেন সুদে আসলে উসুল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সারাদিন উপবাসের পর ইফতার এবং রাতে খেতে হবে এবং সূর্যাস্তের পর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন বাধাও নেই। কিন্তু সবকিছু যেমন সীমার ভেতর থেকে করতে হয়, তেমনি রোজা ভঙ্গ করার পরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কিছুটা সংযম পালন করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়। এটি ইসলামের শিক্ষা এবং মাহে রমজানের সিয়াম সাধনারও মর্ম। কেননা সবার জানা আছে যে, মাছ এবং তরিতরকারি ছাড়া চাল, ডাল, গোশত, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রী আমদানি করতে হয়। নিজস্ব সম্পদ থেকে যে আমদানির কাজটা সমাধা হয় না, এ কথাও বলা বাহুল্য। অনেক প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ কাটছাট করে খাদ্য সামগ্রী আমদানির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। এ অবস্থায় বেহিসেবী খাদ্য গ্রহণ করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। তবুও দেখা যায়, রমজান মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে এক শ্রেণীর লোক বেহিসেবী হয়ে ওঠেন। এই বেহিসেবীপনার প্রক্রিয়া দেখা যায় বাজারে সব কিছুর দাম থাকে অসহনীয় উর্ধগতি, সক্রিয় হয় ভেজালকারী ও কালোবাজারি মজুতদাররা। রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেন কোন বাঁধনই মানতে চায় না। এক লাফে আকাশে চড়ে বসার মওকা ছাড়তে চায় না কোন খাদ্য বস্তুই। পাশাপাশি জামা কাপড়সহ অন্যান্য পণ্যও তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম চড়াতে থাকে। মাহে রমজানে কেন এ সামাজিক দূরবস্থা! অথচ রমজানে এমন হওয়া কাম্য ছিল না। রমজান এসেছে শুদ্ধির জন্য, পরম সাম্য সুন্দর ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই রোজাদারকে সে ট্রেনিংয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। আর যারা এ মৌসুমে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করে ইবাদত ও ইবাদতকারীর শান্তি বিঘিœত করে তারা কখনও দুনিয়া আখিরাতে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পাবে না। যদিও তারা মনে করছে তারা খুবই চালাক এবং লাভবান। হুজুর আকরাম (সা) বলেই ফেলেছেন : মান গাস্সা ফালাইছা মিন্না- যে বা যারা প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত হতে পারে না।’ আমাদের দেশের জনগণের ৮৫ ভাগ মুসলমান। সে হিসেবে ব্যবসায়ীও প্রচুর। মুসলিম ব্যবসায়ীরা যদি সততার সঙ্গে মাহে রমজানের সম্মান ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখাপূর্বক ব্যবসাবাণিজ্য করতেন, আল্লাহ তাতে বরকত দিতেন সন্দেহ নেই। কিন্তু মাহে রমজানে রোজাদারদের চাহিদাকে পুঁজি করে আমাদের কতিপয় ব্যবসায়ী অবৈধ মালামালা স্টক করত কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে রাতারাতি অঢেল পয়সা হাতিয়ে নেয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী আহার্য পানীয় ভেজাল করে অতিরিক্ত মুনাফা ঘরে তোলে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনে ছড়িয়ে দেয় নানা রোগ শোক, অপবিত্রতা। এটা কখনও সিয়ামের মাসের শিক্ষা ও মুসলমানের চরিত্র হতে পারে না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব ঠকবাজ ব্যবসায়ীরাই আবার বড়সড় আনুষ্ঠানিকতা করে যাকাত দেয়, কেউ কেউ রমজানের প্রাথমিক ইনকাম থেকে শেষের দিকে উমরাও সেরে আসে। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এমন চরিত্রের লোকগুলো সত্যিই মনুষ্যত্বহীন এবং ইমানহারা। যারা স্বজাতির পুণ্যের মৌসুমে দুর্গতি সৃষ্টি করে আনন্দ পায় মনে রাখতে হবে তাদের সে আনন্দ কখনও দীর্ঘস্থায়ী নয়। পরিণতির জন্য এসব কথিত মুসলমানদের অবশ্যই দুনিয়া আখিরাতে অপেক্ষা করতে হবে।
×