ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ জুন ২০১৫

বিদেশী বিনিয়োগ

বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিদেশী বিনিয়োগ বাড়লেও ২০১৪ সালে কমেছে ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এফডিআই কমলেও নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষণ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাড প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের এফডিআই বেড়েছিল ২৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা চালানো হয় তা বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। সে সময় হতে বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংস তৎপরতা চালিয়ে শুধু দেশের সম্পদেরই ক্ষতি করেনি, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী বৈদেশিক বিনিয়োগকে অনেকাংশে নিরুৎসাহিত করেছে। তাদের নাশকতামূলক কর্মকা- ও অরাজকতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসেও। হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা, নাশকতা, পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছে দেশজুড়ে। সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ১৫৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে তা কমে হয়েছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব পুঁজি ছিল ২৮ কোটি ডলার। ৪২ শতাংশ বেড়ে মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে ৯৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। বিনিয়োগ বোর্ড বলছে, এই তথ্য বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিদেশীদের আস্থা প্রমাণ করে। এছাড়া আন্তঃকোম্পানি ঋণ এসেছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বিদেশী বিনিয়োগ বেশি হয়েছে শিল্প খাতে। এর পরে রয়েছে পরিবহন, যোগাযোগ ও সেবা খাত। ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সস্তায় শ্রম পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। জিএসপি সুবিধাও এক্ষেত্রে একটি বাড়তি বিবেচনা। অবকাঠামো ও বিদ্যুত সমস্যার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তুলনামূলকভাবে এখন ভাল। তারপরও বিদেশী বিনিয়োগ কেন কমছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। চলতি বছর কেন বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, তার কার্যকারণ জানা জরুরী। জাপানের বিনিয়োগকারীদের সংগঠন জেট্রোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের সমস্যা শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৩টি বাধা রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। দুর্নীতি আর অগণতান্ত্রিক জটিলতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি না পেলে বিদেশীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট হওয়ার কোন কারণ নেই। বিনিয়োগ বোর্ড অবশ্য দাবি করছে, বিদেশী বিনিয়োগের নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনেক সহজ করা হয়েছে। তারপরও কেন বিনিয়োগ কমেছে তা তাদের বোধগম্য নয়। কিন্তু সাধারণ চোখে এটা পরিষ্কার যে, বিনিয়োগকারীদের নানা দফতরে ঘুরতে ঘুরতে দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে দিতে উৎসাহ স্তিমিত হয়ে আসে। অন্যান্য দেশের মতো ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ চালু ও কার্যকর করা না গেলে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ঢাকঢোল পেটানোর আয়োজন সবই বৃথা। এতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে বিনিয়োগ। যেভাবেই হোক তা বাড়াতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অগ্রগতির পথে দেশকে নিতে হলে বিনিয়োগ খাত নিয়ে পরিকল্পনা জরুরী।
×