ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও বাফুফেকে দিতে হলো আর্থিক দণ্ড!

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জুন ২০১৫

তবুও বাফুফেকে দিতে  হলো আর্থিক দণ্ড!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক দীর্ঘসূত্রিতা আর জটিলতার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবশেষে ঢাকার কমলাপুরে অবস্থিত শহীদ সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে পৌঁছেছে ফিফার কাছ থেকে অনুদানে পাওয়া বহুল আলোচিত আর্টিফিসিয়াল টার্ফ, যার জন্য তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষায় ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টার্ফ খালাস করতে না পারায় বাফুফেকে জরিমানা গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এদিকে ফিফার কাছ থেকে আরও দুটি টার্ফ বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অসহযোগিতামূলক আচরণে ব্যাহত হচ্ছে এর কার্যক্রম। ফিফা গোল প্রজেক্ট-৪ এর আওতায় ২০১৪ সালের নবেম্বরে কমলাপুরের এই স্টেডিয়ামে শুরু হয় টার্ফ বসানোর কাজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে দুই কন্টেনার টার্ফ। ফেব্রুয়ারিতে কমলাপুর ডিপোতে এসে পৌঁছায় টার্ফের সাতটি কন্টেনার। এই টার্ফের বর্তমান বাজার মূল্য ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। তবে রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে টার্ফ খালাস করতে ব্যর্থ হয় দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফে। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে রাজস্ব ছাড়াই গত ২৭ মে টার্ফ খালাসের ছাড়পত্র দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় মওকুফ হয় পোর্ট চার্জ। ফলে কমলাপুর ডিপো থেকে চারটি ও চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা দুই কন্টেনার টার্ফ খালাস হলেও নির্ধারিত সময় পার হওয়ায় বাফুফেকে জরিমানা গুনতে হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ। এরই মধ্যে কমলাপুর থেকে টার্ফের দুই কন্টেনার মালামাল খালাস করা হয়েছে। বাকি পাঁচ কন্টেনার খালাসের অপেক্ষায় আছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন আটকে থাকা টার্ফটি অবশেষে শুল্ক বিভাগ বিনা শুল্কেই ছাড়তে রাজি হয়, ফলে বুধবার সন্ধ্যায় সড়কপথে এই টার্ফ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা ছাড়িয়ে নেয় বাফুফে। টার্ফের চালানের প্রথম অংশ বুঝে নেয়ার পর বাকি অংশ স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে বাফুফে। জরিমানা দেয়া প্রসঙ্গে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল টার্ফের জন্য ৯ কন্টেনারের যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেই ক্ষতিপূরণের ২০ শতাংশ মওকুফ হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল টার্ফের জিনিসগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর হয়ে স্টেডিয়ামে আসতে বাফুফেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।’ এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করতে পারলে বাফুফেকে আরও দুটো টার্ফ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফিফা। সিলেটে অবস্থিত বাফুফে একাডেমি মাঠে বাফুফে টার্ফ বসানোর উদ্যোগ নিলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিষয়টি এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে। আগামী ১ জুলাই ফিফা প্রতিনিধি মার্কোস কেলারের পরিদর্শনের পর কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের টার্ফ বসানোর কাজ। বেশ কিছুদিন আগে কমলাপুর স্টেডিয়ামের জন্য একটি সিনথেটিক টার্ফ চেয়ে ফিফার কাছে আবেদন করেছিল বাফুফে। গত বছর ফিফা তা অনুমোদন করে। তবে টার্ফ পেতে ও স্থাপিত হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এ বছরেই টার্ফটি স্থাপিত হবে এবং ব্যবহারও শুরু হবে এ বছরেই। উল্লেখ্য, টার্ফটির আয়তন হবে ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬৮ মিটার প্রস্থ, যা ফিফার বেঁধে দেয়া পরিমাপ। কমলাপুরে টার্ফ স্থাপিত হলে এটি কোন্ মানের টার্ফÑ এটা নিরূপন করতে ফিফার একটি বিশেষ পরিদর্শক দল আসবে, তারা যাচাই করে রায় দেবে, এটা টপ কোয়ালিটি টার্ফ কি না। উল্লেখ্য, কমলাপুর স্টেডিয়ামটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতায়। তাই টার্ফ বসানোর জন্য এনএসসির কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য এ স্টেডিয়ামটি লিজ নিতে হয়েছে বাফুফেকে। এ নিয়ে বাফুফে ও এনএসসির মধ্যে একটি চুক্তিও হয় কিছুদিন আগে। চুক্তিপত্র ফিফার কাছে পাঠানোর পরই তারা তা দেখে বাফুফেকে টার্ফ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সাধারণত ফেডারেশনের নিজস্ব মালিকানার মাঠ না হলে ফিফা টার্ফ দেয় না। ফিফা গোল প্রজেক্ট-৪ এর অধীনে এ টার্ফ পায় বাফুফে। এটি হবে দেশের ফুটবলে দ্বিতীয় সিনথেটিক টার্ফ। প্রথমটি বসানো হয়েছিল বাফুফে ভবন সংলগ্ন আরামবাগ বালুর মাঠে। তবে এনএসসি বাফুফেকে মাঠটি প্রথমে ২০ বছরের জন্য দিতে রাজি হয়নি। অনুমোদন করে ১০ বছরের জন্য। কিন্তু ফিফা এতে বাদ সাধলে ও বাফুফের চাপ ও যুক্তির কাছে হার মানে এনএসসি। কমলাপুর স্টেডিয়ামে মাঠের পুরো অংশে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ বসাতে ফিফার ব্যয় হবে প্রায় ৭ লাখ ডলার। উল্লেখ্য, গোল প্রজেক্ট-১-এর আওতায় ২০০০ সালে মতিঝিলে বাফুফে ভবন নির্মাণ হয়। গোল প্রজেক্ট-২-এ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যয়ে বাফুফে ভবনসংলগ্ন মাঠে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ স্থাপন করে দেয় ফিফা। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে কতটা ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে ফিফা থেকে পাওয়া কমলাপুরের এই কৃত্রিম ঘাসের মাঠ।
×