ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্ত্রী নির্যাতন মামলায় স্বামী মুকুল গ্রেফতার, রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৮ জুন ২০১৫

স্ত্রী নির্যাতন মামলায় স্বামী মুকুল গ্রেফতার, রিমান্ডে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ স্ত্রী নির্যাতনের মামলায় জি টিভির বার্তা সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মুকুলকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলার অপর আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, পরকীয়া, স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির টাকায় কেনা সরকারী প্লট গোপনে বিক্রি করে দেয়াসহ বিস্তর অভিযোগ করেছেন স্ত্রী দৈনিক জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার তন্বী (৩৭)। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ত্রী নাজনীন আখতার মিরপুর মডেল থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন সেগুনবাগিচা জিটিভি কার্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে মিরপুর থানা পুলিশ মুকুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে শাহবাগ থানা পুলিশ মিরপুর থানা পুলিশকে সার্বিক সহযোগিতা করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জনকণ্ঠকে জানান, নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়েরকৃত ওই মামলায় মুকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার আরেক আসামি মুকুলের পরকীয়া প্রেমিকা ঢাকা ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার রাজিউল আমীনের স্ত্রী মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথি। তিনি ছায়ানটের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মুকুলকে শনিবার দুপুরের পর ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করা হয়। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, মুকুলকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম অমিত কুমার দের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত মুকুলের জামিনের আবেদন নাকচ করে একদিনের রিমান্ডে পাঠায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ আরও জানান, আসামিকে মিরপুর থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মুকুলের বিরুদ্ধে স্ত্রীর আনীত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেও জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি জানান, মামলার পরপরই রাতে তদন্তে বনশ্রীর একটি বাসায় এক বছর ধরে মুকুল ও সিঁথির লিভ টুগেদারের সত্যতা পাওয়া গেছে। তারা দিনের বেলা এক সঙ্গে থাকতেন এবং রাতে যার যার বাসায় চলে যেতেন। ওই বাসার দারোয়ান জানিয়েছেন, মুকুল ও সিঁথি দুই মাস আগে ওই বাসা ছেড়ে বনশ্রীতেই একটি নতুন বাসা নিয়েছেন। কর্মকর্তা জানান, মামলাটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে। পাশাপাশি আসামিকে স্ত্রী নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নাজনীন আখতার জানান, একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখীর যকৃত অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চন্দ্রমুখী মারা যায়। মেয়ের শোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শেই আবার তাঁরা সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক তার গর্ভে সন্তানও আসে। এদিকে দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালে থাকার সুযোগে মুকুল মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস নামে এক নারীর সঙ্গে প্রেম থেকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। এসব বিষয়ে কথা বললে মুকুল তাকে শারীরিকভাবে মারাত্মক নির্যাতন চালাত। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও মুকুল তাকে শারীরিকভাবে বহুবার নানাভাবে নির্যাতন করেছে। একদিন মারতে মারতে প্রায় অজ্ঞান করে ফেলে তাকে। খবর পেয়ে সহকর্মীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর কিছুদিন পরেই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর থেকে কখনই মুকুল স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ নেয়নি। নাজনীন আরও জানান, একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্লটটি বিক্রি করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে বাঁধা দেয় মুকুল। মেয়ের চিকিৎসায় প্লট বিক্রি করেনি অথচ এক নারীর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার পর প্লটটি বিক্রি করে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মুকুল তাঁর কাছ থেকে প্রচুর টাকাও নিয়েছে। জনকণ্ঠ অফিস থেকে তাকে নিয়মিত বেতন দেয়া হতো। সেই টাকা থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা মুকুল এটিএম কার্ডের মাধ্যমে তাকে না জানিয়ে তুলে নেন। প্রসঙ্গত, মুকুল তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির টাকায় রাজউকের পূর্বাচলের একটি প্লট পান। সর্বশেষ প্লটের কিস্তির জন্য মুকুল তার কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেয়। এমনকি সম্প্রতি সেই প্লটটি ২ কোটি টাকারও বেশি দামে বিক্রিও করে দেয়। পরকীয়া প্রেমে পড়ে প্লটটি বিক্রি করে দেয় বলে নাজনীনের অভিযোগ। প্লট বিক্রির সঙ্গে ওই নারীর যোগসাজশ থাকতে পারে। এসব বিষয়ে কথা বললে তাকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করত মুকুল। মুকুল প্লট বিক্রির টাকা থেকে ওই নারীকে ১০ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে দিয়েছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতদিন মামলা না করার বিষয়ে নাজনীন আখতার জানান, সবার পরামর্শে ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিল হবে এমন আশায় এতদিন মামলা করেননি। কিন্তু এখন মামলা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। তিনি স্বামী কর্তৃক যে অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তিনি তার ন্যায় বিচার দাবি করেন। জানা গেছে, নাজনীন অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই একটি বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ওয়ারির ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল শাখার শিক্ষিকা ছিলেন মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথির সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে ওঠে মুকুলের। সিঁথির সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে অবৈধভাবে একত্রে বসবাস করে আসছিল মুকুল। মুকুল রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সিঁথির সঙ্গে অবৈধভাবে মিলিত হতে থাকে। আগাগোড়াই মুকুল স্বার্থপর। সাংবাদিকতার শুরু থেকেই নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়াদিতে ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে মুকুলের। তার বিরুদ্ধে শুধু সিঁথি নয় আরও দুই মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পক থাকার বিষয়ে পুলিশের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে বলে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সূত্র জানায়। স্বামীর পরকীয়া এবং মাদক সেবনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বহুবার নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে নাজনীন আখতার তন্বী। শেষ পর্যন্ত মুকুলের নির্যাতন সইতে না পেরে এবং সাত মাসের মেয়ে ও নিজের জীবননাশের আশঙ্কায় নাজনীন বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নেন।
×