ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

তদন্তে মন্থর গতির জন্য মামলা আসছে কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৮ জুন ২০১৫

তদন্তে মন্থর গতির জন্য মামলা আসছে কম

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের তদন্ত কাজ মন্থর গতিতে চলছে। তদন্তের কাজ মন্থর গতিতে চলার কারণে ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা কম আসছে। অন্যদিকে মামলার তদন্ত কাজে বড় ধরনের অভিযোগ এসেছে। ট্রাইব্যুনালের হাতে একটি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে তদন্ত সংস্থা তদন্ত না করে আসামিকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ অভিযোগ এখন পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনে আসেনি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, তদন্ত কাজে কোন মন্থর গতি নেই। আমরা নিয়ম মাফিক কাজ করে যাচ্ছি। কিছু লোকবলের অভাব রয়েছে। ঈদের আগে কয়েকটি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব বলে আশা করছি। আর যারা ট্রাইব্যুনালে তদন্ত কাজের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন, সে ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আসলে অবশ্যই এ বিষয়ে তদন্ত করব। অন্যদিকে প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে মামলা করতে গিয়ে বেশ কিছু নতুন বিষয় মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সে কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ ৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনার রাজাকার কামান্ডার মোঃ ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বাদবাকি ৬টি মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে শরীয়তপুরের দুইজন আসামির মধ্যে সোলায়মান নামে একজন গ্রেফতার হয়েছে। জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও মাত্র ২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। যশোরের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও ৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের ৫ জনের মধ্যে ১ জন, মহেশখালীতে ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন, হবিগঞ্জে ৩ জনের মধ্যে ৩ জনই গ্রেফতার হয়েছেন। এই মামলাগুলোর এখন তদন্ত চলছে। এছাড়া পটুযাখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিক ও বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরামের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। যে কোন দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত দুইটি ট্রাইব্যুনালে মোট ১৯টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, মামলা করতে গিয়ে তাদের কিছু কিছু নতুন বিষয় মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যে কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, তদন্ত সংস্থা থেকে রিপোর্ট পাবার পর প্রথমে আমাদের তা যাচাই-বছাই করতে হয়। সাক্ষী, ঘটনাস্থল ও ভিকটিমদের সঙ্গে পুনরায় আমরা কথা বলে দেখি মাঠ পর্যায়ে থেকে যে রিপোর্ট আসছে তার সঙ্গে এর সামজ্ঞস্য আছে কিনা। দ্বিতীয়ত. অনেক তদন্তে দেখা গেছে একাধিক ব্যক্তি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, কিন্তু অভিযোগে এসেছে একজনের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো আবার খুঁটিয়ে দেখতে হয়। যার কারণেই মামলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে যে অভিযোগ এসেছে, এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশনের কাছে সেই অভিযোগ আসেনি। আসলে অবশ্যই প্রসিকিউশন তা খতিয়ে দেখবে। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে বলেছেন, সেটা অবশ্যই আমাদের স্মরণে আছে। ট্রাইব্যুনাল বলার পর আমরাও চেষ্টা করছি প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য। উল্লেখ্য, যে দিন বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়, ওইদিন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছিলেন, তাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সংস্থা দেড় বছর আগে একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করে উল্টো ওই আসামিকে সীমান্ত পার করে দিয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। ওইদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেনও জানান ট্রাইব্যুনাল এমন কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থার প্রধান এম এ হান্নান খান জনকণ্ঠকে বলেছেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আসলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত সংস্থা তদন্তে মন্থর গতি নেই এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থার অনেক কর্মকর্তা পদন্নোতি পেয়ে বদলি হয়ে গেছেন। আবার অনেকে অবসরে গেছেন। যে কারণে এখনও তাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। ৫-৭ জন কর্মকর্তা আসলে মামলা তদন্ত আরও গতি পাবে। এর আগে যে সমস্ত মামলার রায় হয়েছে তাদের মধ্যে যে সব আসামি পলাতক রয়েছেন আবার যে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে এর মধ্যে অনেক আসামি পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্য মনিটরিং সেলের কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি আছে বলে তিনি জানান। ১৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সকল আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে সরকারকে মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সে অনুযায়ী মনিটরিং সেলের কাজ চলছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে আরও জানা গেছে, ঈদের আগেই তারা মহেশখালীর মামলার প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করছেন। ওই মামলার আসামির সংখ্যা বড়াতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও দুই ডজন মামলার তদন্ত কাজ চলছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংস্থার কাছে ৫৮৫টি অভিযোগের মধ্যে আসামির সংখ্যা রয়েছে ৩২৩৯ জন। এ অভিযোগ থেকে যে মামলাগুলোর গুরুত্ব বেশি সেগুলোর তদন্ত কাজ হাতে নেয়া হচ্ছে।
×