ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু ৩৩৩ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৯ জুন ২০১৫

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু ৩৩৩ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

তৌহিদুর রহমান ॥ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে সমুদ্রপথে পাচার হওয়া বাংলাদেশীরা ধীরে ধীরে ফিরে আসছেন। ইতোমধ্যেই এই চার দেশ থেকে ৩৩৩ নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এসব দেশে দুই হাজার ৪০৩ বাংলাদেশীকে নাগরিককে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আটকেপড়া সকল বাংলাদেশীকেই ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। সমুদ্রপথে পাচার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৭৩৮, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৮১, মিয়ানমারে ৬৯৭ ও থাইল্যান্ডে ১৮৭ নাগরিককে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে ৫২, ইন্দোনেশিয়া থেকে ৯০, থাইল্যান্ড থেকে ৪, মিয়ানমার থেকে ১৮৭ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আজ সোমবারও ইন্দোনেশিয়া থেকে আটকেপড়া কয়েকজনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চার দেশে আটকেপড়া নাগরিককে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকভাবে এসব নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এসব নাগরিকের মধ্যে বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অন্য কোন দেশের নাগরিক হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না। সূত্র জানায়, আটকেপড়া নাগরিকদের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না সরকার। কেননা এসব নাগরিকের মধ্যে মিয়ানমারের নাগরিকও রয়েছেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সে দেশের। সেজন্য এসব নাগরিকের নাম ঠিকানা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফিরিয়ে আনতে চায় সরকার। সূত্র জানায়, চার দেশে আটকেপড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখন কাজ চলছে। পরিচয় শনাক্তের পর ধীরে ধীরে এসব নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব দেশ থেকে ৩৩৩ নাগরিককে ফিরিয়ে আনাও হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব নাগরিকদের বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করা হলেও তাদের পরিচয় চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরই ফিরিয়ে আনা হবে। তবে অন্য কোন দেশে সমস্যা না হলেও মিয়ানমারে আটকেপড়া নাগরিকদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্র থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ৬৯৭ বাংলাদেশী নাগরিককে উদ্ধার করে তাদের আশ্রয়ে রেখেছে। এসব নাগরিকের মধ্যে প্রথম দফায় ১৫০ ও দ্বিতীয় দফায় ৩৭ মোট ১৮৭ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন দেশটির আশ্রয়ে প্রায় ৫১০ নাগরিক রয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে এসব নাগরিককে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব নাগরিকের নাম, পরিচয়, ঠিকানা জেনে বাংলাদেশী নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফেরত আনা হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে নৌপথে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসে। থাইল্যান্ডের গহিন অরণ্যে শত শত গণকবর পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অভিবাসন সমস্যা সমাধানে চাপ দেয়। প্রথমদিকে রাজি না হলেও আন্তর্জাতিক চাপে সাগরে ভাসমান হাজার হাজার অভিবাসীকে উদ্ধারে তৎপর হয় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এদিকে সমুদ্রপথ দিয়ে পাচার হওয়া বাংলাদেশী নাগরিকদের ফেরাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পাচার হওয়া এসব নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর মিয়ানমারের উদ্দেশে কোন নাগরিক সেদেশে না গেলেও সমুদ্র থেকে মিয়ানমার এসব নাগরিককে উদ্ধার করে তাদের আশ্রয়ে রেখেছে। গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগর হয়ে আন্দামান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল সাগর এলাকায় অবৈধ পথে অভিবাসী প্রত্যাশীদের গমনাগমন চলে আসছে। এসব অভিবাসীর বেশিরভাগ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে রোহিঙ্গারা দেশান্তরী হচ্ছে। আর এদের সঙ্গে অধিক উপার্জনের আশায় যোগ দিয়েছে কিছু বাংলাদেশী। গত ১ মে থাইল্যান্ডের শৃঙ্খলা প্রদেশে অভিবাসীদের বন্দীশিবির ও গণকবরের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ২ মে থেকে শুরু হয় পুলিশ ও সেনা অভিযান। এ অভিযানের সত্যতা মিললে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। থাইল্যান্ডে গণকবর ও বন্দীশিবির উদ্ধার তৎপরতা চলা অবস্থায় গত ২৩ মে মালয়েশিয়ার পেরলিস প্রদেশে আবিষ্কৃত হয় গণকবর ও বন্দীশিবির। সেখানে মোট লাশ পাওয়া যায় ১৩৯। তখন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার তাদের স্ব স্ব জলসীমায় নৌ ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করলে হাজার হাজার অভিবাসী বোঝাই বিভিন্ন ধরনের নৌযান আন্দামান সাগরের মালাক্কা প্রণালীমুখী হয়। এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া সরকার এসব অভিবাসী বিতাড়নে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান প্রেরণের ঘোষণা দিলে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের পক্ষ থকে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকার তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে পিছুটান দেয়। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২ হাজার অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের আশ্রয় দেয়া হয়। থাইল্যান্ড উপকূলে দু’দফায় উদ্ধার হয় ৯৩৫ অভিবাসী প্রত্যাশী। এখন সেখান থেকে বাংলাদেশীদের ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, সাগরে পাচার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোহিঙ্গা আর ৪০ শতাংশ বাংলাদেশী। তাদের শনাক্তের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কোন রোহিঙ্গাকে আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই না।
×