ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

কোন কোন সুশীলের আচরণ এরকম কেন!

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৯ জুন ২০১৫

কোন কোন সুশীলের আচরণ  এরকম কেন!

দেশে সুশীলসমাজ হিসাবে পরিচিত একটি মহল ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১’-এর অন্যতম প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে একটি উড়োচিঠি (!) দিয়েছে! দুঃখের বিষয় , এদের কেউ কেউ ’৭১-এ অসামান্য অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধা! আর যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, তাদের বাবা-মা মুক্তিযোদ্ধা! সর্বোপরি এরা সবাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান- এতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। কেন তাহলে এই ট্রাইব্যুনাল এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান এমন সুশীলসমাজ আকস্মিকভাবে কেন নিজেরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেল? পাঠকদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে যুক্ত জামায়াত নেতা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী নিজামীর বিচারের রায়ের ওপর ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান সমালোচনা করে এক নিবন্ধ লেখেন যা দেশের ও বিদেশের দুটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। সুশীলরা জানেন যে, আদালতের রায় সম্পর্কে সমালোচনা আদালত অবমাননার শামিল হয়। উপরন্তু বিষয়টি ছিল দীর্ঘকালের অসম্পন্ন, ’৭১-এর গণহত্যাকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়! দুই. ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত অসাধারণ পর্যবেক্ষণসমৃদ্ধ রায়ের এটি অন্যতম! প্রসঙ্গত, ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে আশির দশকে আমার আলাপ হয়েছিল। ’৭১-এর অনেক বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। যেহেতু আলবদরদের বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকায় থাকা আমার স্বামী ও পরিবারকে নিয়ে আমার প্রবল এক জেদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার থেকে ১২ ডিসেম্বর ভোরে দোহারের পথে যাত্রা করার কারণে তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন! ডেভিড খুঁটিয়ে সব ঘটনা জেনেছিলেন। আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পরে বিবিসির চ্যানেল ফোর-এ একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করেছিলেন যাতে ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে চৌধুরী মঈনুদ্দিন গং কর্তৃক ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি মানুষকে শিহরিত করেছিল! যে দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসে এবং কখনই ভুলব না। এর দীর্ঘ সময় পর আমরা, ’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যখন ২০০৮-এ যুদ্ধাপরাধমুক্ত সংসদের দাবি তুলে সত্তরের বেশি সংগঠনের সহযোগে সংসদ ভবন ঘেরাও কর্মসূচী সংগঠন করছিলাম, সে সময় দীর্ঘদিন পর ডেভিডকে দেখেছিলাম। এর প্রায় বছর দুয়েক পর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক আয়োজিত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ওর সঙ্গে আবার দেখা হয়। ওই কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা বিদেশীদের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট-৭৩’ ও যুদ্ধাপরাধীর মানবিক অধিকারের জন্য অতিরিক্ত মাথাব্যথা দেখে আমি ভিকটিম বা আহত, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তের মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করি। আরও উল্লেখ করি অপরাধীর চেয়ে ভিকটিমের মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার লাভ বেশি জরুরী। এরপর থেকে প্রায় সবাই ‘ভিকটিম’-এর প্রাপ্য ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা শুরু করে যেটি মানবতা, সভ্যতা রক্ষার্থে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। দেশে-বিদেশে আমাদের দেশীয় ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট-৭৩ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জামায়াত লবিস্ট নিয়োগ, প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এ আইনকে, বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার নানামুখী তৎপরতা, প্রচারণা পরিচালনা করে চলেছে। এই প্রচারণায় আমাকে বিস্মিত করে দেখা যাচ্ছে ডেভিড বার্গম্যান নিজেকে যে কোন কারণেই হোক যুক্ত করেছে! বার্গম্যানের ট্রাইব্যুনালের রায়বিরোধী বক্তব্যটিকে ট্রাইব্যুনাল অবমাননা গণ্য করে তাকে আদালতে হাজির করায় এবং যুক্তিতর্কের পর দণ্ড হিসেবে তাকে আদালতে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বার্গম্যানের এই শাস্তির বিরুদ্ধে সুশীল সমাজের ২৩ জন খ্যাতনামা ব্যক্তি সংবাদপত্রে লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন। এই বিবৃতি একই ভাবে একই আইনে আদালতের রায়ের বিরোধিতা হিসেবে আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হয়। ফলে রায়ের বিরোধিতাকারীর পক্ষ সমর্থন করে বিবৃতিদাতারা হয় আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে এ দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন অথবা আদালতের বিচার শেষে নির্ধারিত দণ্ড ভোগ করবেন- এমনই আইনী ব্যবস্থা নির্ধারিত থাকে। ২৩ জনের অধিকাংশই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি নিয়েছেন। তবে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষমা চাননি। সুতরাং তিনি দণ্ড হিসেবে ধার্য এক ঘণ্টা আদালতে দাঁড়িয়ে থাকা ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার দণ্ডের অর্ধেক অর্থাৎ এক ঘণ্টা আদালতে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড ভোগ করে ক্ষিপ্ত হয়ে সদলে আদালত থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলছিলেন, ‘ওই জরিমানা আমি দেব না, বরং আপীল বিভাগে আপীল করব।’ ডাঃ জাফরুল্লাহসহ যে ২৩ জন আদালত অবমাননার দায়ে পড়েছিলেন, তাঁরা নিজেরা উচ্চশিক্ষিত, আদালতের রীতি-আইন সম্বন্ধে অবহিত এবং এটিও জানেন যে, দেশের কোন নাগরিকই আইনের উর্ধে নন। তার ওপর ডাঃ জাফরুল্লাহকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার শুধু নয়, স্বাধীনতার পর দরিদ্রদের জন্য কম মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যবীমা প্রদানের লক্ষ্যে ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ গড়ে তোলা, ‘গণবিশ্ববিদ্যালয়’ গড়ে তোলা, ওষুধনীতি প্রণয়নের জন্য দেশের একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। অন্য ব্যক্তিরাও উচ্চশিক্ষিত। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি দুঃখ বোধ করছি এজন্য যে, এই স্বনামখ্যাত মুক্তিযোদ্ধারা এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থীরা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দাবি তুলতে, সাক্ষীপ্রমাণ যোগানোর জন্য, যুদ্ধাপরাধীদের অজানা নানাবিধ অপরাধ প্রকাশ করার জন্য, সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজ না করে, আইনমন্ত্রী ও সরকারের কাছে দাবি না তুলে ’৭১-এর ঘৃণ্য গণহত্যাকারীর পক্ষ সমর্থনকারীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করলেন কেন? এতে তো আমাদের মুখে যুদ্ধাপরাধীর ছুড়ে দেয়া লজ্জা আমাদের আরও অধোবদন করে! হায়! এ দেশের যুদ্ধাপরাধীরা শেষ হলো না! বরং নতুন জঙ্গী তৈরি হচ্ছে। তারা আমাদের তরুণ ব্লগার হত্যা শুরু করে নতুন যুগের নতুন আলবদর হয়ে ক্ষমতা দেখাচ্ছে, অথচ অপরদিকে আমাদের আপনজন মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধপন্থীরা পরোক্ষভাবে রাজাকারপন্থী হয়ে পড়ছেন! এর চেয়ে বড় ক্ষতি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য আর কী হতে পারে? তাছাড়া বার্গম্যানের আমাদের দেশের ’৭১-এর গণহত্যাকারী, ধর্ষকদের বিচারের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল ও এর রায় সম্পর্কে প্রদত্ত মন্তব্য যা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল যদি তা ‘অবমাননা’ গণ্য নাও করত, তাহলেও তার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের অবস্থান গ্রহণ করে তাঁরা নিজেদের সম্মানহানির কারণ নিজেরাই ঘটিয়েছেন! আদালতে এক ঘণ্টা দাঁড়ানো এ হিসেবে তুলনীয় কোন দণ্ড নয়। আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না যে, আমরা নিজেরাই নিজেদের অবমাননা করি, জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজ করি। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সমালোচককে সমর্থন করা এক অর্থে কি যুদ্ধাপরাধীকে সমর্থন করায় রূপান্তরিত হয়ে ওঠে না? সেটি কেন আমরা করব? কেন আমরা গণহত্যা, হত্যার ‘ভিকটিম’-এর মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের অধিকারকে ভুলে যাব? এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে হুমকি দিয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তা তো এককথায় বালখিল্যতায় পরিপূর্ণ। একে এটি হাতে লিখিত, তার ওপর তারিখও রয়েছে, সর্বোপরি ক্রোধ ও বোকামির চূড়ান্ত করে লেখক চিঠিতে তুরিনকে অশ্লীল, অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে গিয়ে চিঠিতে ড. আনু মুহাম্মদ ও ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামোল্লেখ করেছে! ফলে এটি না বললেও চলে যে, ওই চিঠির অশ্রাব্য, অশ্লীল গালিগালাজ এসে পড়েছে ড. আনু মুহাম্মদ ও ডাঃ জাফরুল্লাহর ওপর এবং এর ফলে আসলে তাঁরা দু’জনই কিন্তু অসম্মানিত হয়েছেন! পত্র-লেখক নিশ্চয়ই জানে যে, গালিগালাজ যাকে করা হয়, সে অসম্মানিত হয় না বরং যে বা যারা তাকে লক্ষ্য করে যেসব অশ্লীল গালিগালাজ করেছে, সেসব গালি পত্রলেখকের বিকৃত রুচি ও শ্লীলতার বোধহীনতা প্রমাণ করে তাকে এবং তাদের সবাইকে অসম্মানিত করেছে! দুঃখ হয় দেখে যে, সম্মানিত ব্যক্তিরা তুচ্ছ কারণে নিজেদের এভাবে অসম্মানিত করে সাধারণ মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের লজ্জিত করেছেন, যা কোনভাবেই কারও জন্য ভাল বা মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। বলতে পারি, আজ পর্যন্ত দেশের বিচার বিভাগে যে দু’জন নারী উচ্চশিক্ষিত ব্যারিস্টার হয়ে যে কোন পুরুষ আইনজীবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, জ্ঞান ও মেধার প্রমাণ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে আমার দেখা তানিয়া আমীর ও তুরিন আফরোজ উল্লেখযোগ্য। পত্রটিতে এত বেশি ব্যক্তিগত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে অশ্লীল বক্তব্য রয়েছে যে, এটি ধরে নেয়া যায় এ পত্র কোন ক্রুদ্ধ, অল্প বয়সীর হাতে লেখা! পত্রটিতে আশ্চর্যজনকভাবে তুরিন আফরোজের দ্বারা উপস্থাপিত কোন আইনী ব্যাখ্যা, মন্তব্য, বক্তব্য- ইত্যাদির প্রসঙ্গে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা নেই! তাহলে, বাঁশের কেল্লাওয়ালাদের সঙ্গে আমাদের উচ্চশিক্ষিত, উদার, মুক্তবুদ্ধির সুশীল সমাজের পার্থক্য কোথায় রইল? এটি ভাল করে ভেবে দেখতে হবে। বাঁশের কেল্লা সরাসরি হত্যার হুমকি দেয়, কে দেখতে কেমন এসবে ওদের বিশেষ কিছু এসে যায় না। তাদের এজেন্ডা একটাই, তাদের মতে বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তমনা ও তাদের দৃষ্টিতে ইসলামবিরোধীদের হত্যা করা। সত্যি, শেষ পর্যন্ত বার্গম্যানপ্রীতি সীমা ডিঙ্গাতে ডিঙ্গাতে একেবারে বাঁশের কেল্লার হুমকিপত্রকে অনুসরণ করে এই সুশীল গোষ্ঠীটি নিজেদের কত তুচ্ছ কারণে কত নিচে নামিয়ে ফেলল তা ভেবে অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছি। ডাঃ জাফরুল্লাহর কাছে আমি সব সময় ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতাবোধ করি। কেননা, আমার গৃহকর্মীদের যারা আগে ছিল, এখন যারা আছে, গাড়িচালক, সবার জন্য কম মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ব্যবস্থা করে দেয়ার সুযোগ পেয়েছি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নগর হাসপাতালে। সাভারেও গণবিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অপারেশন করে সুস্থ হয়ে ফিরেছে একজন। দেশীয়ভাবে ওষুধ তৈরি তো গণস্বাস্থ্য হাসপাতালই এ দেশে শুরু করেছিল, যে ওষুধগুলো অত্যন্ত মানসম্পন্ন। দেশে বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানি বন্ধ করতে তাঁর প্রণীত ওষুধনীতি ছিল যথার্থ। সম্ভবত সাধারণত কোন সরকারী পদক্ষেপের প্রতিবাদে সুশীলগোষ্ঠী যে সব সময় প্রতিবাদী বিবৃতি দেন, তার মধ্যে কী আছে, কী নেই, সেসব না পড়ে ফোনেই নাম নিয়ে নেয়ার প্রথাকে অনুসরণ করার কারণেই অনেকেই গভীরভাবে না ভেবে বিবৃতিটির স্বাক্ষরদাতা হয়েছেন! তবে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের সতর্ক থাকতে হবে যা কিছুই ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে যায়, সেসব থেকে তাঁরা যেন সতর্কভাবে দূরে থাকেন, সেটিই জাতি তাঁদের কাছ থেকে আশা করে। কোন মুক্তিযোদ্ধা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেন না যে, দীর্ঘকাল যাবত ক্ষমতায় থাকা ফুলেফেঁপে ওঠা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যা এতদিন অসম্ভব মনে হতো, এখন জনগণ, তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তিদক্ষ মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের প্রবল দাবিতে বর্তমান সরকার সেই ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করে বিচারটি শুরু করেছে দেশী-বিদেশী চক্রের তুমুল বিরুদ্ধতার মধ্যে! আমাদের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি টানব ’৭১-এর প্রতি জেলার প্রধান, নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কাক্সিক্ষত বিচারটি সম্পন্ন করে- এ বিষয়ে উক্ত সুশীলগোষ্ঠীর কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়, তাই নয় কি? আর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বলব, আমরা সবার কাছে কোন ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাইতে পারি, এমনকি সন্তানদের কাছেও। গৃহকর্মী, শ্রমজীবী, রিক্সাচালক, কুলি-মজুরদের কাছেও। সেক্ষেত্রে আদালতের কাছে ক্ষমা চাওয়া কি আমাদের সম্মানহানি করে? নিশ্চয়ই না। আমাদের প্রকৃত সম্মানহানি করেছে ওই ক্রোধ, গালিগালাজপূর্ণ পত্র, আদালতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সমালোচককে সমর্থন করে। তাই নয় কি? যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি থেকে আমরা কখনই সরতে পারি না। আমরা এমন পক্ষে অবস্থান নিতে পারি না, যা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীর অবস্থানকে মজবুত করে। আমরা তো সব সময় ভিকটিমের পক্ষেই অবস্থান নেব, তাই নয় কি? লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×