রহমান শোয়েব, চবি ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই যুগে লাশ হয়েছেন ১৯ শিক্ষার্থী। বিচার হয়নি একটিরও। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিক নির্যাতন এবং হুমকির ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য। কিন্তু অধিকাংশেরই হয়নি বিচার। গত কয়েক বছরে ঠুনকো বিষয় নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে শতাধিক। বিচার হয়নি অধিকাংশ ঘটনারই। গত ২২ মে দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে ব্যাপক লুটপাট হয় এ এফ রহমান হল ও আলাওল হলে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনারও কোন বিচার হয়নি। এমনকি চিহ্নিত করা যায়নি অপরাধীদেরও। আর এভাবেই একের পর এক চবিতে অপরাধ সংঘটিত হলেও বিচার হচ্ছে না অপরাধীদের। ফলে অপরাধীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া।
জানা যায়, চবিতে সহিংস রাজনীতির সূচনা জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাত ধরে। ১৯৮৮ সালের ২৮ এপ্রিল সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য নেতা আমিনুল ইসলামকে খুন করে চবির সবুজ ক্যাম্পাসকে প্রথমবারের মতো রক্তে রঞ্জিত করে এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। সেই থেকে শুরু। শিবিরের দেখিয়ে দেয়া পথ মাড়িয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই যুগে লাশের মিছিলে যোগ হয়েছে ১৯ শিক্ষার্থী। সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের কোন্দলের জেরে প্রাণ হারায় তাপস সরকার নামের ছাত্রলীগ কর্মী। অবাক ঠেকলেও সত্য, এসব ঘটনার একটিরও বিচারের নজির বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নেই। শুধু হত্যাকা-ই নয়। চবিতে ছাত্রলীগ বিভিন্ন গ্রুপ উপ-গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় প্রায়ই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায়ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। শিবিরের আধিপত্য থাকায় তাদের সঙ্গেও প্রতিপক্ষের সংঘর্ষ ঘটে হরহামেশাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাও অহরহ ঘটে। বিশেষ করে শাটল ট্রেনে বগি দখলের অপরাজনীতির শিকার হয়ে প্রতিদিনই লাঞ্ছিত হচ্ছেন কোন না কোন শিক্ষার্থী। কিন্তু এসব ঘটনার কোন প্রতিকার নেই। প্রশাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজে থেকে এসব সমস্যা দেখভাল করে না। নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ অভিযোগ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার বিচার হয় না। ফলে অপরাধীরা পেয়ে যাচ্ছে আশকারা। এক সময় সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কেবল অপরাধীরাই পাল্টায় তবে অপরাধ পাল্টায় না। বরং অপরাধীদের খাতায় যুক্ত হয় নতুন নতুন নাম।
এ বিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, ‘অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার সদিচ্ছা প্রশাসনের আছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়গুলো নেতাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান করা অনেকাংশেই সম্ভব হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে কাউকে একাডেমিকভাবে শাস্তি দিলেও রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে চাপ আসে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: