ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাহরাইনে অবৈধ বাংলাদেশীদের সাধারণ ক্ষমা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩০ জুন ২০১৫

বাহরাইনে অবৈধ বাংলাদেশীদের সাধারণ ক্ষমা

ফিরোজ মান্না ॥ বহু দেন দরবারের পর বাহরাইনে বাংলাদেশী অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে বাহরাইন লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ)। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধি দল দেশে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে কয়েক দফা দেশটি সফর করেছে। নানামুখী চেষ্টার পর সম্প্রতি দেশটির কর্তৃপক্ষ এমন ঘোষণা দেয়ায় সেখানে বসবাসকারী কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এতদিন তারা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করে আসছিলেন। এখন থেকে আর তাদের লুকিয়ে কাজ করতে হবে না বলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বাহরাইন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তারা বেশকিছু শর্ত দিয়েই কর্মী নেবে বলে বলা হয়েছে। সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হতে পারে। তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারেনি। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে থেকে কাজ করেছে। যার কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েছিল। দরিদ্র মানুষও প্রতারণার শিকার হবে না। এলএমআরএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুল্লা আল আবছি সম্প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাটি আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ঘোষণা কার্যকর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে না পারলে তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রিনিউ না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেন। জানা গেছে, কর্মীরা বৈধ হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য তারা যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে যদি কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে দেশেও ফিরতে পারবেন। বাহরাইন ইমিগ্রেশন তাদের কোন বাধা দেবে না। যদি সাধারণ ক্ষমার সময় পার করে কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যে সব কর্মী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারা আবার সাধারণ ক্ষমা বলবত থাকা অবস্থায় আবার বাহরাইনে যেতে পারবেন। এমন একটি সুযোগও দেয়া হয়েছে। অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার জন্য এলএমআরএর একটি কল সেন্টার খুলবে। ওই কল সেন্টারের একটি নম্বর থাকবে। বাহরাইন কর্তৃপক্ষ কল সেন্টারের নম্বর ১৭৫০৬০৫৫ ঘোষণা করেছে। এ নম্বরে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন কর্মীরা। এখানে দালাল প্রতারক চক্রের খপ্পরে পা না দেয়ার জন্য কর্মীদের সতর্ক করেও দেয়া হয়েছে। এদিকে কয়েক দফা সফর করা বাহরাইনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা বাহরাইনের লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির প্রধান নির্বাহী ওসামা বিন আব্দুল্লাহ আল আবছি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। কর্মী নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয় এ বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। সম্প্রতি তিনি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে যারা অবৈধ কোন জরিমানা অথবা আইনী জটিলতা ছাড়াই তাদের সংশোধনের জন্য আমরা এ সুযোগ দিচ্ছি। এই সেবা পেতে কর্মীদের কোন জরিমানা বা অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না। সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিয়োগকর্তা বা কোন দালাল যাতে কর্মীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিতে না পারেন সে বিষয়ে কড়া নজর রাখা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের এই শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়েছিল। এ কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে তারা এখন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর বাহরাইন কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে। ভবিষ্যতে দেশটিতে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আশা প্রকাশ করেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় চার বছরের চেষ্টার ফলে বাহরাইনে অবৈধ কর্মী বৈধ হতে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল একাধিকবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছে। এরপরই দেশটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি দেশের জন্য একটি ভাল খবর।
×