ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে

ফুলের মতো দেখতে সুস্বাদু ফল ড্রাগন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ জুলাই ২০১৫

ফুলের মতো দেখতে সুস্বাদু ফল ড্রাগন

মোরসালিন মিজান ॥ ভয়ঙ্কর জন্তুর নামে নাম। ড্রাগন ফল। তবে গায়ের রং এত সুন্দর যে, চোখ আটকে যায়। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। প্রথম দেখায় ফুল মনে হয়। আদতে ফল। স্বাদ? এক কথায় দারুণ। এ কারণে বিশ্বের বহু দেশে ড্রাগন খুব প্রিয় ফল। বাংলাদেশে ফলের অভাব নেই। এর পরও দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে ভিনদেশী ড্রাগন। এখন বিভিন্ন বাসার ছাদে, নার্সারিতে সারা বছরই দেখা যায় গাছটি। দিন যত যাচ্ছে, পরিচিতি পাচ্ছে দেশীয় ফল হিসেবে। বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে। সহজেই অনুমান করা যায়, ড্রাগনের মস্তকের মতো হওয়ায় ফলটির নাম হয়েছে ড্রাগন। পিতায়য়া নামেও বেশ পরিচিত। এর বাইরেও নাম আছে। যেমন- চীনে ফলটিকে বলা হয় ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট ও ড্রাগন পার্ল ফ্রুট। ভিয়েতনামে পরিচিত সুইট ড্রাগন নামে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় বলা হয় ড্রাগন ফ্রুট। একই ফল থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল নামে পরিচিত। মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ড্রাগন ফল প্রথম দেখা যায়। বর্তমানে পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে প্রচুর চাষ হয়। ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিস্তিন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়ায়ও আছে ড্রাগন ফল। ওকিনাওয়া, হাওয়াই, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ চীনেও প্রচুর হয়। ড্রাগন ক্যাক্টাস প্রজাতির গাছ। লতানো গাছটি মোটা রশির মতো এলোমেলোভাবে বেড়ে ওঠে। শরীরজুড়ে থাকে কাঁটা। ড্রাগন গাছ নিজ থেকে দাঁড়াতে পারে না। খুঁটিতে ভর দিয়ে উপরের দিকে বাড়ে। তবে বাঁচে বহু বছর। শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ হতেই সময় নেয় পাঁচ থেকে ছয় বছর। তখন ফলও ধরে প্রচুর। জানা যায়, ড্রাগন ফল গত পাঁচ/সাত বছর আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, প্রথমে ফলটি নিয়ে এদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ হয়েছে। পরে কৌতূহলী মানুষ এর চাষ শুরু করেন। ব্যাপক হারে না হলেও, বর্তমানে দেশের অনেক স্থানে এর চাষ হচ্ছে। শহরের ছাদে, বাড়ান্দায় খুব দেখা যায়। টবের পাশাপাশি বিভিন্ন জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবকটিতেই আছে ড্রাগনের কলম। চারা সারাবছর লাগানো যায়। তবে ভাল সময় বর্ষা। যতœ নেয়া গেলে নতুন গাছ থেকে এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। ভরা বর্ষাতেই এর ফুল ফুটে। ধীরে ধীরে তা ফলে পরিণত হয়। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমলেই বিপদ। এদিকে তাই খেয়াল রাখতে হয়। একই কারণে রোদে খুব ভাল থাকে ড্রাগন ফল। পাকার পর ড্রাগন ফলের মাঝখানে ছুরি দিয়ে কেটে দুই ফালি করা হয়। এর ভেতরটি মাংসল। চামচ দিয়ে নরম আঠালো অংশটি তুলে নিয়ে খেতে হয়। সুস্বাদু ড্রাগন ফল রুটির মতো ভেজে খাওয়া যায়। এ থেকে দারুণ আচারও হয়। পুষ্টিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান ড্রাগন ফলে পাওয়া যায়। লাল ত্বকবিশিষ্ট ড্রাগন ফল থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম, আইরন, ফসফরাসও থাকে ড্রাগনে। এ ফল কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ড্রাগনের আছে নানা ঔষধি গুণ। সব মিলিয়ে দেশে ড্রাগন চাষ দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
×