ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূসক প্রদানে উৎসাহ দিতে লটারি হবে

নতুন ভ্যাট আইনে ২০ সুবিধা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২ জুলাই ২০১৫

নতুন ভ্যাট আইনে ২০ সুবিধা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছর থেকে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হবে ভ্যাট বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর)। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন কার্যকর হবে। নতুন আইন বাস্তবায়ন, সেবা প্রদান ও মূসক আদায় হবে অনলাইনে। ফলে, সনাতনী মূসক আইনে হয়রানির অভিযোগবিহীন করদাতারা পাবেন নতুন ২০টি সুবিধা। এই সুবিধাগুলো হলো- মূল্য ঘোষণার ঝামেলা নেই। বিদ্যমান আইনে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পণ্যের মূল্য ঘোষণা, যা বর্তমান আইনে থাকছে না। ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা যে মূল্যে বিক্রি করবেন, সে মূল্যেই মূসক পরিশোধ করবেন। এ মূল্যের মধ্যেই মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন আইনে চলতি হিসাব রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে না। চলতি হিসাবের জটিলতা নেই। ফলে ব্যবসায়ীদের অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে না। রেয়াত গ্রহণ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ করা হয়েছে। নতুন আইনে উপকরণ কর রেয়াতের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে। রেয়াত পাওয়া যাবে আগের তুলনায় অনেক বেশি। আমদানিতে বিল অব এন্ট্রি, সরবরাহ ক্ষেত্রে চালানপত্র, উৎসে কর কর্তনের ক্ষেত্রে সমন্বিত চালানপত্র এবং উৎসে কর সংক্রান্ত সনদ দাখিল করলে রেয়াত পাওয়া যাবে। রিটার্ন দাখিলে মূসক অফিসে যেতে হবে না। যে কোন সময় অনলাইনে দাখিল করা যাবে। দাখিল করা রিটার্নে ভুল থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। নতুন আইনে ব্যাংকে না গিয়ে অনলাইনে মূসক পরিশোধের ব্যবস্থা থাকছে। ট্রেজারি চালান ছাড়াও ব্যাংক ও অনলাইনের মাধ্যমে মূসক প্রদান করা যাবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিস্তিতে মূসক পরিশোধ করার সুযোগ থাকছে। মূসক পরিশোধের পেমেন্ট কপি করদাতা ও বিভাগীয় দফতর সংরক্ষণ করবে। রিফান্ড পদ্ধতি অনলাইনে করা হয়েছে। অনলাইনে রিফান্ড পাওয়া যাবে। রিফান্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে ৬ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। যদি কোন কারণে ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশনারের কাছে আবেদন করলে তা ৩ মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। টাকা সরাসরি করদাতার এ্যাকাউন্টে চলে যাবে। মূসক আইনে আপিল আবেদন অত্যন্ত জটিল। নতুন আইনে অনলাইনের মাধ্যমে আপিল আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। যে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে, সে আদেশের বিস্তারিত অনলাইনে পাবেন। অনলাইনে আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি অনলাইনে জানতে পারবেন। কমিশনারেট ও বিভাগীয় অফিসে ‘ট্যাক্স পেয়ার সার্ভিস সেন্টার’ থাকবে। সেখানে ছোট ছোট গ্রুপ করে কমিশনাররা করদাতাদের অভিযোগ শুনে সমাধান দেবেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে উন্মুক্ত সভা, সেমিনার করা হবে। সেখানে সমস্যা শোনা ও তার সমাধান দেয়া হবে। মূসক নিবন্ধনে মূসক অফিসে যেতে হবে না। ঘরে বা অফিসে অনলাইনের মাধ্যমে মূসক নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করা যাবে। ব্যবসায়ীদের মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারানোর ভয় থাকবে না। সব কাগজপত্র, তথ্য অনলাইনে করদাতার মূসক এ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকবে। রিটার্ন অনলাইনে দাখিলে ভ্যাট কমিশনারেট অফিস বা বিভাগীয় অফিসে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে তা দাখিল করতে পারবেন। মূসক দিতে যে কোন জটিলতায় থাকবে কন্ট্যাক্ট সেন্টার। সেখান থেকে মূসক সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান পাওয়া যাবে ২৪ ঘণ্টা। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান মূসক প্রদান করে থাকে। তাদের জন্য থাকবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস। নতুন আইনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকা বা তার কম টার্নওভার সম্পন্ন হলে মূসক দিতে হবে না। ৩০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৮০ লাখ টাকার কম বার্ষিক টার্নওভারসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর প্রদান করলেই হবে। অনাবাসিক ব্যক্তি (দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তি) এজেন্টের মাধ্যমে মূসক প্রদান করতে পারবেন অথবা অনলাইনে মূসক পরিশোধ করতে পারবেন। সম্পূরক শুল্কের পরিধি কমিয়ে অনেক সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদানের ফলে ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠান সমান ব্যবসার সুযোগ পাবে। টার্নওভার সুবিধাপ্রাপ্ত ইউনিটগুলো সরাসরি আমদানি-রফতানি করতে পারবে। নতুন আইনের আওতায় মূসক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার ভিত্তিক হওয়ায় তা পরিপালন সহজতর হবে।
×