ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২ জুলাই ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৪তম দিবস। দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে প্রায় অর্ধমাস। মাহে রমজান বিশ্ব মুসলিমের জন্য একটি রহমতের সামিয়ানা। এখানে শুধু শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে পরিশুদ্ধ চিন্তা হবে না। মুসলিম মানেই একটি জাতি। এ জাতি অনেক কাক্সিক্ষত। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে এ মুসলিম নামকরণ করে আখেরী জামানায় এর উদ্ভব করেছিলেন সাইয়্যেদেনা নবী ইবরাহীম (আ.)। কুরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় মুসলমানদের মুসলমানের জন্য এবং মুসলমানদের অন্যান্য মানুষের জন্যও পবিত্র ও নিরাপদ ছায়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নবীজী বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলামানরা নিরাপদ থাকবে।’ বুখারী শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : আল মু’মিনু মান আমিনাহুন্নাস- অর্থাৎ, সত্যিকারের মু’মিন সে যার কাছে যে কোন মানুষ নিরাপদ বোধ করবে...।’ তাই মাহে রমজানে আমরা একে অপরের হক অধিকার ও প্রয়োজন অনুভব করব এবং সে অনুভবের তাড়না সৃষ্টির জন্যই দিনভর উপোস সাধনা। আর দিনের অবসানে সম্মিলিতভাবে ইফতার গ্রহণের তাগিদ। রাসুলুল্লাহ (সঃ) আরও ইরশাদ করেন, এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই, সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং তাকে শত্রুর নিকট সমর্পণ করবে না। যে মুসলিম অপর ভাইয়ের বিপদ দূর করার চেষ্টা করে আল্লাহ তায়ালা তার বিপদ দূর করে দেন, যে মুসলিম অপর কোন মুসলিম ভাইয়ের একটি কষ্ট দূর করে দেন, আল্লাহ পাক তার কিয়ামতের কষ্টসমূহের একটি কষ্ট দূর করে দেন, আর যদি কোন মুসলিম অপর মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখে আল্লাহ পাক কিয়ামতে তার পাপ ঢেকে রাখবেন।’ - (বুখারী, মুসলিম)। হুজুরে কারীম (সঃ) বলেন, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, কোন ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা অপর ভাইয়ের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত পছন্দ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে পূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না।’- (বুখারী, মুসলিম)। তিনি আরও বলেছেন, দুনিয়ার সকল মুসলমান মিলে একজন মানুষের মতো, যদি তার চক্ষু যন্ত্রণাগ্রস্ত হয়, তবে তার সর্বশরীর যন্ত্রণাপ্রাপ্ত হয়, এরূপ যদি তার মাথা আক্রান্ত হয়, তবে সর্বশরীর যন্ত্রণায় অধীর হয়। (মুসলিম শরীফ)। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দু’জন অংশীদারের একজন অপর জনের খেয়ানত না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের সঙ্গে মিলিত থাকি, আর যখন একে অন্যের খেয়ানত করে তখন আমি তাদের মধ্য হতে সরে যাই।’ - (আবু দাউদ)। নবীজী ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের ক্ষতি করে কিম্বা ধোকা দেয় সে অভিশপ্ত।’ - (তিরমিজী)। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি কারও স্ত্রী বা গোলামকে তাড়িয়ে দেয় সে আমাদের নয়।’ -(বুখারী)। হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি নিজের অন্তরের কাঠিন্য সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট অভিযোগ করলে আঁ-হযরত (সঃ) বলেন, ¯েœহভরে এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং ফকিরদের খাদ্য দান কর।’ -(আহমদ)। নবীজী বলেন, শহীদ ব্যক্তির সকল পাপই মাফ হবে কিন্তু ঋণ মাফ হবে না।’ -(মুসলিম)। যে ব্যক্তি তার দেনাদারকে কিছুটা সময় দেয় তার আমলনামায় প্রত্যেক দিন একটি করে ছদকাহ লিখিত হয়। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি পিতা-পুত্র ও ভাইয়ে বিচ্ছদ ঘটায়, হুজুর (সঃ) তাকে লা’নাত করেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এক মু’মিনের প্রতি অপর মু’মিনের ছয়টি হক রয়েছে ১. রোগাক্রান্ত হলে তার দেখাশুনা করবে ২. মৃত্যুপ্রাপ্ত হলে তাহার জানাজায় উপস্থিত হবে ৩. দাওয়াত করলে কবুল করবে ৪. দেখা সাক্ষাত হলে সালাম করবে ৫. কারও হাঁচি শুনলে ইয়ার হামুকাল্লাহ বা আল্লাহ তোমাকে দয়া করুন বলে দোয়া করবে ৬. সামনে পশ্চাতে সর্বাবস্থায় তার কল্যাণ কামনা করবে।’ (নাসাঈ শরীফ)। আসুন পবিত্র মাহে রমজানে উপরোক্ত হাদীসগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করি, একটি সুন্দর অহিংস সমাজ গড়ার জন্য সর্বোপরি দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণে আমল করি।
×