ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা

একুশ শতকের চাহিদা পূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও এগিয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২ জুলাই ২০১৫

একুশ শতকের চাহিদা পূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও এগিয়ে যাবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অহঙ্কার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ তাঁর নিজস্ব ঐহিত্য ও গৌরবে বিশ্বের যেকোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনন্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ভূ-খ-ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিজয় অর্জনে সহায়তা করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বুকের রক্ত ঝরেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রাণ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যতটুকু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। ২১ শতকের চাহিদা পূরণে এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এমন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। দিনভর বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘উচ্চশিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন।’ দিবসটি পালন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলসমূহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চলে ‘দুর্লভ পা-ুলিপি প্রদর্শনী।’ প্রায় একই সময়ে শুরু হয়ে বিকেল তিনটা পর্যন্ত কার্জন হলো ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় চলে বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বা গবেষণা প্রদর্শনী। সকাল ১১টায় চারুকলা অনুষদে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিল্পকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় নাটম-ল মিলনায়তনে রহমত আলী নির্দেশিত নাটক ‘স্বদেশী নক্শা’ প্রদর্শিত হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী। এর আগে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যানার ও পতাকাসহ শোভাযাত্রা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে এসে সমবেত হয়। উদ্বোধনী পর্ব শেষে মলচত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিভিন্ন স্থান ঘুরে শোভাযাত্রাটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মূলভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক গওহর রিজভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের পাশাপাশি গ্লোবাল সোসাইটিতেও নিজেদের অবস্থান করে নিতে হবে। এই গ্লোবাল সোসাইটিতে জায়গা করে নিতে হলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে এর শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল সিটিজেন প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যেন তারা প্রতিযোগিতা করতে পারে, তাদের যেন সে মনোবল থাকে। তিনি আরও বলেন, অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কবিতা, গান-বাজনা, রাজনীতিসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই অসাধারণ অবদান ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। মুক্তিযুদ্ধেও এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের অসাধারণ অবদান ছিল। সমাজ ও জাতি গঠন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মুক্ত চিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রেখে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষাই আলো, সেই আলোতেই, শুধু দেশ নয়, বিশ্বে সব অন্ধকারকে আলোকিত হবে। আমরা এই শিক্ষার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই উন্নয়ন টেকসই হোক। আর উন্নয়ন টেকসই হওয়ার জন্য দরকার মানসম্মত শিক্ষা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রাণ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যতটুকু অর্জিত হয়েছে, তার পিছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। ২১ শতকের চাহিদা পূরণে এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। টিএসসির আলোচনা সভায় ‘উচ্চশিক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষা সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম খান। এতে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের দিকে আরও নজর দিতে হবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ‘চেঞ্জ ম্যানেজার’ এর ভূমিকা পালনের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভার্চুয়াল এডুকেশন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আখতার হুসাইন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দীন। বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনিস্টিটিউটের পরিচালক, হলের প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
×