ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২ জুলাই ২০১৫

বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে পাশাপাশি এলাকাভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণের জন্য ৬ মাসের মধ্যে একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় দেন। ২০১৩ সালের মে মাসে এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হলেও দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুধবার এই রায় দেয়া হলো। আদালত রায়ে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কমিটি গঠন করবেন। যার নেতৃত্বে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, আইন মন্ত্রণালয়ের মনোনীত একজন আইন বিশেষজ্ঞ, একজন অর্থনীতিবিদ, নগর ও গৃহায়ণ বিশেষজ্ঞ, বাড়ি ভাড়াবিষয়ক এনজিও’র একজন প্রতিনিধি, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি। এই কমিশন ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের মতামত শুনে, প্রয়োজনে গণশুনানির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি দেশের ভাড়াটিয়া ও মালিকদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের সুপারিশ করবে। রায়ের পর রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, মামলাটি চলমান থাকবে। যেকোন প্রতিকারের জন্য আবেদনকারীরা আবার আদালতের কাছে প্রতিকার চাইতে পারবেন। এই রায়ে আমি খুবই খুশি হয়েছি। বাড়িভাড়া নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মানুষ যে অপেক্ষা করছিল সেই পথ খুলে গেল। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিরোধ শতকরা আশি ভাগ কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, আদালত এক পর্যবেক্ষণে বলেছে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন। ওই কর্তৃপক্ষের অধীনে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রসিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিস দেয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটি পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। এই কমিশন সুপারিশ দেয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সাপেক্ষে ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোর সব ওয়ার্ডে হাউস রেন্ট কন্ট্রোলার (বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক) নিয়োগ করতে হবে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করার দাবিতে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এই রিট দায়ের করে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে সরকার বিদ্যমান বাড়িভাড়া আইন সংশোধনেরও উদ্যোগ নেবে বলে আমরা মনে করি। সরকার গঠিত কমিশন যেসব সুপারিশ করবে, তা আইনি কাঠামোর রূপ না পাওয়া পর্যন্ত ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন করে নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক ও উপ নিয়ন্ত্রক নিয়োগের উদ্যোগ নিতে বলেছেন উচ্চ আদালত। রায়ে আরও বলা হয়েছে, গঠনের পর এ কমিশন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এলাকাভেদে মতামত, যুক্তি ও গণশুনানি করে ভাড়া নির্ধারণ করবেন। এছাড়াও মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কি কি কারণে বিরোধ হয় সে বিষয়টি বের করবেন। এ কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ উত্থাপন করবেন। এরপর সরকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করবে। আইন যুগোপযোগী না হওয়া পর্যন্ত সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সাপেক্ষে ওয়ার্ডভিত্তিক একজন রেন্টাল কন্ট্রোলার নিয়োগ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ বা মালিকদের সঙ্গে ভাড়াটিয়াদের কোন বিরোধ দেখা দিলে ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর আদালতে এই রিট আবেদন হওয়ার আগে ২০০৫ সালে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২০০৬ সালে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাড়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি ভাড়া। হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রিট আবেদনে বলা হয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রসিদ, বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেয়াসহ বিভিন্ন বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেক বাড়িওয়ালা আইন ভেঙে ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ান, যখন-তখন বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেন। তারা ভাড়াটেদের বাড়ি ভাড়ার রসিদ দেন না। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে ২০১০ সালের ১৭ মে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের এর জবাব দিতে বলা হয়। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি ২০১৩ সালের মে মাসে শেষ হলেও দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই রায় দেয়া হলো।
×