ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে বললেন দক্ষিণ আফ্রিকার টি২ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস

‘বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে’

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২ জুলাই ২০১৫

‘বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এখন বাংলাদেশ এমন দলই হয়ে গেছে যে, প্রতিপক্ষ আতঙ্কে থাকে। ভয় পায়, অস্বস্তিতে থাকে, কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। শুধুই কি তাই, সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবনায় থাকতে হয়। বাংলাদেশকে নিয়ে পুরোদস্তুর হোমওয়ার্ক করেই মাঠে নামতে হয়। তা না হলে হারার ভয় যে থাকে। রবিবার প্রথম টি২০ দিয়ে দুই টি২০, তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও তাই করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ ক্রিকেট দল। বুধবার অনুশীলন করা শুরু করে দেয়। দুপুরে অনুশীলন করতে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস-ই সেই হোমওয়ার্কের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, জিম্বাবুয়েকে ৫-০ তে হারানোর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা; এরপর পাকিস্তানকেও ‘বাংলাওয়াশ’ করে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারানো বাংলাদেশকে নিয়ে কতটা ভীত প্রোটিয়ারা! এ দেশে খেলতে আসার আগে তাই বাংলাদেশকে নিয়ে বেশ সতর্ক দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের খেলার ওপর গভীর দৃষ্টি রেখেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি খেলা এবং উত্থানের প্রতিটি পর্ব তারা গভীর পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এ কারণেই বুধবার মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস অকপটে স্বীকার করে নিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব। একই সঙ্গে এটাও বললেন, ‘বিশ্বকাপ থেকেই তারা ভাল খেলে আসছে। আমার বিশ্বাস, অচিরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে একটি বড় দল হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশকে এখন আর ছোট দল বলার সুযোগ নেই। তারা ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। উন্নতির এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হতে তাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।’ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিরিজগুলো দেখে তারা নিজেরাও বিস্মিত। মাশরাফিদের নিয়ে রীতিমতো গবেষণায় বসে যেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। প্রোটিয়া অধিনায়ক নিজেই বললেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। ভারতকে হারিয়েছে। বিমানে ওঠার আগে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে আমাদের।’ ভারতের বিপক্ষে চার পেসার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। বিষয়টা দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ভাবাচ্ছে। তবে এটাও জানে, বাংলাদেশ স্পিনশক্তি নিয়েই খেলবে। উপমহাদেশে স্পিন দুর্বলতা যে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। প্লেসিসই যেমন মনে করছেন, বাংলাদেশ আগের সিরিজে চার পেসার নিয়ে খেললেও তাদের বিপক্ষে স্পিন এ্যাটাকেই দল সাজাবে। কারণ, উপমহাদেশের কন্ডিশনে তাদের জন্য স্পিন বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। যদিও আইপিএলে খেলার কারণে বেশ কয়েকজন প্রোটিয়া ক্রিকেটারের এখানকার কন্ডিশন নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বেশ ভাল। টি২০ অধিনায়ক বলেন, ‘সেই অভিজ্ঞতা টি২০-তে সহযোগিতা করবে। অন্য কোন ফরম্যাটে নয়।’ অভিষেক সিরিজেই তাক লাগিয়ে দেয়া বাংলাদেশের তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ভাবনা থাকারই কথা। কিন্তু প্লেসিস মুস্তাফিজকে নিয়ে ভাবনার কথা জানালেন না! তাদের ভাবনায়, গবেষণায় যে পুরো বাংলাদেশ ঢুকে গেছে। যে কেউ যে বাংলাদেশকে জেতাতে পারে, ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই তো প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এই দলটিতে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিভা আছে। আসলে আমরা নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে নয়, পুরো দলটা নিয়েই কাজ করছি। কারণ, এই দলের যে কোন একজনই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।’ বাংলাদেশে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা কী? জবাবে প্লেসিস বলেন, ‘এখানকার কন্ডিশনই হচ্ছে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই কন্ডিশনের সঙ্গেই আমরা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’ প্লেসিস যেমন বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছেন, ঠিক তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মাথায়ও বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যথা আছে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের চার বছর পর আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রায় ৭ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টি২০ খেলতে যাচ্ছে। ডমিঙ্গো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সফরে আমাদের নতুন খেলোয়াড়দের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগও বটে। এই সিরিজ থেকেই নিজেদের পরিণত করে তোলার সুযোগ পাবে তারা।’ বিশ্বকাপে হট ফেভারিট হয়েও নিউজিল্যান্ডের কাছে চোক করেই হারতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। একেবারে নিশ্চিত ম্যাচ জয় থেকে বঞ্চিত হলো তারা। এ ব্যাপারে রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। সেটা অর্জন হয়নি। তবে এরপর বিশাল একটি ফাঁকা সময় পেয়েছি। এই সময়ে আমাদের রিফ্রেশমেন্টের ভাল ব্যবস্থাও হয়েছে। আশা করছি, নতুনভাবে শুরু করব এবং বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো ছিল, সেগুলোও শুধরে উঠতে পারব আমরা।’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১টায় প্রথম টি২০ ও ৭ জুলাই দ্বিতীয় টি২০ অনুষ্ঠিত হবে। একই স্টেডিয়ামে ১০ জুলাই দুপুর ১২টায় প্রথম ওয়ানডে, ১২ জুলাই দ্বিতীয় ওয়ানডে হবে। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে হবে ১৫ জুলাই দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ২১ জুলাই চট্টগ্রামে প্রথম ও ৩০ জুলাই মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এ সিরিজের জন্য নিজের দলটা কেমন? এ প্রসঙ্গে প্রোটিয়া কোচ বলেন, ‘এই দলটি নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দারুণ একটি দল। দলে ফিরেছেন ওয়েন পার্নেলের মতো পুরাতনরা। ক্রিস মরিসের মতো নতুনরা সুযোগ কাজে লাগাতে উন্মুখ হয়ে আছেন। আশা করি, ভাল হবে এই দলটা। মোট কথা, আমরা সিরিজটা উপভোগ করতে চাই।’ সঙ্গে বাংলাদেশ যে বিপজ্জনক দল তাও বুঝিয়ে দিলেন। ডমিঙ্গো বললেন, ‘বাংলাদেশের দর্শক, আবহাওয়া, উইকেটের ধরন আর বাংলাদেশের বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় সফরটা কঠিন হতে যাচ্ছে। সবকিছুই পক্ষে আসবে তা আশা করাটা ঠিক হবে না। বাংলাদেশ তাদের মনোভাব বদলে ফেলেছে, তারা এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলে। মনে হচ্ছে, তাদের এখন নিজেদের ওপর বিশ্বাস আছে। নতুন বিশ্বাস আর নতুন কিছু স্কিলের সমন্বয় ঘটিয়ে তারা অনেক বেশি কার্যকর ও অনেক বেশি বিপজ্জনক দলে পরিণত হয়েছে।’
×