ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্বহীন ২২ মাদ্রাসাকেও উপবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত

চরফ্যাশনে শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২ জুলাই ২০১৫

চরফ্যাশনে শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, চরফ্যাশন, ১ জুলাই ॥ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহাম্মদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সভাপতি আ. রহিম ও সাধারণ সম্পাদক আ. হাই ও কুচিয়ামোরা-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তাহির হোসেনসহ ১০ শিক্ষক অভিযোগ করেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহাম্মদ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে অস্তিত্বহীন ২২টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসাসহ ৪৫টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা উপবৃত্তি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করেন। নতুন জাতীয়করণকৃত ১৯২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত জানুয়ারি-মার্চ/১৪ তিন মাসের উপবৃত্তি কর্তন করে ৩৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার উপবৃত্তি বাড়ান। ওই মাদ্রাসার প্রধানদের সঙ্গে শর্ত থাকে অতিরিক্ত উপবৃত্তির অর্ধেক তার। এভাবে তিনি আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া অস্তিত্বহীন ১৭ মাদ্রাসার ছয় মাসের ভুয়া উপবৃত্তি বিল পাস করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। উপবৃত্তির মধ্যবর্তী সুবিধাভোগী নির্বাচনের সময় ২১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুলপ্রতি ২শ’ টাকা করে এবং ইবেতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো থেকে ৬৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষক জাতীয় করণে স্কুল প্রতি ১৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পর্যায়ে প্রস্তাবিত জাতীয় করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। শিক্ষক বদলিতে নিয়ম না মেনে তিনি মনগড়া শিক্ষক বদলি করেন এবং বদলিকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। চলতি অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতে ৮৪ হাজার ৪০০টাকা করে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ পায়। বরাদ্দ প্রাপ্ত বিদ্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। ক্ষুব্ধ মেরামত ও নিট বেজের তালিকা প্রেরণের আগেই যেখানে মেরামতের প্রয়োজন নেই সেখান থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে তালিকা প্রেরণ করেন এমন ৩০টি স্কুল থেকে ঘুষ নিয়েছেন। নতুন ভবনের তালিকা প্রেরণে স্কুল প্রধানের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ২০১৫ অর্থবছরের ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৮৯ স্কুলের স্লিপের ভাউচার গ্রহণকালে স্কুলপ্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় নিম্নমানের খাতা সরবরাহ করে তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকা বাণিজ্য করেন এবং পরীক্ষার সময়ে যাতায়াতের ৭৬ হাজার টাকা, নাস্তার ৩৬ হাজার টাকা খরচ না করে আত্মসাত করেন। প্রাথমিক স্কুলের ১ম, ২য় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন উপজেলায় তৈরি ও মডারেশন করার নিয়ম থাকলেও শিক্ষা অফিসার বরিশাল থেকে নিম্নমানের ভুলে ভরা প্রশ্ন ওজনে কিনে এনে এখানে পরীক্ষা নেন। এতে প্রতি পরীক্ষায় তিনি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করেন। দ্বীপ শিখা নামের সাজেশন গাইড শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতামূলক বিক্রি করেন। ওই সিলেবাসের মূল্য ২০ টাকা হলেও তিনি বিক্রি করেন ৫০ টাকা করে। স্কুলের পিয়ন নিয়োগপত্র দেয়ার সময় জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই বিতরণে তিনি স্কুলপ্রতি ৫০ টাকা হারে ঘুষ নেন। এছাড়া যে স্থানে দুই থেকে তিনটি প্রাথমিক স্কুল ভবন রয়েছে সেখান থেকে একটি ভবন প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে কমিটির মাধ্যমে রেজুলেশন করে ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের সুবিধা গ্রহণ করে ভেঙ্গে ফেলেন এভাবে প্রায় ৩৫টি স্কুলভবন ভেঙ্গে ফেলেছেন। এদিকে এবতেদায়ী মাদ্রাসার উপবৃত্তি প্রকল্পের ১২টি মাদ্রাসার পরিদর্শন করে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইরতিজা আহম্মদ চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই জানান, শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা শিক্ষা মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহম্মদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগগুলো দায়ের করেছে। এর কোন সত্যতা নাই। ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার খলিলুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে। প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগের প্রমাণ পেলে যথযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×