ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসক সেজে প্রতারণা

অষ্টম শ্রেণী পাস মেডিক্যাল সার্জন!

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২ জুলাই ২০১৫

অষ্টম শ্রেণী পাস মেডিক্যাল সার্জন!

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ কোনোমতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেই এলাকায় রাতারাতি মেডিক্যাল সার্জন (চিকিৎসক) হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত কথিত ওই ডাক্তারের প্রতারণা ফাঁস হয়ে গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার সব তথ্য ফাঁসের পর এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কথিত ডাক্তারের নাম ঝন্টু মিঞা সন্টু। তবে কাগজে কলমে নিজেকে ডা. এনামুল হক হিসেবে ব্যবহার করে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সদরের শালঘরিয়া রোডে অবস্থিত বেসরকারী জননী ক্লিনিকে তার চেম্বার। এখানেই সে ডাঃ এনামুল হক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছিল। তবে তার কোন সার্টিফিকেট নেই। অথচ সবাই তাকে ‘ভাল ডাক্তার’ হিসেবে চেনে। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত জননী ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটির যাবতীয় মালামাল জব্দ করে। এ সময় ক্লিনিকের ছাদ টপকে পালিয়ে যায় ভুয়া চিকিৎসক সন্টু মিঞা। তবে পালিয়েও রক্ষা পায়নি। ভুয়া পরিচয় দিয়ে চিকিৎসক সেজে রোগীর অপারেশন করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল আকতার সন্টু মিঞার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে প্রসিকিউশন দাখিল করেন। এরপরই প্রকাশ পায় সন্টু মিঞার আসল পরিচয়। জানা গেছে, দুর্গাপুর সদরের শালঘরিয়া রোডে অবস্থিত অনুমোদনহীন জননী ক্লিনিকে রোগীর অপারেশন করা হচ্ছিল। এছাড়া ক্লিনিকটিতে রাতের বেলা অসামাজিক কাজ চলে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। বিষয়টি তদন্তে নামে গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসে ক্লিনিকটির সকল কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়। এরপর গত ২৭ মে সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সোবাহান ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল আকতার জননী ক্লিনিকে অভিযান চালান। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ক্লিনিকের যাবতীয় মালামাল জব্দ করে সেগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জমা রাখেন। এছাড়া ডা. এনামুল হকের নাম ব্যবহার করে রোগীর অপারেশন করার বিষয়ে ক্লিনিকটির কাগজপত্র ঘেটে আদালত জানতে পারে পলাতক ভুয়া চিকিৎসক ঝন্টু মিঞা ওরফে সন্টু মিঞা আসলে এসএসসি পাশও নয়। এরপর সে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করে আদালত। জানা গেছে, ঝন্টু মিঞা ওরফে সন্টু মিঞার বাড়ি পাবনা জেলায়। এর আগে সেখানকার একটি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে রোগীর স্বজনরা তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। এরপর সে পালিয়ে দুর্গাপুরের জননী ক্লিনিকে আশ্রয় নেয়। চলতে থাকে তার পুরনো পেশা। এখানে সে ডাঃ এনামুল হকের নাম ও সীল-প্যাড ব্যবহার করে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে এতদিন। বর্তমানে সে আত্মগোপনে রয়েছে। দুর্গাপুর থানার ওসি পরিমল কুমার বিশ্বাস জানান, তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পর পুলিশ তাকে খুঁজছে।
×