ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিঁথিরও জায়গা হলো জেলে

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৩ জুলাই ২০১৫

সিঁথিরও জায়গা হলো জেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার দায়ে বেসরকারী একটি টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত রকিবুল ইসলাম মুকুলের পরকীয়া প্রেমিকা মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথিরও জায়গা হয়েছে কারাগারে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মুকুলের পরকীয়া প্রেমিকা সিঁথি। সিঁথির পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সিঁথি আদালতে আত্মসর্মপণ করেন। সিঁথির আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান আদালতের কাছে দাবি করেন, আসামি মুকুলের সঙ্গে সিঁথির কোনই সম্পর্ক নেই। তার স্বামী রাজিউল আমিনের সঙ্গেই তিনি বসবাস করছেন। মুকুলের নির্যাতনে প্ররোচনা দেয়ার সঙ্গেও সিঁথির কোন সম্পৃক্ততা নেই। সিঁথির জামিনের বিরোধিতা করেন এ্যাডভোকেট কাজী নজীবউল্লাহ হিরু, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, এ্যাডভোকেট মবিনুল ইসলাম ও সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি এবং এ্যাডভোকেট রিপন। আসামি মুকুল ও সিঁথির কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি আদালতকে দিয়ে এ্যাডভোকেট হিরু বলেন, সিঁথি তার স্বামীর ঘর-সংসার করলে অন্যের স্বামীর সঙ্গে এমন অন্তরঙ্গ ছবি আসে কিভাবে। মুকুলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই মুকুল তার স্ত্রী নাজনীন আখতারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করত। এ সময় সিঁথির আইনজীবী এসব ছবি কম্পিউটারে তৈরি করা বলে দাবি করেন। সিঁথির আইনজীবীকে ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে বলেন, মামলায় আত্মসমর্পণ করলে তার জামিন হতে পারে, জেলও হতে পারে, এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে সিঁথির স্বামী আদালতে নেই কেন? তিনি কোথায়? তার স্বামীকে নিয়ে আসেন। তিনি এসে সিঁথিকে জিম্মায় নিলেই জামিন হতে পারে। এরপর সিঁথির স্বামী ঢাকা ব্যাংকের মতিঝিলের আদমজী কোর্ট শাখায় কর্মরত সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রাজিউল আমিনকে আদালতে হাজির করে আসামিপক্ষ। কিন্তু রাজিউল আমিন আদালতে এলেও সিঁথিকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অসম্মতি জানান। এ অবস্থায় আদালত সিঁথির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরও আগে রাজিউল আমিন ও সিঁথিকে বেশ কয়েকবার নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমঝোতা করার সুযোগ দেন তাদের আইনজীবীরা। প্রতিবারই রাজিউল আমিন স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন। এ সময় সিঁথি পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গত ২৫ জুন দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নাজনীন তার স্বামী মুকুল ও মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস ওরফে সিঁথির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর শোকে তিনি পাঁচতলা থেকে পড়ে গুরতর আহত হন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। বাসায় ফেরার পর চিকিৎসকের পরামর্শে স্বামী-স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তান নেন। স্ত্রী নাজনীন আখতার দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার সুযোগে মুকুল সিঁথির সঙ্গে পরকীয়া প্রেম থেকে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে কথা বললে স্বামী মুকুল বিভিন্ন সময়ে নাজনীনকে মারধর করে। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও নাজনীনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত মুকুল। একবার মুকুলের নির্যাতনে গুরুতর আহত নাজনীনকে সহকর্মীদের উদ্ধার করে হাসাপাতালে পাঠাতে হয়। এর কিছুদিন পরই দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকেই সব ধরনের খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেয় মুকুল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মুকুল স্ত্রীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুক হিসেবে নিয়েছে। সিঁথির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েই সাংবাদিক স্ত্রী নাজনীন আখতার তন্বীর ওপর নির্যাতন করত রকিবুল ইসলাম মুকুল। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রী মামলা ঠুকে দিলে মুকুলকে গত ২৬ জুন রাতে গ্রেফতার করে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ গত ২৮ জুন মুকুলকে আদালতে সোপর্দ করেন। আদালত মুকুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। মুকুল বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী।
×