ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কমলাপুর স্টেডিয়ামে টার্ফ স্থাপন পরিদর্শনে ফিফা প্রতিনিধি

‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সময় লাগবে ৬০ দিন’

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩ জুলাই ২০১৫

‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সময় লাগবে ৬০ দিন’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘হ্যালো, আই এ্যাম মার্কাস কেলার। কেলার, নট কিলার!’ টার্ফ স্থাপন সংক্রান্ত পরিদর্শনকালে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এভাবেই রসিকতার ছলে পরিচিত হন ফিফা প্রতিনিধি সুইজারল্যান্ডের নাগরিক মার্কোস কেলার। একদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দর থেকে নেমে সোনারগাঁও হোটেলে ওঠেন। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়েই সোজা চলে যান ঢাকার কমলাপুরে অবস্থিত শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। ততক্ষণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগও পৌঁছে গেছেন স্টেডিয়ামে। তারা ঘুরে ঘুরে কড়া রোদের মধ্যেই পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণ ও নিজেদের মধ্যে আলাপ করলেন। যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন, ততক্ষণে তাদের চেহারায় রক্তিম ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কি এবং কেমন দেখলেন কেলার? ফিফার কাছে তার ইতিবাচক রিপোর্ট জমা দেয়ার ওপরই নির্ভর করছে এই টার্ফ এবং মাঠের ভবিষ্যত। তবে উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করার মতোই কথা শোনালেন কেলার, ‘ইতোমধ্যেই মাঠ জুড়ে পাথর বিছানোর কাছ শেষ। মাঠের লেভেল ঠিক আছে। অন্য সবকিছুও ঠিক আছে। খুচরো কিছু কাজ সম্পন্ন করার পর পাঁচ থেকে দশ দিন পর টার্ফ বসানোর কাজ শুরু করা যেতে পারে।’ তবে রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিলেন কেলার, ‘যেমন আমি নিজের চোখেই দেখলাম এখানে মাঠের মধ্যে কুকুর-বিড়ালের অবাধ বিচরণ, যা টার্ফ স্থাপনের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকারক। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ এই টার্ফ স্থাপনের দায়িত্ব পালন করছে ভারতীয় কোম্পানি গ্রেট স্পোর্টস ইনফ্রা প্রাইভেট লিমিটেড। ইনফ্রার টেকনিক্যাল ম্যানেজার পিটার ভ্যান বলেন, ‘বৃষ্টি না হলে বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে টার্ফ স্থাপন করাও বাফুফেকে মাঠ বুঝিয়ে দিতে ৬০ দিন লাগবে।’ সেক্ষেত্রে আশা করা যায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ মাঠের টার্ফে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। অনেক দীর্ঘসূত্রতা আর জটিলতার পর ক’দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুরে অবস্থিত শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে পৌঁছে ফিফার কাছ থেকে অনুদানে পাওয়া বহুল আলোচিত আর্টিফিসিয়াল টার্ফ। তবে নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টার্ফ খালাস করতে না পারায় বাফুফেকে জরিমানা গোনতে হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। কিছুদিন আগে কমলাপুর স্টেডিয়ামের জন্য একটি সিনথেটিক টার্ফ চেয়ে ফিফার কাছে আবেদন করেছিল বাফুফে। গত বছর ফিফা তা অনুমোদন করে। উল্লেখ্য, টার্ফটির আয়তন ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬৮ মিটার প্রস্থ, যা ফিফার বেঁধে দেয়া পরিমাপ। কমলাপুরে টার্ফ স্থাপিত হলে এটি কোন মানের টার্ফÑ এটা নিরূপণ করতে ফিফার একটি বিশেষ পরিদর্শক দল আসবে, তারা যাচাই করে রায় দেবে, এটা টপ কোয়ালিটি টার্ফ কি না। ফিফার কাছ থেকে আরও দুটি টার্ফ বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অসহযোগিতামূলক আচরণের ব্যাহত হচ্ছে এর কার্যক্রম। ফিফা গোল প্রজেক্ট-৪ এর আওতায় ২০১৪ সালের নবেম্বরে কমলাপুরের এই স্টেডিয়ামে শুরু হয় টার্ফ বসানোর কাজ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে দুই কন্টেনার টার্ফ। ফেব্রুয়ারিতে কমলাপুর ডিপোতে এসে পৌঁছায় টার্ফের সাত কন্টেনার। এই টার্ফের বর্তমান বাজারমূল্য ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। তবে রাজস্ব বিষয়ে জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে টার্ফ খালাস করতে ব্যর্থ হয় দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফে। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে রাজস্ব ছাড়াই গত ২৭ মে টার্ফ খালাসের ছাড়পত্র দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় মওকুফ হয় পোর্ট চার্জ। ফলে কমলাপুর ডিপো থেকে চার ও চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা দুই কন্টেনার টার্ফ খালাস হলেও নির্ধারিত সময় পার হওয়ায় বাফুফেকে জরিমানা গোনতে হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ। নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করতে পারলে বাফুফেকে আরও দুটো টার্ফ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফিফা। সিলেটে অবস্থিত বাফুফে একাডেমি মাঠে বাফুফে টার্ফ বসানোর উদ্যোগ নিলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিষয়টি এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে। উল্লেখ্য, কমলাপুর স্টেডিয়ামটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতায়। তাই টার্ফ বসানোর জন্য এনএসসির কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য এ স্টেডিয়ামটি লিজ নিতে হয়েছে বাফুফেকে। এ নিয়ে বাফুফে ও এনএসসির মধ্যে একটি চুক্তিও হয় কিছুদিন আগে। চুক্তিপত্র ফিফার কাছে পাঠানোর পরই তারা তা দেখে বাফুফেকে টার্ফ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সাধারণত, ফেডারেশনের নিজস্ব মালিকানার মাঠ না হলে ফিফা টার্ফ দেয় না। ফিফা গোল প্রজেক্ট ৪ এর অধীনে এ টার্ফ পায় বাফুফে। এটি হবে দেশের ফুটবলে দ্বিতীয় সিনথেটিক টার্ফ। প্রথমটি বসানো হয়েছিল বাফুফে ভবন সংলগ্ন আরামবাগ বালুর মাঠে। তবে এনএসসি বাফুফেকে মাঠটি প্রথমে ২০ বছরের জন্য দিতে রাজি হয়নি। অনুমোদন করে ১০ বছরের জন্য। কিন্তু ফিফা এতে বাধ সাধলে ও বাফুফের চাপ ও যুক্তির কাছে হার মানে এনএসসি। কমলাপুর স্টেডিয়ামে মাঠের পুরো অংশে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ বসাতে ফিফার ব্যয় হবে প্রায় ৭ লাখ ডলার। উল্লেখ্য, গোল প্রজেক্ট-১-এর আওতায় ২০০০ সালে মতিঝিলে বাফুফে ভবন নির্মাণ হয়। গোল প্রজেক্ট-২-এ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যয়ে বাফুফে ভবনসংলগ্ন মাঠে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ স্থাপন করে দেয় ফিফা। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে কতটা ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে ফিফা থেকে পাওয়া কমলাপুরে এই কৃত্রিম ঘাসের মাঠ।
×