ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতারণার ফাঁদে এই চক্রটি হাতিয়ে নেয় মোটা টাকা

অশ্লীল ছবি তুলে চাঁদা আদায়কারী ছয়জন আটক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৪ জুলাই ২০১৫

অশ্লীল ছবি তুলে চাঁদা আদায়কারী ছয়জন আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথমে মোবাইল ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে। পরে ফোনেই প্রেমিকা সেজে ঘনিষ্ঠতা গড়ে। ঘনিষ্ঠতা যখন শয্যা পর্যন্ত গড়ায়- তখন তা কৌশলে ভিডিও করা হয়। আর জিম্মিদশাটা তখনই ঘটে। তখন ওরা যা দাবি করে তাই দিতে হয়। যার যে রকম সঙ্গতি-তার কাছ থেকে সে হারেই টাকা আদায়। মান সম্মান বাঁচাতে সবাই টাকা দিয়েই সাময়িক রেহাই পায়। কিন্তু প্রতারণার এ কৌশলটা যখন স্থায়ী রূপ নেয়Ñ তখন ভিকটিম বাধ্য হয়েই আশ্রয় নেয় আইনের। এ রকমই এ ঘটনার সূত্র ধরে র‌্যাব সন্ধান পায় দুর্ধর্ষ এক প্রতারক চক্রের। এ চক্রে ছিল ভুয়া ডিবিসহ অনেক কিসিমের প্রতারক। যারা মেয়েদের অশ্লীল কাজে ব্যবহারের সময় আপত্তিকর মেলা মেশার চিত্র ধারণ করে হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। শুক্রবার র‌্যাব আনুষ্ঠানিক এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানায়, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নির্যাতন ও অশ্লীল ছবি তুলে চাঁদা আদায়কারী চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-১। আটককৃতরা হলেন-মোঃ খায়রুল আলম ওরফে রবিউল (৪২), মোঃ পান্নু মিয়া (৩৫), মোঃ সাইফুল ইসলাম নিলয় (২৫), খাইরুল ইসলাম মনির (৩২), শামীমা আক্তার তৃষ্ণা (২৭) ও উম্মে তাসনিন ইভা (১৯)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর দক্ষিণখাঁন ও উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দু’টি হ্যান্ডকাপ, ৩টি পুলিশের আইডি কার্ড, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ব্যবহƒত ১টি ক্যামেরা, ভিকটিমের ৪টি আপত্তিকর ছবি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ২২ হাজার ৪৫০ টাকা, ৯টি মোবাইল ফোন ও ১টি লাঠিসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার কাজী মোঃ সোয়াইব জানান, আটককৃতরা দীর্ঘদিন যাবত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণের পর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আপত্তিকর ছবি তুলে চাঁদা আদায় করে আসছিল। এরই ধারাবাহিতকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে চক্রটি ফায়দাবাদ মজিবর মার্কেট শারমিন টেলিকমের সামনে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করার সময় রাত সাড়ে ১১টায় খায়রুল ওরফে রবিউল ও তার সহযোগী মোঃ পান্নুকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বর সেক্টরের উত্তরা গার্লস হাইস্কুলের সামনে থেকে মোঃ সাইফুল ইসলাম নিলয়, শামীমা আক্তার তৃষ্ণা ও উম্মে তাসনিন ইভাকে আটক করা হয়। লে. কমান্ডার সোয়াইব আরও জানান, আটককৃতরা স্বীকার করেছেনÑ রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় এ চক্রের নারী সদস্যরা বিভিন্ন অফিস, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট ও খাবার দোকানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করত। পরে ছলনার মাধ্যমে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান করে এবং মোবাইলে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক কিছুটা গভীর হলে এক পর্যায়ে পূর্ব নির্ধারিত ফ্ল্যাটে ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যায় এবং তার সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। এমন সময় ওই চক্রের পুুরুষ সদস্যরা আকস্মিক ওই ঘরে প্রবেশ করে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে প্রেমিককে মারধর করে। তারপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে ওই নারীর নগ্ন ছবি তুলে তার আত্মীয়স্বজন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ভয় দেখিয়ে নিয়মিতভাবে চাঁদা আদায় করতে থাকে। কখনও ওই একই নারী ব্যবহার করে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে দেহ ব্যবসা গড়ে তোলে। আবার কখনও এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পণ্যের সেলস এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের নম্বর সংগ্রহ করে ওই চক্রের নারী সদস্যদের মাধ্যমে ওই লোকগুলোর সঙ্গে ফোনে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক গড়ার পর একইভাবে তাদের বাসায় নিয়ে জিম্মি করে প্রতারণার মাধ্যমে সর্বস্ব লুট করা হয়। আটক শামীমা আক্তার তৃষ্ণাকে পান্নু মিয়া চাকরির কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং খায়রুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করায়। সাইফুল ইসলাম ও উম্মে তাসনিন ইভা তারা স্বামী-স্ত্রী। এক সময় এমএলএম ব্যবসা করলেও পরে তারা অর্থের লোভে এই অপরাধ চক্রে যুক্ত হয়।
×