ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হুকুমদাতার দায়

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৫ জুলাই ২০১৫

হুকুমদাতার দায়

সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা দেশবাসী ভুলবে কী করে! কী ভীষণ অস্থির নৈরাজ্যকর বিপজ্জনক দিন গেছে জাতির জীবনে। দলীয় কর্মীদের কাছে ‘দেশনেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চলে টানা তিন মাস। গোটা দেশ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের জনপদ। নাশকতায় প্রাণ হারান ১৫৩ জন, দগ্ধ হন ৩শ’ জনেরও বেশি। মোট ১ হাজার ৯৭০টি যানবাহনে আগুন দেয়া ও ভাংচুর করা হয়। মোট ১৬ দফায় ৮০টি স্থানে রেলে নাশকতা হয়েছে। ৬ দফা নৌযানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণে। বিপন্ন হয়ে ওঠে ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু মামলার চার্জশীট বা অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার অন্তত চারটি ঘটনায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। সমধর্মী মামলায় বৃহস্পতিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জামিন শুনানিতে সুপ্রীমকোর্ট মন্তব্য করেÑ হরতাল-অবরোধের সময় যে নাশকতা হয় তার দায় আহ্বানকারীদের নিতে হবে। নেতৃত্বদানকারীরা কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবে। দেশবাসীর স্বাভাবিক প্রত্যাশা- শাস্তিযোগ্য ওই লাগাতার অপরাধের মূল হুকুমদাতার যথাযোগ্য প্রাপ্য কালক্ষেপণ না করে দ্রুত মিটিয়ে দেয়া হবে। আমরা আগেও বলেছি, সমাজের সুস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য যা যা দরকার তার সব উপাদানই বিদ্যমান সন্ত্রাসের শিকড় ও ডালপালায়। সন্ত্রাস এক বিকট বিপুল রাক্ষস, তার রয়েছে হাজারও বাহু, শত শত মস্তক। সন্ত্রাসের সূচনামুখ তাহলে কোথায়? নিঃসন্দেহে তা অবিবেচক স্বার্থান্ধ সত্তায় এবং অপরাজনীতিতে। সন্ত্রাস অনেকটা বিষাক্ত সাপের মতোই। যে-সাপ সমাজদেহে দংশন করলে তার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে সর্বশরীরে। হরতাল ও অবরোধের ভেতর সন্ত্রাসীরা ভয়হীন সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আক্রান্ত ও আহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা, সুস্থচিন্তা, শুভবোধ। হরতাল-অবরোধ ছাড়া অন্য সময়ে সন্ত্রাস হয় না, এ কথা বলা যায় না। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মধ্যে সন্ত্রাস চালানোর যেন লাইসেন্স পেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার শুনানিতে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, যেহেতু আপনারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তার ফলে এই গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, মানুষ মরেছে, সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়েছে। অতএব এর দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, যত দ্রুত পেট্রোলবোমাবাজদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেয়ার কাজটি সম্পন্ন হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। এক্ষেত্রে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই চায় দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ।
×