ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তথ্যপ্রমাণ নিয়ে উত্তর কোরীয় বিজ্ঞানী স্বপক্ষ ত্যাগ করে ফিনল্যান্ডে

মানুষের ওপর জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে পিয়ংইয়ং

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৫ জুলাই ২০১৫

মানুষের ওপর জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে পিয়ংইয়ং

পিয়ংইয়ং সরকারের জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচীতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, উত্তর কোরিয়ার এমন একজন বিজ্ঞানী স্বপক্ষ ত্যাগ করে ফিনল্যান্ডে চলে গেছেন এবং স্পষ্টত তিনি মানবদেহের ওপর চালানো পরীক্ষা-নিরীক্ষার তথ্য প্রমাণ সঙ্গে নিয়ে গেছেন। ওই গবেষক যাকে শুধু তার পদবি লি নামে শনাক্ত করা হয়েছে, তিনি চীনের সীমান্তবর্তী গ্যাংগির একটি জীবাণুবিজ্ঞান কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। গত ৬ জুন তিনি স্বপক্ষ ত্যাগ করেন বলে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাফ বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়। খবর টেলিগ্রাফের। উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার নিয়ে প্রচার চালানো একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে লি (৪৭), লি তাঁর গবেষণাকাজে ‘সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠায়’ ফিলিপিন্স হয়ে ফিনল্যান্ড চলে গেছেন। লি তাঁর সঙ্গে একটি ইলেকট্রনিক তথ্যভা-ারসম্বলিত যন্ত্র নিয়ে গেছেন, যার মধ্যে মানবদেহকে উত্তর কোরিয়ার জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষায় ব্যবহারের ১৫ গিগাবাইট তথ্য রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই মানবাধিকার গোষ্ঠী বলেছে, তিনি এ মাসের শেষের দিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উত্তর কোরিয়ার সেদেশের জনগণের ওপর নির্মম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরার পরিকল্পনা করছেন। উত্তর কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরকে অস্ত্র পরীক্ষায় ব্যবহার করছে, গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ইম চিয়ন-ইয়ং ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি নাগাদ স্বপক্ষ ত্যাগ না করা পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার বিশেষ বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তাদের জানান, চূড়ান্ত পর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষায় ব্যবহার করা ছিল তাঁর প্রশিক্ষণের অংশ। ২০১৪ তে প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এই একাডেমি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে বেরুতে চান, তবে আপনাকে জানতে হবে আপনার নিজস্ব বাহিনীর কথা প্রকাশ না করে কি করে শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে হয়, কি করে গুপ্তহত্যা চালাতে হয়, কি করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি। “এর পরপরই তারা যাকে ‘ফিল্ডলার্নিং’ বলে সেটা আমরা পাব।” ‘জীবাণু এবং রাসায়নিক যুদ্ধের পরীক্ষার জন্য আমাদের ‘বস্তুর’ প্রয়োজন ছিল।’ ‘প্রথমে তারা ইঁদুরের ওপর রাসায়নিক এজেন্ট ব্যবহার করত এবং আমাদের দেখাত কি করে তাদের মৃত্যু হয়। তারপর আমরা প্রত্যক্ষ করতাম প্রশিক্ষণদাতারা মানুষের ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছে, কি করে তারা মারা যায় সেটা দেখাতে। সেসব আমি নিজের চোখে দেখেছি।’ ইম বলেন, সামরিক বাহিনীর পরিচালনাকারী অন্তত তিনটি স্থাপনায় পরীক্ষা চালানো হয়। এর মধ্যে একটি চালানো হয় হিয়াংহারি শহরের কাছে একটি রাজনৈতিক বন্দীশিবিরের পাশাপাশি। উত্তর কোরিয়া সরকার জীবাণু অস্ত্র এ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়াম দিয়ে ঘন ঘন পরীক্ষা মিশ্রণে তৈরি করে থাকে। এর পাশাপাশি তারা ৪০টি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা বিভাগ পিয়ংইয়ংকে সতর্ক করে বলেছে, তারা তাদের জীবাণু ও রাসায়নিক যুদ্ধের মহড়া জোরদার করেছে। পূর্ববর্তী বছরে তারা অন্তত ১২টি বড় আকারের মহড়া চালিয়েছে।
×