ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগও স্বচ্ছ সমালোচনার বিষয় হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৫ জুলাই ২০১৫

বিচার বিভাগও স্বচ্ছ সমালোচনার বিষয় হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, একটা দেশের জন্য আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সব সিদ্ধান্ত আইনের শাসনে হতে হবে। তিনি বলেন, উপলক্ষ চাইলে অন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিচার বিভাগও স্বচ্ছ সমালোচনার বিষয় হতে পারে। কিন্তু সমালোচনা যদি অবৈধ ও দায়িত্বহীন হয়, তাহলে সেটা বিচার বিভাগের বিশাল ক্ষতি হবে। কিছু ত্রুটি সত্ত্বেও বিচার বিভাগকে এখনও মানুষ সম্মানের জায়গায় রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটালাইজেশন অব বাংলাদেশ জুডিশিয়ারী’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রীমকোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ আয়োজনের এই ওয়ার্কশপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস। কর্মশালায় সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। এই কর্মশালায় প্রধান বিচারপতি ‘ই-জুডিশিয়ারি’র জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এগুলো হলো- ৬৪ জেলা আদালতে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই সংযোগ, মামলার অনলাইন তথ্য, ওয়েব/এসএমএস ভিত্তিক কার্য তালিকা, জেলা আদালতগুলোর সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য নথিভুক্তকরণ, ইলেকট্রনিক কেস ফাইলিং সিস্টেম, জেলা আদালতের মামলা ব্যবস্থাপনা, সব আদালতের ডিজিটাল ডিসপ্লে, রায় আর্কাইভ, রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন, ই-লাইব্রেরি, এ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার, জেলা আদালতের তথ্যকেন্দ্র, বায়ো মেট্রিক এ্যাটেন্ডেন্স সিস্টেম, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেনিং। প্রধান বিচারপতি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি চালু করলেই আমাদের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে না। তথ্য প্রযুক্তি চালু করার পূর্বে কিছু মৌলিক ও কাঠামোগত পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিচার বিভাগের নানা পদক্ষেপে সরকারের সহযোগিতার কথা জানান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ন্যায় বিচার পেতে জনগণকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ নিয়ে প্রধান বিচারপতিও কথা বলেছেন। বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে তথ্য প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। পুরো বিভাগকে ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনসও বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে বিচার বিভাগের জন্য একটি সমন্বিত আইসিটি নীতিমালা করা দরকার বলে জানান সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। কর্মশালায় সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকদের পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাও অংশ নেন। আপীল বিভাগের বিচারকদের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মোঃ ইমান আলী, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের মধ্যে মির্জা হোসেইন হায়দার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নিজামুল হক, বর্তমান চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর উপস্থিত ছিলেন। মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ প্রয়োজন ॥ অর্থমন্ত্রী ॥ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায় পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বিবর্তনের ইতিহাস উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে আসেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, মাসদার হোসেন মামলার কিছু রিভিউ হওয়া দরকার। যাতে সমাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য পায়। মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেন। ওই রায়ে আপীল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করে। একই সঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন সর্বোচ্চ আদালত। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ওই রায় অনুসারে এখনও বিচার বিভাগীয় সচিবালয় হয়নি। আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শে এখন সাচিবিক কাজ কর্ম করে। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের আমলে পুরাতন সড়ক ভবনে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর কাজ আর আগায়নি। তবে সর্বশেষ বাজেটে ৩ বছরের অগ্রাধিকারে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যেই অর্থমন্ত্রী এই কথা বলেন।
×