ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত টোল আদায়

সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৫ জুলাই ২০১৫

সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা ॥ ঈদ সামনে রেখে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রী হয়রানি। কুলিদের দৌরাত্ম্য আর অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। কুলি ও ইজারাদারের লোকজনের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন অনেকে। এসব নিয়ে কালেভদ্রে কেউ ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও কোন লাভ হচ্ছে না। এছাড়াও মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়েছে আশঙ্কজনকভাবে। ফলে এই পথে নৌযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। যাত্রী হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে যাত্রীরা হয়রানির অভিযোগ নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন। অভিযোগ পেলে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেন। শনিবার দুপুর ১২টায় সদরঘাট টার্মিনালে কথা হয় বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল বাশারের সঙ্গে। গন্তব্য চাঁদপুরের মলতব। পরিবার থাকে গ্রামের বাড়িতে। স্ত্রীর আবদারে এবার তিনি একটি ফ্রিজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষুব্ধকণ্ঠে তিনি জানান, ফ্রিজ নিয়ে ১ নং পন্টুনের ২ নম্বর ঘাট দিয়ে ঢোকার সময় তাকে সেখানে আটকে দেয় ঘাটের লোকজন। ফ্রিজের টোল বাবদ তার কাছে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। অথচ টার্মিনালে টানানো চার্টে ফ্রিজের টোল লেখা রয়েছে ৫০ টাকা। দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে টার্মিনালে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রায় ১ ঘণ্টা পর ৩০০ টাকায় রফাদফা করে তিনি ফ্রিজ নিয়ে ঢুকতে পারেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে মলম পাটির খপ্পরে পড়ে টাকা পয়সা ও মোবাইল খুইয়েছেন রবিশালগামী যাত্রী রাসেল তালুকদার। বুধবার ভোরে টার্মিনালের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন কয়েক যাত্রী। যাত্রীদের অভিযোগ, পহেলা জুলাই থেকে হঠাৎ করেই সদরঘাট টার্মিনালে কমার্শিয়াল মালামালের টোল আদায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এছাড়াও যাত্রীদের ব্যক্তিগত মালামাল বহনের ক্ষেত্রে কোন টোল আদায়ের নিয়ম না থাকলেও ইজারাদারের লোকজন টোল আদায় করে থাকে। অন্যথায় নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ ইজারাদারের অস্বাভাবিক দর। এবার সাড়ে ৮ কোটি টাকায় সদরঘাট টার্মিনালের ইজারা (ডাক) নেয়া হয়েছে। পূর্বের ডাক ছিল সাড়ে ৪ কোটি টাকার। হঠাৎ করে ইজারার এমন অস্বাভাবিক ‘মূল্য’ বৃদ্ধির কারণে ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছেন। এছাড়াও ইজারাদারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছেন মলম পার্টি ও ছিনতাকারীদের। এ ব্যাপারে সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে ইজারাদার আলমগীর হোসেনকে পাওয়া যায়নি। আলমগীর হোসেনের ঘনিষ্ঠ ও ঘাট পরিচালনাকারী মোহর চাঁন বলেন, নির্বাচনে জিততে টাকা খরচ করতে হয়। লাভ-ক্ষতি বড় বিষয় নয়। সদরঘাট টার্মিনালের টোল আদায়ের ইজারার নিলামে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ কোটি টাকা অফার করে আমরা ঘাট পেয়েছি। সরদঘাট অনেক জায়গা। আমরা শুধু টোল আদায় করি। মলম পার্টি, ছিনতাইকারী দেখার দায়িত্বতো আমাদের না। অতিরিক্ত টোল আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, চার্ট অনুযায়ী টোল আদায় করা সম্ভব নয়। বাকিটা আপনারা বুঝে নেন। সরদঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুস সালাম বলেন, ঈদের সময় মলম পার্টি আর ছিনতাকারীদের উৎপাত কিছুটা বেড়ে যায়। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই আমরা টার্মিনাল থেকে বের করে দেই। অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে প্রায়ই কিছু ঝামেলা হয়। তিনি জানান, যাত্রীদের কেউই লিখিত অভিযোগ না করায় বা মামলা করতে না চাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, বেশিরভাগ অভিযোগ আসে অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে। আমরা যথাসাধ্য সমাধানের চেষ্টা করি। কিছু ক্ষেত্রে ইজারাদারের প্রভাবের কারণে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
×