ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইরান ও ছয় পরাশক্তির মধ্যে আলোচনা

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রশ্নে মতানৈক্য

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৬ জুলাই ২০১৫

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রশ্নে মতানৈক্য

ইরান ও বিশ্ব শক্তিগুলো শনিবার পরমাণু বিষয়ক ভিয়েনা আলোচনায় ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রশ্নে অগ্রগতি অর্জন করে, কিন্তু তারা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং উন্নত সেন্টিফিউজ উদ্ভাবনের মতো ইস্যুগুলোতে মতবিভক্ত রয়ে গেছে। খবর ইয়াহু নিউজের। আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনীতিকরা বলেন, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইতোপূর্বে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার পদ্ধতি নিয়ে প্রাথমিক মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু ছয় শক্তি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাব নিয়ে এখনও একমত হতে পারেনি। এ প্রস্তাবে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতের কোন চুক্তি পালনে ইরানের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপের কোন উপায় প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হচ্ছে। আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, আমরা এখনও নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাব উদ্ভাবন করতে পারিনি। আমরা এখনও ইরানের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছতে পারিনি। সিনিয়র ইরানী ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা ওই মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেন। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রশ্নসহ কয়েকটি কঠিন ইস্যু সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জন্য রেখে দেয়া হবে। তাঁরা রবিবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পৌঁছবেন বলে কথা আছে। কর্মকর্তারা এ কথা জানান। ইরান তার পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে এক চুক্তিতে পৌঁছতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিনিময়ে ইরান অন্তত এক দশকের জন্য তার পরমাণু কর্মসূচী সীমিত করতে পারে। আলোচকরা এ বিষয়ে কোন চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছতে ৩০ জুনের সময়সীমার মধ্যে সফল হতে পারেননি। তবে তাঁরা সেই সময়সীমা ৭ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। ইরান আলোচনা ভেঙ্গে পড়ার পরিণতি নিয়ে এক সতর্কবাণী জারি করে। দেশটির পরমাণু বিষয়ক মুখপাত্র বাহরুজ কামালভান্দি বলেন, অপর পক্ষ ইরানের ওপর সব ধরনের চাপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। যদি তারা আবারও এরূপ চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে তাহলে এর জবাবে ইরান এমন পদক্ষেপ নেবে, যা তারা কল্পনাও করেনি। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এমনটিই বলেছিলেন। চুক্তি নাগালের মধ্যেই বলে সব পক্ষ উল্লেখ করছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচী পর্যবেক্ষণের ভবিষ্যত উপায় ছাড়াও অন্যান্য বিরোধপূর্ণ ইস্যু রয়ে গেছে। একটি হলো ইরানের অতীত পরমাণু গবেষণার সম্ভাব্য সামরিক দিকগুলো নিয়ে স্থগিত রাখা জাতিসংঘের অনুসন্ধান। এ গবেষণা পরমাণু অস্ত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সন্দেহ করা হয়। আরেকটি হলো উন্নত সেন্টিফিউজ নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন করার কাজ চালিয়ে যেতে ইরানের দাবি। সেন্টিফিউজ যন্ত্রের সাহায্যে বিদ্যুত প্ল্যান্ট বা পরমাণু অস্ত্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ইউরোনিয়াম বিশুদ্ধ করা হয়। পশ্চিমা ও ইরানী কর্মকর্তারা বলেন, একটি বড় ইস্যু নিয়ে কোন অপোসরফা হওয়ার আভাস দেখা যায়। সেই ইস্যুটি হলো ইরান ভবিষ্যতের কোন চুক্তি মেনে চলছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করতে দেশটির স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের সুযোগ। ইরানের নিম্নমাত্রায় সমৃদ্ধ করা ইউরোনিয়ামের বিষয়েও আপোসরফার সম্ভাবনা দেখা যায়। পশ্চিমা ও ইরানী কূটনীতিকরা বলেন, তেহরান সেই মজুদ ইউরোনিয়ামের বেশিরভাগ দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে। এ সম্ভাবনা ইরান ইতোপূর্বে উড়িয়ে দিয়েছিল। ইরানের অতীত পরমাণু গবেষণার সম্ভাব্য সামরিক দিক প্রসঙ্গে পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলেন, ইরান কোন পরমাণু ওয়ারহেড তৈরির লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়েছিল বলে প্রকাশ্যে স্বীকার করুক- এমনটি তাঁরা দাবি করছেন না। কিন্তু তাঁরা বলেন, ভবিষ্যত পর্যবেক্ষণের এক বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ইরানের অতীত কার্যক্রমের সম্পূর্ণ ব্যাপ্তি জানে বলে একে নিশ্চিত হতে হবে।
×