ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজেদের গড়া ফাঁদেই হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ জুলাই ২০১৫

নিজেদের গড়া ফাঁদেই হারল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনে দুর্বল। উপমহাদেশের উইকেটে তো খেলতেই পারে না প্রোটিয়ারা। তা জেনে, বুঝে স্পিন নির্ভর উইকেটে স্পিনার নির্ভর একাদশও মাঠে নামানো হলো। যদি ম্যাচ জেতা যায়। প্রোটিয়াদের জন্য ফাঁদ তৈরি করা হলো। এমনই অবস্থা হলো, সেই ফাঁদে নিজেরাই পড়ল এবং ৫২ রানে হারলও। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে স্পিনার আরাফাত সানি (২/১৯), সাকিব আল হাসান (১/২৪), নাসির হোসেন (১/৩৭) মিলে আঘাত হানেন। বাংলাদেশ ইনিংসে দুই স্পিনার জেপি ডুমিনি (২/১১) ও এ্যারন ফাঙ্গিসো (১/২১) মিলে ধস নামান। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথমটিতে হেরে এখন সিরিজেও ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। এখন মঙ্গলবার যে সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচটি আছে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে না পারলেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সঙ্গে গতবছর নবেম্বর থেকে দ্বিপক্ষীয় কোন নির্ধারিত ওভারের সিরিজে যে হারেনি বাংলাদেশ, সেই ধারাবাহিকতাতেও ছেদ পড়বে। গত বছর শেষদিকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ, এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ, একটি টি২০ ম্যাচ ও ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে জিতে বাংলাদেশই। এবার এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে হারের সামনে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা শনিবার আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘যদি টি২০ সিরিজ না হয়ে ওয়ানডে সিরিজ প্রথমে হতো তাহলে ভালই হতো।’ এর কারণ একটাই, বাংলাদেশ যে ওয়ানডেতে দারুণ ছন্দে আছে। সেই ছন্দে না আবার ছেদ পড়ে যায়। যদি দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ সিরিজ জিতে যায় তাহলে আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নিজেরা যে নিজেদের গড়া ফাঁদেই ধরা পড়েছে। শুরুতে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ভালই করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্পিনাররা। যেমনটি ভাবা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনে দুর্বল, তেমনটিই হয়েছে। আরাফাত সানি, সাকিব, নাসির হোসেন, সোহাগ গাজীর দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রানের বেশি করতে পারেনি। তাও ফাফ ডু প্লেসিস যদি অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস না খেলতেন, দলের হাল না ধরতেন; তাহলে আরও কম রান দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে জমা হতে পারত। ১৮ রানের মধ্যে থাকা প্লেসিসের ক্যাচটি যদি উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম ধরতে পারতেন, তাহলে ম্যাচটি বাংলাদেশও জিতে যেতে পারত। এরপরও যে রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জয়ের আশা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৮.৫ ওভারে ৯৬ রান করতেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন সাকিব। ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৪৫ উইকেটের মালিক হন সাকিব। ব্যাট হাতেও বাংলাদেশ ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরটা সাকিবেরই। দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী দল। এ দলের দুই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড মিলার বিশ্ব ক্রিকেট ধাপিয়ে বেড়ান। যেখানেই টি২০ লীগ হয়, সেখানেই এ ক্রিকেটারদের দেখা যায়। দাপটও দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ভিলিয়ার্স, মিলারের সেই দাপট উধাও হয়ে যায়। যে কোন দলের জন্যই মূর্তিমান আতঙ্ক এবি ডি ভিলিয়ার্স আর ডেভিড মিলার। ভিলিয়ার্স তো এখন ‘বিপজ্জনক’ ব্যাটসম্যানই হয়ে উঠেছেন। আর মিলারকে তো ‘কিলার’ই বলা হয়। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষদের ভেতর কী ভয় থাকে এ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে একজনও কিছুই করতে পারেননি। ভিলিয়ার্সকে ২ রানে, মিলারকে ১ রানেই সাজঘরে ফেরানো গেছে। আগেই জানা ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনে দুর্বল। উপমহাদেশে সেই দুর্বলতা তো বেশি। ভিলিয়ার্স ও মিলার বাংলাদেশের স্পিনেই আটকা পড়লেন। ভিলিয়ার্সকে ২ উইকেট নেয়া আরাফাত সানি ও মিলারকে সাকিব আল হাসান আউট করেন। সেখানেই দক্ষিণ আফ্রিকা আসলে পিছিয়ে পড়ে। অধিনায়ক প্লেসিস অপরাজিত ৭৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ঠিক, কিন্তু তাতেও দেড় শ’ রান করা যায়নি। আশা তখনই জেগে উঠে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেই আশা আর পূরণ হয়নি। শুরুতেই ১৩ রানে তামিম (৫), সৌম্য (৭) সাজঘরে ফিরতেই বাংলাদেশের যে দিন খারাপ হতে চলেছে বোঝা যায়। এরপর এক এক করে দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিক (১৭), সাব্বির (৪), নাসির (১), সাকিব (২৬) দলীয় ৭১ রানের মধ্যেই আউট হয়ে গেলে সেখানেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এরপর বাকি সময়টা শুধু যেন অপেক্ষা থাকে ব্যবধান কমানোর। কিন্তু খুব কমানো যায়নি। হার হয়েছে ৫২ রানের বড় ব্যবধানেই।
×