ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্পিন বিষে আতঙ্ক উধাও!

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ জুলাই ২০১৫

স্পিন বিষে আতঙ্ক উধাও!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ নাম তার হয়ে গেছে কিলার, মানে খুনী। তিনি যে মনোভাব নিয়ে ব্যাট করেন তাতে বিশ্বের যে কোন বোলার এবং যে কোন প্রতিপক্ষই আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক অতীব ভয়ঙ্কর ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি অবশ্য আরেক বিধ্বংসী স্বভাবের ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সের অনেক পরে এসেছেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে এ দুই ব্যাটসম্যান সিরিজ শুরুর আগেই আতঙ্কের প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন। রবিবার সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে এ দু’জনের দিকেই ছিল সবার আলাদা নজর। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন দু’জনই। ভিলিয়ার্স ৫৮ ম্যাচের টি২০ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে মাত্র ২ রানেই ফিরে গেছেন। আর ‘কিলার’ মিলার ফিরে গেছেন মাত্র ১ রানেই। আর এ দুই আতঙ্ক দ্রুত উধাও হয়েছে বাংলাদেশের ভয়ানক বোলিং বিভাগ স্পিনের বিষে! দলের চার স্পিনার আরাফাত সানি, সাকিব আল হাসান, সোহাগ গাজী ও নাসির হোসেনের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সুবাদে খুব বেশি বড়ও হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ। মিলারের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের টি২০ ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেটের মালিক হয়ে গেছেন সাকিব। ৩৭ ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে তিনি পেছনে ফেলেছেন আরেক স্পিনার আব্দুর রাজ্জাককে। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বাংলাদেশের স্পিন বিভাগটাই বড় প্রতিপক্ষ হবে সেটা আগেভাগেই ধারণা করছিলেন সবাই। কারণ উপমহাদেশের বাইরের কোন দল এ অঞ্চলে খেলতে আসলে এখানকার ধীরগতি ও নিচু প্রকৃতির উইকেটে ঘূর্ণি বলেই কুপোকাত হয়েছে বার বার। বাংলাদেশ সফরে এর আগে যে ক’বার এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল তারাও বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের মায়াবী ঘূর্ণির বিষাক্ত ছোবলে বেশ সমস্যায় পড়েছে। দেশের মাটিতে প্রোটিয়াদের ২১ উইকেট শিকার করেছে বাংলাদেশী বোলাররা। এর মধ্যে স্পিনাররাই নিয়েছেন ১৫ উইকেট। আর টেস্টে ৩৩ উইকেটের মধ্যে ১৭টিই দখলে আছে স্পিনারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাটিতে কোন টি২০ আগে খেলেনি বাংলাদেশ দল। তবে ওয়ানডে ও টেস্টে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনাররা সবসময়ই ভোগান্তি উপহার দিয়েছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। সে কারণেই প্রোটিয়াদের সমস্যায় ফেলতে বাংলাদেশ এবারও যে স্পিন নির্ভর দল গড়বে সেটা নিশ্চিতই ছিল। ম্যাচের দিনটাতেও সেটাই দেখা গেল। আগের সিরিজে ভারতের বিপক্ষে চার পেসারও একাদশে খেলিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। এবার সেটা থাকছে না তা আগেই নিশ্চিত ছিল। দু’জন স্বীকৃত স্পিনার সোহাগ গাজী ও আরাফাত সানি ছাড়াও সাকিব আল হাসান এবং নাসির হোসেন ছিলেন লাইনআপে। সেটা কাজেও লাগল। স্পিনাররা সফল হলেন। আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়ঙ্কর ব্যাটিং লাইনআপ যে চার উইকেট হারাল তার সবই দখল করলেন বাংলাদেশের তিন স্পিনার আরাফাত, নাসির ও সাকিব। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংকে চাপে রাখলেন কিন্তু এরাই। যার ফলে খুব আহামরি বড় কোন সংগ্রহ গড়তে পারল না প্রোটিয়ারা। ভয়টা ছিল ভিলিয়ার্সকে নিয়েই। কারণ তিনি একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দলের হয়ে ওপেনিং করেছেন। এর অর্থ বাংলাদেশের বোলারদের শুরু থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে! ভিলিয়ার্স নিজেও এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন তিনি একজন ওপেনার হতে চান। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমরা এবিকে একটু আগেভাগে আনতে চাচ্ছি এবং সেটাই আমাদের পরিকল্পনা। এটা হতে পারে ইনিংস উদ্বোধন কিংবা তিন নম্বরে। এখনও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা। কিন্তু তিনি যেটাতে অভ্যস্ত এটা অবশ্যই তারচেয়ে একটু উপরের দিকের দায়িত্ব হবে।’ অবশেষে প্রথম টি২০ ম্যাচেই ওপেনিংয়ে নামলেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৭ ইনিংস উদ্বোধন করে মাত্র ৩১.৬৬ গড়ে ১০৪৫ রান করেছেন। অথচ ক্যারিয়ার রান ১৮৭ ওয়ানডেতে ৫৩.৬৫ গড়ে ৭৯৪১! আবার ২০ টেস্টে ওপেনিংয়ে নেমে মাত্র ৩৬.১৪ গড়ে ১২৬৫ রান করেছেন। অথচ ৯৬ টেস্টে তার রান ৫২.০৯ গড়ে ৭৬০৬ রান করেছেন। অর্থাৎ ওপেনার হিসেবে তেমন ভাল কেউ না ভিলিয়ার্স! টি২০ ম্যাচে এর আগে মাত্র একবার ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ইনিংস উদ্বোধনে নেমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৬ রান করেছিলেন। এবার তাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে আরাফাতের ঘূর্ণি বলে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই আরাফাত আসেন। আর শেষ বলেই তিনি বধ করেন ভিলিয়ার্সকে। থাবা বের করার আগেই তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন লেন্থ বলে। মাত্র ২ রান করে ফিরে গেছেন ভিলিয়ার্স। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে নাসির শিকার করেন কুইন্টন ডি কককে। অভিজ্ঞ জেপি ডুমিনিকে দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন আরাফাত। দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি সোহাগ। দুই ওভার বোলিং করেছেন। কিন্তু সাকিব-নাসির দারুণ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন আরাফাতের পাশাপাশি। ভয়ঙ্কর মিলারও সে কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। সাকিবের ঝুলিয়ে দেয়া বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান বুঝতে না পেরে ‘কিলার’ মিলার। মাত্র ১ রান করেছেন তিনি। এ উইকেট শিকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেটের মালিক বনে গেছেন সাকিব। তার শিকার সংখ্যা ৩৭ ম্যাচে ৪৫। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাককে। রাজ্জাকের শিকার ৩৪ ম্যাচে ৪৪।
×