ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাওয়ার সেলের জরিপ

গ্রামে বিদ্যুত পেতে শতকরা ৪০ জনকেই ঘুষ দিতে হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ জুলাই ২০১৫

গ্রামে বিদ্যুত পেতে শতকরা ৪০ জনকেই ঘুষ দিতে হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রামের চেয়ে শহরে বিদ্যুত সংযোগ পাওয়া সহজ। গ্রামে প্রতি ১০০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৪০ জনকেই ঘুষ দিতে হয় বিদ্যুত পেতে। আর শহরে এই হার শতকরা ১৫ ভাগ। বিদ্যুত বিতরণকারী সংস্থার কাজের ওপর জরিপ করে সরকারের সংস্থা পাওয়ারসেলই এই কথা বলছে। যদিও তারা একটি বেসরকারী সংস্থাকে দিয়ে এই জরিপ করিয়েছে। ওই জরিপে বলা হচ্ছে, পল্লী বিদ্যুতে সেবা পেতে ৪০ শতাংশ গ্রাহককে ঘুষ দিতে হয়। গ্রামের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিক সকল গ্রাহককে এই বাড়তি অর্থ দিতে হচ্ছে। ডিপিডিসি ও ওজোপাডিকোতে অবৈধ লেনদেনের পরিমাণ কম। ডিপিডিসিতে সেবা পেতে শতকরা ১৫ ভাগ এবং ওজোপাডিকোতে ১০ ভাগ গ্রাহককে বাড়তি অর্থ দেয়া লাগে।পাওয়ার সেল বেসরকারী সংস্থা মাইডাসকে দিয়ে এই জরিপ করিয়েছে। গতবছর অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এই জপির করা হয়। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা বিদ্যুত বিতরণ কোম্পনি ও নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্রাহক সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে এই জরিপ করা হয়। রবিবার রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে বিজয় হলে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, পাওয়ার সেলের মহাসচিব মোহাম্মদ হোসাইন, ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল হাসান, আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনউদ্দিন ও ওজোপাডিকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। মাইডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ এস এম মাসহি-উর-রহমান প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতের কৃষি সেচযন্ত্রে বিদ্যুত সেবা পেতে ৫০ ভাগ গ্রাহককে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি দিতে হয়। শিল্প সংযোগ পেতে ৩৭ ভাগ, বাণিজ্যিক সংযোগের জন্য ৩৫ ভাগ এবং আবাসিকের ৩৯ ভাগ গ্রাহককে বাড়তি অর্থ দিতে হয়। ডিপিডিসির বাড়তি অর্থ বেশি দেয় শিল্প গ্রাহকদের। ১৭ ভাগ শিল্প গ্রাহক সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি শোধ করে। এছাড়া ১৫ ভাগ আবাসিক এবং ১৪ ভাগ বাণিজ্যিক গ্রাহক সেবা পেতে বাড়তি অর্থ দেয়। ওজোপাডিকোতে বেশি অবৈধ অর্থ দেয় বাণিজ্যিক গ্রাহকরা। ১২ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহক বাড়তি অর্থ দিয়ে সেবা নিয়ে থাকে। এছাড়া ৯ শতাংশ আবাসিক এবং ৪ শতাংশ শিল্প গ্রাহক বাড়তি বা অবৈধ অর্থ দেয়। বিদ্যুত সংযোগ পেতে মাত্র ৫ ভাগ গ্রাহক খুব সন্তুষ্ট। তবে কৃষি ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মধ্যে খুব সন্তুষ্ট একজনও নেই। পল্লী বিদ্যুতে সংযোগ পেতে ২৭ ভাগ গ্রাহক কোন রকমে খুশি। ৬৬ ভাগ খুশি এবং মাত্র এক ভাগ খুবই খুশি। ডিপিডিসিতে ৩ ভাগ মোটেই খুশি নয়। ৩১ ভাগ গ্রাহক কোনরকম সন্তুষ্ট। ৬৪ ভাগ গ্রাহক সন্তুষ্ট আর মাত্র এক ভাগ গ্রাহক খুবই সন্তুষ্ট। ওজোপাডিকোতে সংযোগ পেতে মাত্র ৫ ভাগ গ্রাহক খুব সন্তুষ্ট। ৮১ ভাগ শুধু সন্তুষ্ট। ১২ ভাগ কোনরকম খুশি। আর তিন ভাগ গ্রাহক মোটেই খুশি নয়। পল্লী বিদ্যুতে ৩২ ভাগ গ্রাহক জানিয়েছেন তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পান না। আর বাকি ৬৯ ভাগ পান। তবে কৃষি সেচযন্ত্র ব্যবহারকারী শতভাগ প্রয়োজনীয় বিদ্যুত পান বলে জানিয়েছেন। ডিপিডিসির ৮৭ ভাগ গ্রাহক জানিয়েছেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পান আর ১৩ ভাগ পান না। ওজোপাডিকোতে ৮৫ ভাগ পান ১৫ ভাগ পান না। উপদেষ্টা বলেন, এই জরিপ প্রমাণ করে সরকার স্বচ্ছ। এটাই জবাবদিহিতা। সরকার নিজের অর্থে এই জরিপ করিয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন সংস্থা এমন জরিপ করায়নি। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে সরকারই জানতে চেয়েছে সেবা কেমন দেয়া হচ্ছে। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার এটা বড় উদাহরণ। প্রতিবেদন দেখার পর বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সকল মানুষকে সন্তুষ্টির জায়গাতে নিয়ে যেতে হবে। ৪০ ভাগ মানুষ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। এটা যদি হয় তবে তা অনেক। এই প্রতিবেদনে খুশি হওয়ার উপায় নেই। তিনি বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বিদ্যুতের চুরি অনেক কমেছে। চুরি কমে যাওয়ার অর্থ হলো মানুষের অবস্থানের উন্নয়ন হয়েছে। গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুত বিতরণ, সংযোগ ও ব্যবহারে ১০০ ভাগ সফলতা চাই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহকদের সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে ‘ভাল’ অবস্থান থেকে ‘খুব ভাল’ অবস্থানে যেতে চাই। পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনউদ্দিন বলেন, পল্লী বিদ্যুত মাসে তিন লাখ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। কিছু স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। গ্রামের অবৈধ লেনদেন বিষয়ে আরইবি কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×